আজ ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

শীতে নিউমোনিয়ার প্রকোপ: শিশুদের রক্ষার্থে গোলটেবিল বৈঠকে যে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের


অনলাইন ডেস্কঃ প্রতিবছর শীত মৌসুমে নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপে অসংখ্য শিশুর মৃত্যু ঘটে। এক্ষেত্রে অনেক শিশু মায়ের গর্ভেও আক্রান্ত হয়। দেশে এ রোগের প্রতিষেধক (এমোস্কিলিন ডিটি) কেবল একটা মাত্র কোম্পানি তৈরি করে, তাই এই ওষুধকে এসেন্সেনিয়াল ড্রাগে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হচ্ছে। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের অডিটোরিয়ামে গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় এ কথা উঠে আসে। দেশের মূলধারার একটি গণমাধ্যম ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড স্যার্জনস (বিসিপিএস) এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের ন্যাশনাল নিউবর্ণ হেলথ প্রোগ্রামের (এনএনএইচপি) ব্যবস্থাপক ডা. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘নব্বই দশকে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজার জীবিত জনে ১৩৩ জন ছিলো। ২০২২ সালের হেলথ ডেমোগ্রাফি সার্ভে দেখা যায় শিশুমৃত্যু প্রতি হাজারে কমে ৩১ জন হয়েছে। এটা আমাদের দেশের সবার একটা বড় সাফল্য ১৩৩ জন থেকে ৩১ জনে নেমে আসা। ২০৩০ সালের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এটা আমাদের ২৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে। নবজাতকের মৃত্যু ৯০ দশকে ৫২ থাকলেও এখন সেটা প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ২০ জনে নেমেছে। এটাকে ১২ বা তার নিচে নিয়ে যেতে হবে।’

ডা. জহুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু প্রতিবছর প্রতিদিন নিউমোনিয়ার মারা যাচ্ছে। ২০২২ সালের হেলথ সার্ভে থেকে দেখা যায়, অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুদের ২৪ শতাংশ নিউমোনিয়ায় মারা যায়। ১ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের ৪১ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে নিউমোনিয়ার কারণে। নবজাতক থেকে ৫৯ মাস পর্যন্ত শিশুমৃত্যুর বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিউমোনিয়া। অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া।’

আরও পড়ুন বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস

তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের নিউমোনিয়ার মৃত্যুর হার তিন শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ছিলো, যা বর্তমানে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। সুতরাং নিউমোনিয়ার দিকে বাড়তি নজর দিলে নিউমোনিয়াতে মারা যাওয়া বহুলাংশে কমাতে পারব।’

বাংলাদেশ শিশু বিশেষজ্ঞ সমিতির মহাসচিব শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন সান এক্সপোজার নাই, সূর্যের আলো থেকে ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। আমাদের মায়েরা, বাচ্চারা যেহেতু সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আমার মনে হচ্ছে, নিউমোনিয়া প্রতিরোধে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ডি’র গুরুত্ব বিষয়ে আমাদের জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগাম ম্যানেজার ডা. সাবিনা আশরাফী লিপি বলেন, ‘আমরা চাই নিউমোনিয়া বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাক। আমরা চাই অবিভাবকেরা জানুক তাদের বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা আছে। নিউমোনিয়া হলে তারা যেন ফার্মেসি থেকে বিনা প্রেস্ক্রিপশান ওষুধ না কিনে, তারা যেন গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে না যায়, কমপক্ষে যেন অভিভাবকেরা কোনো রেজিস্টার ডাক্তারের কাছে যায়, না হলে যেন নিকটস্থ কোনো সরকারি হাসপাতালে যায়।’

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৩ থেকে ২৬ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এর মধ্যে চার সাড়ে চার হাজার শিশু মারা যায় কোনো সেবা না নিয়ে। বিনা চিকিৎসায় যেন একটা শিশুও না মারা যায়, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা হতে পারে।’

সভাপতির বক্তব্যে ডা. মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত এমোস্কিলিন ডিটি ওষুধ একটা মাত্র কোম্পানি তৈরি করে, আমার অনুরোধ ইডিসিএলকে এটা তৈরি করতে হবে এবং এই ওষুধকে এসেন্সেনিয়াল ড্রাগে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের বইয়ে বর্তমান সময়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় বিষয় আছে সেগুলো বাদ দিয়ে, শিশুদের হাত ধোয়া, বিশুদ্ধ পানি পান করা, নাকে হাত না দেওয়া, পরিষ্কার পরিছন্নতার বিষয় যদি অন্তর্ভুক্ত করা যায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যাবে।’

বৈঠকের আলোচনায় আরো বক্তব্য রেখেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার উপপরিচালক শেখ দাউদ আদনান, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাহমিনা বেগম, বাংলাদেশ শিশু বিশেষজ্ঞ সমিতির মহাসচিব শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ, আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান, ইউনিসেফের নবজাতক ও শিশু বিভাগের হেলথ স্পেশালিষ্ট ডা জাহিদ হাসান, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. গৌতম বণিক, প্রজন্ম রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ডা. সাব্বির আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগাম ম্যানেজার ট্রেনিং ডা. সাবিনা আশরাফী লিপি।

তথ্যসূত্র: বাংলানিউজ২৪


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর