আজ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাজী মুহাম্মদ সেলিম রহমান

‘এক দীপ্র অনির্বাপিত বাতি হয়ে জ্বলছে মামুন ভাই’


হাজী মুহাম্মদ সেলিম রহমান: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আলহাজ্ব মামুনুর রশীদ মামুন ভাই দলের জন্য অনেক ত্যাগ ও লড়াই সংগ্রাম করেছেন। মামুন ভাই এই চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতিতে অনেক চাষাবাদ করেছেন। যার ফসল অনেকে ভোগ করছে। আমার চোখে দেখা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আজ অনেক বড় বড় নেতা হয়েছেন সেটি মামুন ভাইয়ের অবদান আছে নিঃসন্দেহে। মোটা দাগে বলা যেতে পারে তিনি শুধু নিজের জন্য বা নিজের আত্মস্বপ্ন পূরণের জন্য প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির খাতায় নাম লেখাননি। নিজের ব্যক্তিগত আশা ও আশাভঙ্গ নিয়ে শুধু দোলায়িত না হয়ে অনেক সময় নিজেকে ছাড়িয়ে অন্যের সঙ্গে যোগ দিয়ে-অন্যের দুঃখ-কষ্ট, ভালো-মন্দও গ্রহণ করেছেন। সমাজের বর্তমান গতি ও স্পন্দন অনুভব করে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। সেই সাহসের পিদিমটি তিনি জ্বালিয়েছেন বরফের চাঁইয়ের মধ্যে থেকেও।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এদেশে আওয়ামী রাজনীতি বলতে গেলে এক প্রকার নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। ৭৫ এর পরবর্তীতে আশির দশকে ওমরগনি এম ই এস কলেজের আঙিনায় জয় বাংলার পাঠশালা হতো, তখনকার পাঠশালার অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিত কলেজের সেই সময়ের টগবগে তরুন ছাত্রনেতা জি এস মামুন ভাই। সামরিক বিরোধী আন্দোলন, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মামুন ভাইয়ের সরব উপস্থিতি সবাইকে নাড়া দিত। সবাই একই সুরে বলতো এম ই এস কলেজের মামুনের নেতৃত্বে মিছিল আসছে যদিও বা এক হাতে বেন্ডিজ। তখন আওয়ামী রাজনীতি করা খুবই কঠিন ছিল, আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা তখন বিভ্রান্ত, কেউ কেউ জেলে। সারাদেশে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার ও মামুন ভাইকে হুলিয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছে। মিথ্যা মামলায় নির্যাতন করে কারাভোগ করতে হয়েছে। দেশকে শৃঙ্খলিত করে বরফ-সময় তৈরি করে উল্টোপথে দেশকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চোরাপথে অধিষ্ঠিত ক্ষমতাধররা তখন তৎপর। সেই কালজ্ঞ-সময়ে একজন মামুন ভাই তার সহযোগীদের নিয়ে বিপ্লবের এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বুকে নিয়ে শুধু দিন রাত সংগঠনের জন্য পরিশ্রম লড়াই সংগ্রাম করে প্রিয় নেতা চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে মুজিবের আত্মার আত্মীয় হয়ে কীভাবে যে দাঁড়ালেন, তা গৌরবের এক ইতিহাস এবং বিস্ময়কর।

মামুন ভাইদের ত্যাগ ও লড়াই-সংগ্রাম, জেল-জুলুমের বিনিময়ে কিন্তু আজ নিজের দল আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এর ফসল ভোগ করছে নব্য আওয়ামী লীগ, হাইব্রিড আওয়ামী লীগ। আমি শংকিত যেন ফেনীর জনপ্রিয় জননেতা জয়নাল হাজারীর মত মামুন ভাইয়ের অবস্থা না হয়৷। হাজারী মারা যাওয়ার পর তার বিশাল নামাজে জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে তিনি মানুষের কত আপনজন ছিলেন। অনেকে কেঁদেছেন, অনেকে সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে তার সম্পর্কে ইতিহাস লিখেছেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তাকে সেই সম্মান যদি সবাই করতো তিনি অপার আনন্দ পেতেন। তাই জীবিত থাকাবস্থায় আপনারা মামুন ভাইদেরকে প্রাপ্য সম্মান করুন।

মামুন ভাই বর্তমানে তার জায়গায় নীতি আদর্শে অটল, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি মামুন ভাই কখনো করে নাই। নেতার চাটুকারিতাকে কখনো আশ্রয় প্রশ্রয় দে নাই। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবী ছাড়া নিজ উদ্যােগে সাংগঠনিক কর্মসূচি তিনি পালন করছেন ব্যাপকভাবে। জাতীয় দিবস, জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জম্মদিন, শেখ রাসেলের জম্মদিন, চট্টলবীর আলহাজ্ব এবি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জম্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী, বড় বড় গরু জবাই করে মেজবান দিয়ে কর্মীদের দাওয়াত করে কর্মসূচি পালন করে আসছেন প্রতিবছর। আমি অনেক আনন্দিত হই, যখন মামুন ভাইয়ের সেল ফোন থেকে আমার কাছে কল আসে, আমার কুশলাদি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন।

ওমরগনি এম ই এস কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষে ১৯৯২ সালে বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিলো। গন্তব্য ফেনির মুহুরী প্রজেক্ট। সেই বনভোজনে আমি মামুন ভাই ও আইয়ুব ভাইদের সাথে কাফেলায় সাথী হয়ে গিয়েছিলাম। যদিও বা আমি এম ই এস কলেজের ছাত্র নই, আমার বন্ধু সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রয়াত আবুল কালাম নান্টুর মারফতে সেই পিকনিকে গিয়েছিলাম। বনভোজনে মামুন ভাইকে দেখেছিলাম, ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর খোঁজ খবর নিচ্ছেন তিনি।

তার শ্রম, সৃজনশীলতা ও দুর্দান্ত সাহস-মনোবল এই সময়কালে তার অস্তিত্ব, এক দীপ্র ও অনির্বাপিত বাতি হয়ে জ্বলছে। আমরাও সেই বাতির অন্তর্গত আলোর অভিব্যঞ্জনা নিয়ে অভিষিক্ত হয়ে থাকতে চাই। তিনি রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার মুজিব আদর্শের অকুতোভয় সূর্য সৈনিক ও চট্টলবীর আলহাজ্ব এবি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিশ্বস্ত কর্মী হয়ে সংগঠনের জন্য এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এম ই এস কলেজের মামুন ভাই হিসাবে ভালোবাসা পেয়েছেন অশেষ। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া দেশের বাইরে, শহর-গ্রামে ও নিভৃত স্থানে ছুটে গিয়েছেন।

আমি আশা করবো এ বিপক্ষ সময়ে আগামীতে মামুন ভাইকে দল মুল্যায়ন করবে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে উনাকে যোগ্য সম্মান দেয়ার জন্য দলের নীতি নির্ধারকের কাছে বিনয়ের সহিত অনুরোধ করছি। প্রিয় মামুন ভাই আমার অতলস্পর্শী শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা গ্রহণ করবেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর