আজ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চিরকুট লিখে এনজিও কর্মীর আত্মহত্যা


শাহরিয়ার সুমন

স্যার,ওরা আমাকে এই পৃথিবীতে আর থাকতে দিল না, বেঁচে থাকার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে।’ রাউজানে মোবারকখীল গ্রামের এক এনজিওকর্মী নিজ কর্মস্থলের সহকর্মীদের দায়ী করে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার উদ্দেশে এই ভাষায় চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছেন। জুবলি আকতার (২৮) নামের এই নারী ‘বৈশাখী শ্রমজীবী সমবায় সমিতি’ নামের একটি এনজিওতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাউজান থানা পুলিশ তার নিজ বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেখানে পাওয়া যায় জুবলি আকতারের লেখা চিরকুট। জুবলি রাউজান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোবারকখীল গ্রামের মনোসারাং বাড়ির আবদুস সালামের মেয়ে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আট বছর আগে জুবলি আকতারের সঙ্গে কদলপুর ইউনিয়নের সোমবাইজ্জা হাট এলাকার জনৈক আজিজের বিয়ে হয়। বছর না যেতেই গর্ভবতী অবস্থায় তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পর তার কোলে আসে এক ছেলে সন্তান। বছর কয়েক আগে হিসাবরক্ষক হিসেবে তিনি যোগদান

করেছিলেন বৈশাখী শ্রমজীবী সমবায় সমিতিতে। সেখানে অফিসের লোকজনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিভিন্ন সময় তিক্ততার সৃষ্টি হয়। লাশের পাশে রেখে যাওয়া চিরকুটে তিনি লিখেছেন– ‘স্যার, ওবাইদুল হক (উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা), আসসালামু আলাইকুম। স্যার ওরা আমাকে এই পৃথিবীতে

আর থাকতে দিল না। বৈশাখীর (সমবায় সমিতি) জন্য আমি এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে বাধ্য হলাম। আপনার কাছ থেকে পাওনা ৪০ হাজার টাকা মাকে দিয়ে দিবেন, প্লিজ স্যার। আমার মা যেন পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করে দিতে পারে। আপনি দশ দিনের মধ্যে টাকাটা দিয়ে দিবেন স্যার, প্লিজ।’

আরেক পৃষ্ঠায় লিখা আছে– ‘আমি যদি মারা যায় তার একমাত্র দায় হল বৈশাখী অফিসের মালিক পপি, সাগর, অপুল, পপির বাবা আবদুল খাইয়ুম। ওরা সবাই মিলে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়। পপির বরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে অপবাদ দিয়ে অফিস থেকে বের কর দেয়। আমি নিজে অফিস নিতে

চাইলে সেখানে বাধা দেয়, অন্য অফিসে কাজ নেওয়ার পথও বন্ধ করে দেয়। ওরা আমার বেঁচে থাকার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আর কোনো উপায় না পেয়ে আমি নিজের জীবন দিয়ে গেলাম। আর এরকম অমানুষের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তির দাবি জানিয়ে গেলাম দেশের প্রচলিত আইন ও সরকারের কাছে। ইতি– জুবলী।’

জুবলির টাকা পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ওবাইদুল হক বলেন, আমি তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। জিলান নামে সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশনের জন্য দিয়েছিল। তিনি সেই পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা জানালেও ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের কথা অস্বীকার করেন।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। চিরকুটে কি লিখা আছে তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর