আজ ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছবি: তক্ষক সংক্রান্ত প্রতারক চক্রের সদস্য

রক্ষক যখন ভক্ষক প্রলোভনের উছিলা তক্ষক


অনলাইন ডেস্কঃ শত কোটি টাকার তক্ষক বান্দরবানে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে এমন প্রলোভন দেখিয়ে লুটতরাজ চালাচ্ছে একটি অসাধু চক্র। সম্প্রতি ঢাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন ও মো. আক্তার হোসেনের কাছ থেকে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বান্দরবানের খুখি চিং গ্রুপের সদস্য অংসাহ্লা মারমা ও মংচায় মারমা। এ চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে এবং বান্দরবান সদর মডেল থানার এএসআই বিপ্লব হোসেন, বালাঘাটা পুলিশ লাইনের কর্মরত মো. সবুজ আহমেদ (বিপি: ৯৭১৮২২১৯৬৩।ক২০৬১)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌনে দশ ইঞ্চির তক্ষক বান্দরবানে পাওয়া যাচ্ছে এবং সেটির বৈদিশিক বাজার মূল্য শত কোটি টাকা এমন প্রলোভন দেখিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করে রোয়াংছড়ি উপজেলার কচ্চপতলীর স্থায়ী বাসিন্দা মংচায়। সে বোমাসন্ত্রাসের সাথেও জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৫ নভেম্বর তার নিজ পকেটে থাকা ককটেল বিস্ফোরণে সে নিজেই আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন। তিনি বান্দরবান বালাঘাটা পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল সবুজ গংদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন তক্ষক পাচার ও প্রতারক সিন্ডিকেট।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, শত কোটি টাকা মুনাফার লোভ দেখিয়ে ক্রেতা খুঁজে বেড়ায় মংচায় মারমা ও বান্দরবান পুলিশের একটি চক্রের সোর্স। কেউ আকৃষ্ট হলে তাকে কখনো হোটেল, কখনও রিসোর্ট আবার কখনও পুলিশ লাইন কিংবা ডিসি অফিসের আশপাশে তক্ষক হস্তান্তর করা হবে বলে জানায়। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, নির্দিষ্ট সময়ে বের করা হয় এই তক্ষক। এরপর সেটি ক্রেতার হাতে দিয়ে ভিডিও ধারণ করা শুরু হয়। সবশেষে ক্রেতার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে বা লুট করে নেওয়া হয় টাকা। গত ২৬ অক্টোবর বান্দরবান মেঘলা সংলগ্ন মেঘালয় রিসোর্টে এভাবে চার লাখ টাকা খুইয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, ‘সবুজ তার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তাকে তক্ষক নিয়ে ব্যবসার লোভ দেখিয়েছিলো। বান্দরবান পর্যটন এলাকায় রিসোর্টে রুমও বুকিং দিয়েছিলেন সবুজ। জামাল উদ্দিন তার কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে ওই রিসোর্টে হাজির হলে সবুজ পরিচয় করিয়ে দেয় তার পাহাড়ি বন্ধু মংচায় মারমার সাথে। ওইসময় আকস্মিক ওই রুমে প্রবেশ করে এএসআই বিপ্লবের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে ৮, ১০ সদস্যের সশস্ত্র পুলিশ টিম।

আরও পড়ুন বন্যপ্রাণী নাকী আগ্রাসী মানুষ

এসময় ধারণকৃত ভিডিওর ভয় দেখিয়ে শুরু হয় পুলিশি জেরা। পুলিশ ও মামলার ভয়ে ব্যবসায়ী জামাল ও তার সঙ্গীরা চার লাখ টাকা পুলিশের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়।

ঘটনাস্থল থেকে তৎক্ষণাৎ পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করলে ওইসময় এ এস আই বিপ্লব বলেছেন, ‘ওই ডিআইজি ভুয়া। তার টেলিফোনে কোনো কাজ হবে না, ওসি সাহেব সবকিছু জানে।’

পুলিশ ও বান্দবানের এলাকাবাসীরা বলছেন, বান্দরবান এলাকায় তক্ষক নিয়ে ব্যবসা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। দৈর্ঘ্য এবং ওজনের উপর ভিত্তি করে তক্ষকের দাম নির্ধারণ করা হয়। তক্ষক কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারাও আসেন। এসব ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিলেও পুলিশী ঝামেলা ও মামলার ভয়ে প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে চান না।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বান্দরবান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জলিল চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ আগে এ থানায় জয়েন করেছি। যে ক্রাইমটার কথা আমাকে জানালেন সে ধরনের খবর যদি ভবিষ্যতে আবার পান কিংবা সেই চক্রের সাথে আবারও যদি কোনো প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করতে পারেন তাহলে চক্রটির বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর