আজ ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছবি: সোলায়মান আলম শেঠের সাক্ষাৎকার

সুষ্ঠু ভোট হলে জিতবে জাতীয় পার্টি


অনলাইন ডেস্কঃ সোলায়মান আলম শেঠ। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি শেঠ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার অনারারি কনসাল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কেবল একজন সফল রাজনীতিবিদই নন, একাধারে ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী এবং সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব। চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য জগতে তিনি সুপরিচিত। চাটগাঁর সংবাদের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি দেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকটের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাঈদুর রহমান চৌধুরী

দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির মধ্যে অন্ত:র্দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে কেন?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। জাতীয় পার্টি সবসময় নির্বাচনমুখী, নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু হাই কমান্ডের নির্দেশ ছাড়া আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেই না। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যদি হয়, আমরা ইনশাহআল্লাহ নির্বাচনে অংশ নিব। কারণ জাতীয় পার্টি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে চিন্তা করে। আমাদের পার্টি জনগণের বন্ধু। প্রতিবার নির্বাচন আসলেই জাতীয় পার্টিকে অনেক মূল্যায়ন বা তোষামোদ করা হয়। নির্বাচন চলে গেলে সে দাম আর থাকে না। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত আসতে বিলম্ব দেখলে অনেকে মনে করে জাতীয় পার্টির হাই কমান্ডে অন্তর্দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। বিষয়টি সত্য নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবেই। আর সুষ্ঠু ভোট হলে সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জিতবেই। কারণ বিগত নির্বাচনে দিশেহারা জাতিকে বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিয়ে আশার আলো দেখিয়েছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই কথা রাখেনি।

ভোটে জিতলে দেশ এগিয়ে নিতে জাতীয় পার্টির পরিকল্পনা কী থাকবে?

জাতীয় পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন স্বর্ণযুগ বলা হতো। এখন জনগণ আলু কিনতেও হিমশিম খাচ্ছে। শাক সবজির দামও বেশি। বাজারে এখন সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। এগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের কোনো উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার জনগণের সহায়ক রূপে তৈরি করা হয়েছে। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দুর্নীতি বন্ধ ও জনগণের ভোগান্তি রোধ করা যায় এমন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব আমরা। আমরা জানি, অতীতেও আমাদের পার্টির জনপ্রিয়তা ছিলো, ভবিষ্যতেও জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।

দেশ পরিচালনায় বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা কী?

বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা ঠেকাতে না পারাটাই সরকারের উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা। উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি, শুদ্ধাচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারা এবং অদূরদর্শী প্রকল্প গ্রহণের ব্যর্থতার জন্যে এই সরকার দায়ী। অর্থনীতি যেভাবে ভেঙ্গে পড়ছে সেটির ভিত শক্ত করে ধরে রাখতে না পারাটাও এ সরকারের ব্যর্থতা। সর্বোপরি জনগণের আস্থা অর্জন করতে এ সরকার ব্যর্থ হয়েছে তা এখন অনস্বীকার্য। মন্ত্রণালয়গুলোতে অযোগ্য ব্যক্তিদের বসানো হয়েছে। একজন অযোগ্য বাণিজ্য মন্ত্রী রেখেছে সরকার। আমাদের ক্ষমতাকালে বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন জি এম কাদের সাহেব। ওইসময় উনি যেভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেছেন তা এখনও অনুকরণীয়। আমরা চাই এখন নির্বাচন সুন্দর হোক, সুষ্ঠু হোক। আমাদের জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো সন্ত্রাসী নাই, চাঁদাবাজি নাই, টেন্ডারবাজি নাই। গত ৩০ বছরে জাতীয় পার্টির কোনো নেতা-কর্মী ক্রস ফায়ারে মারা গেছে এমন কোনো নজির নাই।

আরও পড়ুন নির্বাচনী সমীকরণ শীত মৌসুমে ভোটের হাওয়া গরম

জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতি পল্লিবন্ধু মরহুম হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ আমাদের একটাই নির্দেশ দিয়েছেন ‘দেশকে ভালোবাসো জনগণকে ভালোবাসো, জনগণের পাশে থাকো। আমরা চাই যুব সমাজে যারা আছে ওরা যেন নির্বাচনমুখী হয়। আগে আমরা দেখতাম আমার আব্বারা আম্মারা এমনকি কাজের বুয়াদেরকেও ভোট দিতে। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগের চিত্র অনুপস্থিত। আমরা চাই সুন্দর একটা নির্বাচন আসুক। আমরা যেন সুন্দরভাবে সুষ্ঠু একটা নির্বাচনে অংশ নিতে পারি। আজ চারদিকে উন্নয়নের জোয়ারের শেষ নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার করেছেন, টানেল করেছেন, অনেক কিছু করেছেন; কিন্তু উনার দলে কিছু খারাপ লোক ঢুকে আছে, যারা দুর্নীতি করছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। এক টাকার জিনিস পাঁচ টাকা করছে, এভাবে হলে তো একটা দেশ চলবে না।

বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

অবশ্যই এটা সরকারের ব্যর্থতা। এজন্য বাণিজ্যমন্ত্রী দায়ী। সরকার বলছে- বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নাই, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিন্ডিকেট ভাঙ্গা সম্ভব না। এজন্য আমরা সব জায়গায় সিন্ডিকেট দেখতে পাচ্ছি।

নির্বাচন নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

জাতীয় পার্টি নির্বাচনে জয়ী হলে দেশ ও জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। এ নিয়ে পার্টির বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে যা এই মূহূর্তে গণমাধ্যমে জানানো উচিৎ হবে না। এরশাদ সরকারের শাসনামল বর্তমানে যেসব যুবক ৩৫ বছরের নিচে তারা দেখেনি। উনারা যদি এরশাদ সরকারের শাসনামল দেখতো তাহলে বুঝতে পারতো এরশাদ সরকারের অবদান কি। আজকে দেশে যে উন্নয়নের চিত্র দেখা যাচ্ছে তার ভিত তৈরি করে দিয়ে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ।

গত কয়েক যুগে নির্বাচনের পরিবেশ কেমন বদলেছে?

আগে নির্বাচনে হাডাহাড্ডি লড়াইয়ের একটা প্রতিযোগীতা ছিলো। সেখানে বাহুবলের চেয়ে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং মেধা ব্যয় হতো। সাম্প্রতিক দিনের ভোট রাতে হচ্ছে। নির্বাচন থেকে আস্থা হারিয়ে ভোট বিমুখ হয়ে পড়ছে জনগণ। নায়ক-নায়িকা এনে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অ্যাক্টিভ নেতা-কর্মী দিয়ে প্রচারণা চালাতো। এখন অপসংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে।

বর্তমানে আপনাদের দলীয় কমান্ড থেকে নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা রয়েছে?

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নির্দেশনানুযায়ী আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করব। এক্ষেত্রে দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করবো।

বর্তমানে চলমান বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?

হরতাল-অবরোধ; এগুলো জনগণ পছন্দ করে না। এগুলো এককালে ছিলো, যা আওয়ামী লীগই শিখিয়েছে । হরতাল-অবরোধ জ্বালাও-পোড়াও কোনোভাবেই কাম্য নয়।এতে সরকারের কোনো ক্ষতি হয় না।এতে জনগণের ক্ষতি হয়।তাই এগুলো জাতীয় পার্টি পছন্দ করে না।জাতীয় পার্টি কিন্তু হরতালের মত কোনো কর্মসূচি কখনও দেয়নি।

আপনি কোন আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন?

আমি মনোনয়ন ফরম নিয়েছি চট্টগ্রাম ৮, ৯, ১০ ও ১১ আসন এবং খাগড়াছড়ি আসনে। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে আমাকে যেখানে মনোনয়ন দিবে আমি সেখান থেকেই নির্বাচন করবো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর