আজ ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বর্ণাঢ্য আয়োজনে চন্দনাইশে পুননির্মিত শহীদ জিয়াউর রহমানের বৈঠকখানা উদ্বোধন


 

 

সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল:

উত্তর দক্ষিণ সরু খাল, নাম তার বরুমতি। তূলনা করা যায়, ইছামতি কিংবা মধুমতি নদীর সাথে। তার দু’পাড়ে বিল আর বিল, একটু দূরে মানবালয়। এ বিল বা জমিতে ফলেছে ধান। কিছু ধান পাকা; সোনালী রাঙা, কিছু কাঁচা, কোথাও কোথাও সবুজ রাঙ্গা ধানের শীষ। চারিদিকে পাখির কিচির মিচির। যেখানে রাতে মিটিমিটি জোনাকি জ্বলে। ছোট একটি সেতু বা কালভার্ট বরুমতির দু’পাড়ের মিলন ঘটিয়েছে। এতে বয়ে চলেছে জুনিয়র হাইওয়ে। পশ্চিমে বরমা-বরকল হয়ে যাওয়া যায় আনোয়ারা, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম বন্দর, মহেশখালী গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। পূর্বদিকে চন্দনাইশ পৌরসভা ও উপজেলা সদর হয়ে যাওয়া যায় চট্টগ্রাম শহর, কক্সবাজার, বান্দরবান ইত্যাদিতে। খালটি দক্ষিণ পশ্চিমে মিশেছে নিশিকান্ত ও যথখালে, উত্তরে মিশেছে চামুদারিয়া খালে। বরুমতিতে এখন জোয়ার ভাটা হয়, কোন কোন বছর সুদিনে সাগরের লোনা পানিও আসে। খালটি একেবারে নতুন না হলেও, জোয়ার ভাটার ইতিহাস কিন্তু সাড়ে চার দশকের বেশী নয়।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক দশকেরও কম বয়সী শিশু বাংলাদেশের অবস্থা খুব বেশী ভাল ছিল না। নারী-শিশুসহ দেশের বহু মানুষ অপুষ্টিতে ভোগছিল। খাদ্য ঘাটতি লেগেইছিল। বহু জমি ছিল অনাবাদী। জমি বা বিলগুলোতে বছরে চাষাবাদ হত দু’বার। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম স্বপ্ন বুনছিলেন- পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করতে। কেবল তাই নয়, সকল মৌলিক অধিকার পূরণ করতে চেয়েছিলেন বগুড়ায় জন্মনেয়া “কমল” অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ও প্রাক্তন এ সেনাপ্রধান। প্রণয়ন করেন খালখননসহ ঊনিশ দফা কর্মসূচি। স্বপ্ন ও পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি শুরু করেন সারাদেশে খালখনন ও পুনখনন।
তারই ধারাবাহিকতায় এ বরুমতিও খনন করেন। শ্রমিকদের কাতারে গিয়ে কোদাল দিয়ে “বিসমিল্লাহ” করেন নির্ভীক রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। কাজ শুরু করে তিনি অতি সাধারণ নাগরিকের মত বসে পড়েন খালটির পূর্বপাড়ে। স্মৃতিধন্য এ স্থানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পরবর্তীতে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি আসন বিশিষ্ট একটি পাকা বেঞ্চ। যেখানে তিনজন করে বিপরীতমুখী হয়ে ছয়জন লোক বসতে পারত। পরিশ্রান্ত কৃষকরাও খানিকটা এখানে বিশ্রাম নিতেন। বহু পথিক এখানে বসে ছবি ধারণ করে রেখেছেন। এখানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বসার ছবিটি ইলেকট্রো থার্টি ফাইভ ক্যামেরায় ধারন করেছিল সরকারি এজেন্সি “পিআইডি”৷ ইতিহাসের বিখ্যাত সেই ছবিটি দিয়ে দেশ বিদেশের হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ধরে ক্যালেন্ডার ছাপিয়েছিল।
হারলার বরুমতির পাড়, জোয়ারা মাদরাসা, গাছবাড়ীয়া স্কুলের বড়মাঠ, বরমা স্কুল মাঠসহ শিশুথানা চন্দনাইশে প্রেসিডেন্ট জিয়া এসেছিলেন বেশ কয়েকবার। খানখননের ফসল হিসেবে খালটিতে এসেছে পর্যাপ্ত পানি। এলাকাবাসী পেয়েছে দুই মৌসুমের স্থলে তিন মৌসুম চাষাবাদের সুযোগ। বেড়েছে খাদ্য উৎপাদন। কমেছে খাদ্য ঘাটতি। শহীদ জিয়া পেয়েছেন গণমানুষের দোয়া, হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়। অখ্যাত খালটি হয়েছে বিখ্যাত।
অনেক বছর পর, গত কয়েক বছর আগে স্মৃতিধন্য সেই বৈঠকখানাটি কোন এক অজানা কারণে দেখা যায় “ভাঙা”। পরে “নাই” হয়ে যায়। মুছে যায় চিহ্ন। কিন্তু বীর জনতার হৃদয়ের মনিকোঠায় অম্লান হয়ে থাকে গৌরবের সেই স্মৃতি। জিয়া সেনাদের প্রচেষ্টায় একই স্থানে আবার জেগে উঠেছে সেই সেরা বৈঠকখানা৷ স্মৃতিময় সেই স্থানটি ৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার বাদে জুমা তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। আবেগের সেই স্থান মানবগর্জনে শ্লোগানে কেঁপে উঠে। প্রচারবিহীন ছোট আয়োজনে মানুষের ঢল পড়ে নামে৷
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক বৈঠকখানাটি ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পুননির্মাণের পর উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, মজলুম জননেতা আলহাজ্ব ডা. শাহাদাত হোসেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য মো. ইখতিয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব মো. ইদ্রিস মিয়া, বিএনপির স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্মসম্পাদক সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. জসিম উদ্দিন, খন্দকার এম হেলাল উদ্দিন সিআইপি, চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম, আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদ- কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. শফিকুল ইসলাম রাহী, বেসরকারি কারা পরিদর্শক মো৷ নাসির উদ্দীন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মনজুর আলম তালুকদার, চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. বাহাউদ্দীন চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম খান, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলামসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর