আজ ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নৌকা প্রত্যাশী একাধিক, মাঠে সক্রিয় এলডিপি-বিএনপি


চট্টগ্রাম ১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক)

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঁদেতে সবাই যেতে চায়: এমপি নজরুল
শর্ত না মানলে নির্বাচনে বিরোধী ৪০ দল অংশ নেবে না: অলি
মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জিতব: মফিজ
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দরকার তরুণ নেতৃত্ব: আব্দুল কৈয়ূম
মনোনয়ন চাই, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ করব: আসিফ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে মনোনয়ন চাইব: মহসিন

জাতীয় সংসদের ২৯১ নম্বর আসন চট্টগ্রাম ১৪। চন্দনাইশ এবং সাতকানিয়ার কয়েকটি উপজেলার সমন্বয়ে এটি গঠিত। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখানকার ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বর্তমানে এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন চারজন হেভিওয়েট রাজনীতিবিদ। অন্যদিকে এই এলাকার নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সমর্থকরা। একইসাথে এই আসনের মাঠ চাঙ্গা রেখেছে কেয়ারঠেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মুখর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এলডিপি- বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে যদি সরকার ৪০টি বিরোধী দলের দাবি মেনে না নেই তাহলে কোনো দলই নির্বাচনে অংশ নেবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চট্টগ্রাম ১৪ আসনে ভোটারদের সমর্থন রয়েছে আ. লীগ আর এলডিপিতে। এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম যখন বিএনপিতে ছিলেন তখন এ আসনে বিএনপি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত হতো কিন্তু যখন থেকে তিনি এলডিপির পক্ষে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন তখন থেকে এ আসনে বিএনপি ও এলডিপি দুটো দলে বিভক্ত হয়েছে ভোটার। ফলে ভোটারদের সমর্থন বেড়েছে আওয়ামী লীগে। সে কারণেই এ আসনের দায়িত্ব চলে গেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত রাজনীতিবিদদের কাঁধে।
ক্ষমতায় থাকার কারণে আ.লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কনফিডেন্ট যেমন বেড়েছে তেমনি নিজ ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রত্যাশাও বেড়েছে।’ কিন্তু এসব বিষয় মানতে নারাজ চন্দনাইশ বরকল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের সংগঠিত শক্তি যে ফলাফল দিতে পারবে সেটি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অসংগঠিত শক্তি কখনই দিতে পারবে না। যদিও

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘বর্তমানে এ আসনটির দায়িত্ব আ. লীগের কাঁধে থাকলেও এখানে আ.লীগের বিরোধী দলগুলো মাঠ চাঙ্গা রেখেছে। সুবিধা নেয়ার জন্য উপরে উপরে অনেকে ক্ষমতাসীন দলের ভক্ত কিন্তু ভেতরে তারা অন্যমত পোষণ করে। এর বিশেষ কারণ হলো গ্রুপিং এবং ব্যক্তিগত দল ভারীর জন্য বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের আ.লীগে সম্পৃক্তকরণ প্রক্রিয়া। দীর্ঘসময় ধরে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্মীদের শিষ্ঠাচার ও শৃঙ্খলাভাবের কারণে আ.লীগের যে অবস্থানে পৌঁছানোর কথা ছিল, সেই কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে এখনো পৌঁছুতে পারে নাই, তারপরও আমি মনে করি নির্বাচনে অবশ্যই আ.লীগ জিতবে। কারণ আ. লীগ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

বিরোধী দলের সমর্থকরা দাবি করছেন মামলা হামলার ভয়ে চন্দনাইশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আ.লীগের বিরুদ্ধেও কোনো কথা বলা যায় না। এরকম একটি মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের সময় আ. লীগের বিরুদ্ধে ৫৩টি মামলায় সহস্রাধিক আ.লীগ কর্মীকে আসামী করা হয়েছিলো। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া স্বত্ত্বেও কেবল আ.লীগ কর্মী হওয়ার কারণে সে মামলা থেকে রেহায় পায়নি। আমার সন্তানেরা তখন স্কুল কলেজে যেতে পারে নাই। কই সেরকম পরিস্থিতি তো এখন নাই।’ এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। চট্টগ্রাম ১৪ আসনে আগামি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোটে লড়তে চান আ লীগের হেভিওয়েট চারজন প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মফিজুর রহমান, আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আসিফ।

চন্দনাইশে আ.লীগ সমর্থন করে এরকম একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত হলেও তার কাছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পরিবর্তে নিজের ভাই- ভাগ্নে, আত্মীয়স্বজন, বিএনপি-এলডিপি, জামায়াতের লোকজনই বেশি প্রিয়। বিষয়টির প্রমাণ দিতে গিয়ে তারা জানান, চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দিন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে গিয়ে এলডিপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল জব্বার চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন বর্তমান এমপি। এ কারণে আসন্ন নির্বাচনে পার্টির মনোনয়ন হারাবেন বলে দাবি করছেন আ.লীগ সমর্থকরা। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরী। চাটগাঁর সংবাদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি এ আসনে টানা দুইবার নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছি। নির্বাচনী ইশতেহারে আমি ভোটারদের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সবটা পালন করেছি।’

গত নির্বাচনে এ আসন থেকে ২৬জন আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলো উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘এবার যদি ৫০জন ও আবেদন করেন তাহলেও আমিই মনোনয়ন পাব।’ এসময় তিনি বলেন, ‘সবাই তো চাঁদে যেতে চায়, চাঁদে কী সবাই যেতে পারছে?’

এ আসনে অন্য আরেক মনোনয়ন প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। তিনি চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে এবং পার্টির সুখে দুঃখে সবসময় পাশে ছিলাম বলে আমি এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে পার্টি কাকে মনোনয়ন দেবে বা দেবে না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। ভালো কাজ করলে জনগণ অবশ্যই মূল্যায়ন করবে। এটা সবার থাকে না। আমি মনোনয়ন পেলে ইনশাহআল্লাহ বিপুল ভোটে জয় লাভ করব। এতে পার্টির প্রত্যাশাও পূরণ হবে বলে আশা রাখছি।’

চন্দনাইশের দুই পৌরসভা, আট ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়ার ছয় ইউনিয়ন নিয়ে সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করা হয়। এখানে তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে জনগণের মন জয় করেছেন আ.লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সাবেক সদস্য এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী। তিনি চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘আ.লীগের ভিশন অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে দক্ষ ও তরুণ নেতৃত্বের বিকল্প নেই। আমি আগামি সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। চন্দনাইশবাসীর সেবায় আমি সবসময় নিয়োজিত ছিলাম। ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে আমি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমি যদি মনোনয়ন পাই তাহলে আমার বিশ্বাস জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে। সেটি হলে আমি আমার এলাকায় ই- গর্ভনেন্স পরিষেবা বাস্তবায়ন করব।’

এ আসনের আরেক তরুন রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আসিফ। তিনি চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘এবার আমি আ. লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে কাজ করব। মানুষের সুবিধা অসুবিধার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেব। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন দলকে সুসংগঠিত করে তার পাশে থাকব। যেহেতু আমি আইনী বিষয়ে পড়াশোনা করেছি তাই এখানকার আইন প্রশাসনের উন্নয়নেও আমি নজর দেব। যদি পার্টি আমাকে মনোনয়ন না দেয় তাহলে যাকে মনোনয়ন দিবে দলকে সংগঠিত করে আমি তার পাশে থেকে আ.লীগকে জেতাতে কাজ করব।’

এদিকে নির্বাচন নিয়ে আ.লীগের নেতাকর্মীদের উৎসাহ থাকলেও এখনো অবধি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার মতে অনড় এলডিপি-বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এসব দলের সমর্থন আছে এ আসনের ভোটারদের মাঝে। বর্তমান সরকার সংবিধানকে প্রাধান্য দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার পক্ষে অন্যদিকে বিএনপি ও এলডিপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, যদি শর্ত মানা না হয় সেক্ষেত্রে অতীতের নির্বাচনগুলোর মতো এবারেও নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে কর্নেল (অব.) অলি আহম্মদ বীর বিক্রম চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, নির্বাচনে কে জিতবে না জিতবে সেটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন। আমাদের দাবি কেয়ার টেকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, সবার অংশগ্রহণে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের নির্বাচন। সেটি যদি মানা না হয় তাহলে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ৪০টি দলের কোনোটাই নির্বাচনে অংশ নেবে না।

আর বিএনপির পক্ষে ধানের শীষের সমর্থন রয়েছে ডা. মহসিন জিল্লুর করিমের। এছাড়া চন্দনাইশ বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ারও চাইবেন নমিনেশন। তবে এক্ষেত্রে তাদের শর্ত ওই একটাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে অংশ নেবেন কেউই। ডা. মহসিন জিল্লুর করিম এ প্রসঙ্গে চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগে প্রশ্ন হলো বর্তমান সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটা মেনে নেবে কী না? যদি মেনে না নেই তাহলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথায় আসছে না।’

একইরকম মন্তব্য করেছেন নুরুল আনোয়ার। তিনি চাটগাঁর সংবাদ জানান, দলীয় ভাবে যে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে আমি তার বিরুদ্ধে যাব না। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মনোনয়ন চাইব।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর