অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী বোঝেই না মশা, মাছি, ছারপোকা ইত্যাদি পোকামাকড়ের মাধ্যমে কী ধরনের রোগ-জীবাণু ছড়ায়। মনে রাখতে হবে, মানুষের শরীর ক্ষত করে অথবা রক্তশোষণ করে এমন পোকামাকড় অবশ্যই রোগের জীবাণু বহন করে এবং রোগ ছড়ায়। তাই এসব থেকে নিজেদের রক্ষায় যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। এসব বাহকের উৎপত্তিস্থল যেমন ধ্বংস করতে হবে, তেমনি ধ্বংস করতে হবে ওইসব জীবাণু বা অণুজীবের উৎপত্তিস্থলও। আর এ জন্যই সমন্বয়ের বিকল্প নেই। সবার জন্য ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ নিশ্চিত করতে হলে পাবলিক স্যানিটেশন ও হাইজেন যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের, বিশেষ করে খাবারের উৎপত্তি, বিপণন, প্রস্তুতকরণ ও সরবরাহের প্রক্রিয়া সংক্রমণমুক্ত রাখতে হবে। যেমন: মাছ, মাংস, সবজি ইত্যাদি আমাদের নিত্যপণ্যের অতিজরুরি তালিকায় রয়েছে। এখন দেখতে হবে এ পণ্যগুলোর উৎপাদন কোন প্রক্রিয়ায় হচ্ছে, অর্থাৎ কী কী উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে এ মাছ উৎপাদনে, এর সঙ্গে কোনো অণুজীব পরিবাহিত হচ্ছে কি না; একইভাবে মাছ বা মুরগি যখন বাজারে কাটা হয় তখন যথাযথ নিয়ম মেনে, স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তা করা হচ্ছে কিনা; মাছ, গরুর মাংস, মুরগির মাংস ইত্যাদি কাটার পর যেসব পোকামাকড় ও অণুজীবের আক্রমণ হতে পারে, তা থেকে নিরাপদ করার জন্য কোনো স্বীকৃত পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে কি না ইত্যাদি। খাবার তখনই নিরাপদ হবে, যখন তা সব ধরনের জীবাণুর আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকবে। এ খাবার তৈরির পর তা কোন পরিবেশে রাখা হচ্ছে ও পরিবেশন করা হচ্ছে, তা স্বাস্থ্যবিধির মধ্য দিয়ে হচ্ছে কি না, তাও দেখতে হবে।
দেশে আমরা হরহামেশা লক্ষ করি-মাছ, মাংস কাটার ক্ষেত্রে এবং কাটার পর তেমন কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। আবার যে পরিবেশে মাংস ঝুলিয়ে রাখা হয়, তাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিভিন্ন স্থানে ময়লা ব্যবস্থাপনার যে বেহাল দশা এবং বদ্ধ পানির যে ভয়ংকর দূষিত অবস্থা-তা শুধু মশা, মাছি ও জীবাণুরই উৎপত্তিস্থল নয়, পরিবেশ দূষণেরও অন্যতম উপাদান। এ পরিস্থিতিতে এনটিডির যেসব রোগ রয়েছে, তার নিরাময় বিরাট বাধার সম্মুখীন। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত রোডম্যাপ অনুযায়ী এসব বাধা সফলভাবে অতিক্রম করতে হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশেও প্রচলিত পদ্ধতিতে মশা দমনের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশ জৈব উপাদান ব্যবহারে সফল হয়েছে, সেসব দেশের কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।
এ গ্লোবাল ভিলেজের একটি প্রণিধানযোগ্য দেশ হিসাবে আমরা সব উন্নয়নের সূচকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাহলে কেন অতিক্ষুদ্র একটি পতঙ্গ এডিস মশার ভয়াল গ্রাস থেকে নিজেদের রক্ষা করে এসডিজি অর্জনে সক্ষম হব না? আমাদের দেশে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে যেমন-কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, সিভিল অ্যাভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। তাহলে জনস্বাস্থ্যের জন্য পাবলিক হেলথ বিশ্ববিদ্যালয় নয় কেন? পাবলিক হেলথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সব ধরনের জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও জুতসই সমাধান দ্রুত সম্ভব হবে। যেসব মানুষ এনটিডি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মানবতার প্যারামিটারে নিজেদের অত্যন্ত অসহায় মনে করছে, মনে মনে ভাবছে প্রকৃতি যা করবে তা-ই হবে, তাদের এ বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে মুক্তির পথ উন্মোচিত হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় পাবলিক হেলথ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, উন্নত মানের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা এবং বিজ্ঞ গবেষক তৈরির মাধ্যমে দেশকে এনটিডির অভিশাপমুক্ত করে সুস্থ, সাবলীল, রোগমুক্ত ও কর্মচঞ্চল জাতি হিসাবে আমরা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারি।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর
লেখক: ড. মো. গোলাম ছারোয়ার : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কীটতত্ত্ব বিভাগ, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)।
Leave a Reply