আজ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

যেসব কারণে বাঙালীর কাছে স্মরণীয় আজ ২৫ জুলাই


চাটগাঁর সংবাদ ডেস্ক: আজ ২৫ জুলাই ২০২৩। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ২০৬তম (অধিবর্ষে ২০৭তম) দিন। ফেলে আসা ইতিহাসের এই দিনটি বেশ কয়েকটি কারণে বাঙালির কাছে স্মরণীয়। চলুন জেনে নেয়া যাক সেইসব ঘটনা।

সৈয়দ মীর জাফর আলী খান দ্বিতীয়বার বাংলার নবাব: ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের সহায়তায় নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে মীর জাফর প্রথমবার বাংলার নবাব হয়েছিলেন। ১৭৬০ সালে ইংরেজরা মীর জাফরকে মীর কাশিমের নিকট ক্ষমতা অর্পণ করতে বাধ্য করে। মীর কাশিম ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা ব্যক্তি এবং তিনি বাংলাকে স্বাধীনভাবে শাসন করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। ফলশ্রুতিতে ইংরেজদের সাথে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং ১৭৬৩ সালের এই দিনে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পুনরায় মীর জাফরকে নবাব করা হয়।

জন্মদিন: আজ বেশ কজন কীর্তিমান ও গুণী বাঙালির জন্মদিন। চলুন সংক্ষেপে জেনে নিউ তাঁদের সম্পর্কেও-

মনোজ বসু: ১৯০১ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর থানার ডোঙ্গাঘাট গ্রামের এক মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারে এই বাঙালি কথাসাহিত্যিক জন্মেছিলেন। কলকাতার ভবানীপুরে সাউথ সুবারবন স্কুলে শিক্ষকতা নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং দীর্ঘদিন সেখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখি করেছেন। প্রকাশনার জন্য পরবর্তীতে নিজের প্রকাশনা সংস্থা “বেঙ্গল পাবলিশার্স” প্রতিষ্ঠা করেন। শেষে সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দেন। তাঁর রচিত গল্প, উপন্যাস, নাটক ও ভ্রমণ কাহিনী বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ১৯৮৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর এই কীর্তিমান মানুষ পরলোক গমন করেন।

প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়: অবিভক্ত বাঙলার পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় ১৮৯২ সালের এই দিনে এই গুণী মানুষের জন্ম। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রজীবনীকার। মাত্র ২০ বৎসর বয়সে ১৯১২ সালে তিনি রচনা করেছেন ‘প্রাচীন ইতিহাসের গল্প’। এটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো। তাঁকে শান্তিনিকেতনে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৩ সালে যখন তিনি মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা) ভ্রমণে যান, তখন ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ডঃ লুসো তাঁকে দেখে বলেছিলেন- ‘I know you. Your book is on my table’। তিনি ১৯৬৬ সালে লিখলেন ‘পৃথিবীর ইতিহাস’। ১৯৮৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যবরণ করেন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারকদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাঙলার কলকাতায় পার্ক সার্কাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার কামারগাতি গ্রামে। এই গুণী মানুষ ২০০৫ সালে ‘একুশে পদক’, ২০১২ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’সহ দেশি বিদেশি অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি।

রিফাত বিন সাত্তার: বাংলাদেশের তৃতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার (দাবাড়ু) তিনি। ১৯৯৩ সালে তিনি আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব পেয়েছিলেন। আর আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেছেন ২০০৬ সালে। তাঁর আগে দাবায় আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পেয়েছিলেন নিয়াজ মোর্শেদ ও জিয়াউর রহমান।

আজ ২৫ জুলাই উপরোল্লেখিত কীর্তিমান কিংবদন্তীদের জন্মদিনের কারণে যেমন স্মরণীয় তেমনি বাঙালীর জন্য আজ স্মরণীয় হয়ে রয়েছে বেশ ক’জন গুণী মানুষের মৃত্যুদিবস হওয়ার কারণেও।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ আলী আহসান: এই গুণী মানুষ ছিলেন একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, কবি, সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। ১৯২২ সালের ২৬ মার্চ জন্মেছিলেন তিনি। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ইংরেজিতে ভাষান্তর করেছেন তিনি। ১৯৭৭-৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও ধর্ম সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। সুইডেনের নোবেল কমিটির সাহিত্য শাখার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০০২ সালের ২৫ জুলাই এই মহান কিংবদন্তীর জীবন প্রদীপ নিভে যায়।

বেবী মওদুদ: সাংবাদিক, লেখক এবং রাজনীতিবিদ বেবী মওদুদ জন্মেছিলেন ১৯৪৮ সালের ২৩শে জুন। তিনি নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম একজন নারী সংগঠক ও বিশ্লেষক এবং কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিজেএ) ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস ছিলেন। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতাসহ শিশু কিশোরদের নিয়েও প্রচুর লেখালেখি করেছেন তিনি। শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিতি আছে তাঁর। বাংলাদেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিত হন তিনি। দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালের ২৫শে জুলাই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর