আজ ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছবি: আব্দুল কৈয়ূম চৌধুরী

স্মরণীয় পথিকৃৎ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু


আবদুল কৈয়ূম চৌধুরীঃ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ কিংবা মেহনতি মানুষের জন্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাই কী ছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব দিতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। তাঁর আমলের যে কোনো মানুষ নিশ্চয়ই নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন তিনি পরোপকারী একজন মানুষ ছিলেন। দেশের স্বার্থ নষ্ট হয় এমন কোনো কার্যকলাপকে তিনি কখনই প্রশ্রয় দিতেন না। আদর্শবান এই রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ছিলেন গরিব-দুঃখী মানুষের পরম বন্ধু। তাঁর আলোয় আলোকিত হয়েছিল সমগ্র চট্টগ্রামের রাজনীতি। চট্টগ্রামের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের আন্দোলন-সংগ্রামের পুরোধা ছিলেন তিনি। একজন সৎ ও আদর্শবান রাজনীতিক ও সমাজসেবকের যেসব গুণ থাকা উচিত, তার সবই তাঁর মধ্যে ছিল। তিনি বহু বছর সক্রিয় ছিলেন চট্টগ্রামের রাজনীতিতে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চারবার। নবম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু বনেদী ও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ছিলেন, ছিলেন দেশবরেণ্য শিল্পপতি।

তিনি যখন যেখানে যে দায়িত্ব পালন করেছেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে সেটি পালন করেছেন। আজ চট্টগ্রামের যত উন্নয়ন এসব উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। অনেকগুলো উন্নয়ন পরিকল্পনার নেপথ্যেও কাজ করেছেন তিনি। চট্টগ্রামের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নেও নজর ছিলো তাঁর। এজন্য তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চট্টগ্রামসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। শিল্পপতি এবং বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত হওয়ায় আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পরিকল্পনা ছিল সুবিস্তৃত। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার-ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথে যোগাযোগ সড়ক যোগাযোগ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিলো একটি টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের সাথে যুক্ত হবে আনোয়ারা শহর। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ এই স্বপ্নের বাস্তবতা।

তাঁর সম্মানার্থে কর্ণফুলী-আনোয়ারার প্রবেশ মুখে স্থাপিত হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু চত্বর’। দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম কর্ণফুলী তৃতীয় সেতুু নির্মাণের পিছনে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর অবদান অস্বীকার্য।

রাজনীতি, ব্যবসায়ী ও সংগ্রামী হিসেবে তিনি পথিকৃৎ। প্রায় সমসাময়িককালে তিনি ব্যবসা ও রাজনীতি দুটোতেই মনোনিেেবশ করেছিলেন। মেহনতি মানুষের সংগ্রামে একাত্মতা প্রকাশ করে হয়েছিলেন সকলের কাছে গ্রহনীয়, পূজনীয়।

তাঁর পরিচয় কেবল আ. লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নয় তিনি দেশের ব্যবসায়ী সমাজের মুখপাত্র। তিনি দুই দফায় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ১৯৮৮ সালে তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠক এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ৭৭ জাতি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আখতারুজ্জামান চৌধুরী সমাজহিতৈষী, দানবীর ও জনদরদি ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি হাইলধর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ায় বহু মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এ ছাড়া বহু জনহিতকর কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও আখতারুজ্জামান চৌধুরী বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি কারাবরণও করেন। রাজনীতি করতেন মাটি আর মানুষের সঙ্গে। সমাজসেবক ও দানবীর হিসেবে নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পরিবারের সুখ-দুঃখে তিনি পাশে দাঁড়াতেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর অবদান অপরিসীম। যে কোনো কঠিন সময়ে দলের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত এক কর্মী। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একজন অভিভাবক। ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর) অর্জন করেন।
আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাই আজ আমাদের মাঝে নেই। তবুও তিনি আমাদের অন্তরে চির জাগ্রত আছেন। তাঁর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি তাঁর স্মৃতি।

লেখক: উপদেষ্টা সম্পাদক, চাটগাঁর সংবাদ ও
সদস্য, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর