আজ ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচনী সমীকরণ শীত মৌসুমে ভোটের হাওয়া গরম


পারভেজ আহাসানঃ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট ভরা শীত মৌসুমে পড়লেও জনগণের মধ্যে উষ্ণতা ছড়াচ্ছে নির্বাচনী আমেজ। ভোট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে জনমনে। কেউ বলছেন, চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে ভোট হবে না, আবার কেউ বলছেন, নির্বাচন হলেও কেন্দ্রে ভোটার যাবে না। ভোটের সমীকরণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও চলছে তর্ক-বিতর্ক, নানা গুঞ্জন।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণা করার পর মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। উৎসবমুখর পরিবেশে ফরম সংগ্রহ ও জমা দিচ্ছেন এই রাজনৈতিক দলের নেতারা। ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা জানিয়েছে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টসহ কয়েকটি দল। তবে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও তফসিল বর্জন করে তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবিতে এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। সরকার বিরোধী এ দলগুলোর সাথে সহমত জানিয়ে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য বাম দলগুলো। গত ২৮ তারিখ থেকে সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে নেমে ক্রমান্বয়ে ছয়টি দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। দলটির কর্মসূচিতে শুরু থেকে সমর্থন দিয়ে রাজপথে নেমেছিলো জামায়াত। কিন্তু গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট দলটির নিবন্ধন বাতিল করায় বর্তমানে আবারও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে দলটি।

সরকার বিরোধী এসব দলের কর্মসূচি ও দাবির প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে দফায় দফায় অনুরোধ এসেছে সরকার ও ইসির দপ্তরে। প্রত্যুত্তরে সরকার ও ইসি বাংলাদেশে সুষ্টু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের। একইসাথে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে ইসি।

আরও পড়ুন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসিকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান রাষ্ট্রপতির

সাংবিধানিক নিয়মানুযায়ী নির্বাচন করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। এজন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছানো হচ্ছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। নির্বাচনের প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে গত ১৮ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আ. লীগ। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী নির্ধারিত বুথ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৩ হাজার ২৪১ জন। আর অনলাইনে ১২১ জন ফরম সংগ্রহ করেছেন। টাকার অঙ্কে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে দলটি।

আ. লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, ‘এবার ঢাকা বিভাগে ৭৩০টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৯টি, সিলেট বিভাগ ১৭২টি, ময়মনসিংহ বিভাগ ২৯৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫৮টি, খুলনা বিভাগে ৪১৬টি, রংপুর বিভাগে ৩০২টি ও রাজশাহী বিভাগের জন্য ৪০৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।’

এদিকে চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনে আ. লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ২২১ জন। এদের মধ্যে আছেন বর্তমান মন্ত্রী এমপি ও দলের শীর্ষ নেতারা। তারা ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফরম জমাও দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পাঁচজন বিশেষজ্ঞ পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বাংলাদেশে ছয় থেকে আট সপ্তাহ অবস্থান করবেন এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনার মূল্যায়ন করবেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের দুই গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) গত সোমবার (২০ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। ইসিতে পাঠানো চিঠিতে এনডিআই ও আইআরআই জানিয়েছে, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে চারজন বিশেষজ্ঞ এবং একজন বিশেষজ্ঞ সমন্বয়কারী পাঠানো হবে। তারা বাংলাদেশে ছয় থেকে আট সপ্তাহ কাজ করবেন। নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাদের।

আরও পড়ুন সুষ্ঠু ভোট হলে জিতবে জাতীয় পার্টি

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিশেষজ্ঞ মিশনের কাজ হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতার জন্য কারা দায়ী এবং এর প্রভাব মূল্যায়ন করা। এই বিশেষজ্ঞরা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহিংসতার ঘটনা মূল্যায়ন করবেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা, কোনো রাজনৈতিক দলের অন্তর্দলীয় কোন্দলের কারণে সহিংসতা, নারী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে সহিংসতা, অনলাইনে হয়রানি ও হুমকি ইত্যাদি বিষয় তারা খতিয়ে দেখবেন। এসব পরিস্থিতিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকাও মূল্যায়ন করবেন তারা। এনডিআইয়ের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় কর্মসূচির পরিচালক জেমি স্পাইকারম্যান এবং আইআরআইয়ের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক স্টিফেন চিমারের যৌথ স্বাক্ষরে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়, বিশেষজ্ঞ মিশনের কাজ হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতার জন্য কারা দায়ী এবং এর প্রভাব মূল্যায়ন করা। ভবিষ্যতে নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা কমাতে ওই মিশন প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। এনডিআই ও আইআরআইয়ের বিশেষজ্ঞরা তাদের মূল্যায়ন জনসমক্ষে প্রকাশের পাশাপাশি ইসিতে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

এবারের নির্বাচনের পরিবেশসহ নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত অক্টোবরে ঢাকায় এসেছিল এনডিআই ও আইআরআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল। তারা মন্ত্রিসভার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিদেশি কূটনীতিকসহ অংশীজনদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করে। ওয়াশিংটনে ফিরে ওই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান এবং বাস্তবসম্মত, দীর্ঘস্থায়ী ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে খোলামনে আলোচনার আহ্বানসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করে। তবে সেই আলোচনা আর হয়নি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর