আজ ৩রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

নজরুল আজও প্রাসঙ্গিক


সম্পাদকীয়ঃ ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত। যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত’।

কত বেশি দ্রোহের পীড়ন হলে এ ধরনের একটি কবিতা লিখতে হয় একজন কবিকে, তার উত্তর হয়ত কেবল নজরুলই দিতে পারতেন। নজরুলের দেখা সেই অত্যাচারীরা, সেই নিপীড়নকারীরা কী আজও এই মর্তে আছে? যদি থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধাচারণ করার জন্য কী নজরুলের মতো বিদ্রোহীরাও আছেন? এমন প্রশ্ন প্রায়শ পেয়ে বসে আমার মতো অনেককে। প্রতিবছর মে মাসের ২৪ তারিখ এলে অনেকের মতো তার জন্মবার্ষিকীর কথা আমাদেরও ঘটা করে মনে পড়ে। খুব বেশি মনে হয় এ বাংলায় অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে নজরুলের লেখায় যে আগুন ঝড়েছিলো তা বেমালুম ভুলে গেছে বাঙালী। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু- এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধুমকেতু!
শতবছর আগে নজরুল যে দ্রোহের কবিতা লিখেছিলেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক। তখন ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। কবিতাটির প্রথম শ্রোতা ছিলেন মুজফফর আহমদ।

‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নজরুল অসত্য, অকল্যাণ, অশান্তি, অমঙ্গল এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখিয়েছেন; স্বদেশের মুক্তির জন্য উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখিয়েছেন, শৃঙ্খল-পরা আমিত্বকে মুক্তি দেওয়ার কথা উত্থাপন করেছেন। তার কবিতার পরতে পরতে ছিলো সাম্প্রদায়িক বিরুদ্ধতা। শত বছর আগে পৃথিবীতে সবচেয়ে সংকটে ছিলো যে চেতনা, তার নাম মানবতা। যা আজও রয়েছে; বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে চেতনার, তার নাম মানবতা; যা আজও অনুপস্থিত আমাদের মানব সমাজে। এখন এই পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন সমস্যা দেশে দেশে বিরাজমান ধর্মীয় সংকীর্ণতা, ধর্ম নিয়ে জঙ্গিপনা। নিজ নিজ ধর্ম রক্ষার দোহাই দিয়ে অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো এক ধরনের অলিখিত প্রবণতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সারা বিশ্বে-প্রায় প্রতিটি সমাজে। এজন্যই কি নজরুল লিখেছিলেন-‘আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করিনা কাহারে কুর্ণিশ, আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার, আমি ইস্রাফিলে সিঙ্গার মহা-হুঙ্কার, আমি পিণাকপানির ডমরু ত্রিশূল, ধর্মরাজের দণ্ড, আমি চক্র ও মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড।’

আরও পড়ুন কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তাহব্যাপী নজরুল উৎসব ২৫ মে থেকে শুরু

তিনি লিখেছিলেন, গাহি সাম্যের গান, যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, যেখানে মিশেছে হিন্দু- বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।’ আরো লিখেছেন-‘গাহি সাম্যের গান মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম-জাতি; সব দেশে-সবকালে, ঘরে ঘরে মানুষের জ্ঞাতি।’

এ বছর নজরুলের ১২৫তম জন্মজয়ন্তি। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও তাকে নিয়ে রয়েছে নানা আয়োজন। ক্ষুদে থেকে প্রবীণ সব বয়সী সংস্কৃতিমনা মানুষেরা প্রতিবছর সপ্তাহ থেকে মাসব্যাপী তার জন্মজয়ন্তি উদযাপন করে থাকেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এবছর চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সে বিশ^বিদ্যালয়ের মতো দেশের অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়সহ স্কুল কলেজেও উদযাপিত হবে নজরুল জন্মজয়ন্তি। তবে নজরুলের জন্মবার্ষিকী উদযাপনে কেবল উৎসব, অনুষ্ঠান কিংবা আড়ম্বরতা নয় প্রয়োজন তাকে হৃদয়ে লালন। তাহলেই হয়ত ঘটবে আমাদের জাতিস্বত্ত্বার মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর