স্পোর্টস ডেস্ক
রোমাঞ্চের চোরাবালিতে হাবুডুবু খেলেন প্রেমাদাসার দর্শকরা। বারবার বদলে গেলো ম্যাচের মোড়। কখনো কুশল মেন্ডিস সহজই করে ফেললেন ম্যাচটা, কখনো আশা জাগালেন আশালাঙ্কা। হুট করেই দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে লড়াইয়ে আনলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। নানা নাটকীয়তার পর ম্যাচে জয়ী হয়ে থাকলো শ্রীলঙ্কা। বৃহস্পতিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টির কারণে ৪২ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ২৫২ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। বৃষ্টি আইনে সমান রানের লক্ষ্য ছিল শ্রীলঙ্কারও। শেষ বলে গিয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচে জয় পায় লঙ্কানরা। এতে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর একই ভেন্যুতে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে তারা।
রান তাড়ায় নেমে মারমুখী শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। তাদের অবশ্য উইকেটও হারাতে হয় দ্রুতই। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে ৪ চারে ৮ বলে ১৭ রান করে কুশল পেরেরা হয়ে যান রান আউট, দলের রান তখন ২০। তারপর আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার সঙ্গী হন কুশল মেন্ডিস। দুজনের ৫৭ রানের জুটি ভাঙেন শাদাব খান।
এ স্পিনারের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ৪৪ বলে ২৯ রান করে ফেরেন নিশাঙ্কা। তবে কুশল একপ্রান্ত আগলে থাকেন, তার সঙ্গী হন সাদিরা সামারাবিক্রমা। তারা দুজন মিলে রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন। দুজনের জুটি যখন ঠিক একশ রানে পৌঁছায়, তখনই আউট হন সামারাবিক্রমা।
৪ চারে ৫১ বলে ৪৮ রান করে সামারাবিক্রমা স্টাম্পিং হন ইফতেখার আহমেদের বলে। এরপর চারিথ আশালাঙ্কাকে নিয়ে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন মেন্ডিস। কিন্তু এই ব্যাটার এশিয়া কাপে দ্বিতীয়বারের মতো ‘নার্ভাস নাইন্টিজে’ আটকা পড়েন। ইফতেখারের বল লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাটের উপরের অংশে লাগে মেন্ডিসের, দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মোহাম্মদ হারিস। ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৮৭ বলে ৯১ রানে আউট হয়ে যান।
এরপর ৪ বলে ২ রান করে অধিনায়ক দাসুন শানাকা আউট হলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। খেলা পুরো জমিয়ে তোলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। শেষের আগের ওভারে টানা দুই বলে তিনি ফেরান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও চারিথ আশালাঙ্কাকে।
শেষ ওভারে ৮ রান দরকার হয় শ্রীলঙ্কার, স্ট্রাইকে ছিলেন না সেট ব্যাটার আশালাঙ্কাও। প্রথম বলে এক রান নেওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে কোনো রান আসেনি। তৃতীয় বলে ফের এক রান নেন আশালাঙ্কা, চলে যান নন স্ট্রাইক প্রান্তে। পরের বলে দৌড়ে তিনি স্ট্রাইক প্রান্তে চলে যান, রান আউট হতে হয় সঙ্গী প্রামোদ মাদুশানকে।
তখন পুরো দায়িত্বটাই এসে পড়ে আশালাঙ্কার কাঁধে। শেষ দুই বলে জয়ের জন্য দরকার ছয় রান। জামান খানের করা পঞ্চম বল কিপার ও স্লিপের মাঝখান দিয়ে হয়ে যায় বাউন্ডারি। শেষ বলে দরকার দুই রান। প্যাডে আসা বল ডিপ স্কয়ার লেগে ঠেলে দিতে দুই রান নেন আশালাঙ্কা। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো প্রেমাদাসা। ১১তমবারের মতো ফাইনালে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ফাখার জামানকে হারায় পাকিস্তান। ১১ বল থেকে ৪ রান করে প্রামোদ মাদুশানের বলে বোল্ড হন এই উদ্বোধনী ব্যাটার। এরপর আব্দুল্লাহ শফিকের সঙ্গে ৬৪ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক বাবর আজম। ৩৫ বলে ২৯ রান করে দুনিথ ওয়েল্লালাগের বলে স্টাম্পিং হন তিনি।
তার বিদায়ের পর আর জুটি দাঁড়াচ্ছিল না পাকিস্তানের। মোহাম্মদ হারিস, মোহাম্মদ নাওয়াজরা ফেরেন অল্পতেই। হাফ সেঞ্চুরি করে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি আব্দুল্লাহও। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৬৯ বলে ৫২ রান করে পাথিরানার বলে আউট হন তিনি। তবে শেষদিকে গিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতেখার আহমেদ।
তাদের শতরান পেরোনো জুটিতেই পাকিস্তানের রানটা হয় বেশ বড়। মাঝে একবার থিকসেনার বলে আউট ছিলেন ইফতেখার, কিন্তু আম্পায়ার আউট না দেওয়ার পর রিভিউ নেননি লঙ্কান অধিনায়ক। ম্যাচ শেষ হওয়ার ৯ বল আগে পাথিরানার ওভারে শানাকার হাতে ক্যাচ দেন তিনি, এর আগে ৪ ছক্কা ও ২ চারে করেন ৪০ বলে ৪৭ রান।
শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তান ১০২ রান তুলেছে, অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৭৩ বলে ৮৬ রান করেন তিনি। শ্রীলঙ্কার হয়ে ৮ ওভারে ৬৫ রান খরচ করে ৩ উইকেট নেন পাথিরানা। মাদুসানা দুই ও থিকসেনা, ওয়েল্লালগে নেন একটি করে উইকেট।
Leave a Reply