আজ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

ঈদের পর টানা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ


অনলাইন ডেস্ক

ঈদুল ফিতরের পর টানা সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। জেলা, মহানগর-উপজেলা সম্মেলনের পাশাপাশি করা হবে সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনও। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব এনে সংগঠনে গতি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন দলটি। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কমপক্ষে ১৮টি জেলা কমিটির সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক বছর। বারবার তাগাদা দিয়েও নির্বাচনের আগে সম্মেলন করা যায়নি। ঈদের পর থেকে টানা সম্মেলন করবে ক্ষমতাসীন দলটি। যেসব জায়গায় উপজেলা ভোট হবে, সেসব জেলায় সম্মেলন করা হবে না। সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যেগুলোর মেয়াদ শেষ সেগুলোর সম্মেলন চলবে। সম্মেলনের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও সজাগ ও সতর্ক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, ‘সম্মেলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। একটি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল শেষ হলে ঘরগোছানো কাজ শুরু হয় পরবর্তী কাউন্সিল পর্যন্ত চলে। সামনে উপজেলা ভোট আছে। যেসব জায়গায় ভোট হবে, সেখানে কোনো সম্মেলন হবে না। আর যেখানে ভোট নেই সেসব জেলা মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে থাকলে সম্মেলন করা হবে। মেয়াদউত্তীর্ণ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন চলবে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটের পর বিএনপি-জামায়াত আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। তারা যেন নাশকতা করতে না পারে সেজন্য দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার নিদের্শনাও দেওয়া হচ্ছে। সম্মেলন ও সরকারবিরোধী অপরাজনীতি একসঙ্গেই মোকাবিলা করা হবে।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে নাজুক। গত এক বছর আগে দুই মহানগরের থানা-ওয়ার্ড সম্মেলন করলেও শীর্ষনেতাদের কোন্দলের কারণে কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার আলটিমেটাম দিলেও কমিটি দিতে পরেনি নেতারা। থানা-ওয়ার্ডে কমিটি না থাকায় ভেঙে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। এ নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ওপর হাইকমান্ড চরম বিরক্ত বলে জানা গেছে। সে কারণে আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জোর প্রস্তুতি চলছে।

একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জানিয়েছেন, এর চেয়ে খারাপ অবস্থা কখনো ঢাকা সিটিতে ছিল না। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে। তারা বলছেন, রাজনীতিতে ঢাকাকে হৃৎপিণ্ড বলা হয়ে থাকে। ঢাকা যার দখলে থাকে, দেশও সেই রাজনৈতিক দলের হাতে থাকে। বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীরা বড় ধরনের কর্মসূচি দিলে ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে নেতা-কর্মী নিয়ে আসতে হয়েছে বিগত কর্মসূচিতে। যা অতীতে কখনো হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সম্মেলন, জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে কয়েকটা জেলায় সম্মেলন করা যায়নি। খুব শিগগির সম্মেলনের জন্য কার্যক্রম শুরু করব।’

বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, ‘বরিশাল জেলার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এই জেলাসহ যেগুলোর সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, সেগুলোর সম্মেলনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেব।’

সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘জাতীয় কাউন্সিলের আগে সব জেলায় সম্মেলন হয়েছে। এখন যেগুলোর সম্মেলনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে সেগুলোর কাজ শুরু করা হবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সেগুলোর দ্রুতই সম্মেলন করা হবে। মেয়াদ উত্তীর্ন সংগঠনের মধ্যে রয়েছে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ।

সূত্র মতে, ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৬ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ও ১২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসের আগে সে বছরের ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ এবং ৮ জুলাই উত্তরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সংগঠনটি চলছে তিন ভারপ্রাপ্ত দিয়ে।

২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও গত মেয়াদে তা উপেক্ষিত হয়েছে। এক বছর আগে অনেক আওয়াজ দিয়ে থানা-ওয়ার্ড সম্মেলন হলেও এখনো কমিটি দেওয়া হয়নি। এ কমিটি গঠনে নানা অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। অপরিচিত, জীবনের প্রথমবারেই ওয়ার্ড-থানায় শীর্ষ পদ পেতে যাচ্ছেন অনেক হাইব্রিড ও অর্থবিত্তের মালিকরা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর