অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশের বে-টার্মিনাল বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট-বন্দর সড়ক সংলগ্ন ডিসি পার্কে জেলা প্রশাসন আয়োজিত মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য গত ১৫ বছরে বহু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে নদীর তলদেশ দিয়ে প্রথম টানেল হয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে। এখানে বে-টার্মিনাল নির্মিত হতে যাচ্ছে। সেটি নির্মিত হলে এটি আরেকটি চট্টগ্রাম বন্দর হবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরের সব মিলিয়ে দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৬ কিলোমিটার। আর বে-টার্মিনাল হবে ১০ কিলোমিটার। বে-টার্মিনালের ড্রাফট হবে ১২ মিটার। সেটির কার্যক্রম শিগগির শুরু হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। এরপর এখানে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে সেটি অভাবনীয়।
তিনি বলেন, আমি ভারত সফর করে এসেছি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও বাণিজ্য মন্ত্রীর সাথেও আমার এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের উত্তর-পূর্ব প্রদেশগুলো যাতে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তাদের মাল আনা-নেয়া করতে পারে, সেটির জন্য তারা উদগ্রীব হয়ে বসে আছে। একইভাবে আমরাও উদগ্রীব হয়ে বসে আছি। আশা করি সেটিও খুব দ্রুত শুরু হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ফৌজদার হাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর লিঙ্ক রোড ফোরলেন করা হবে। কারণ যানবাহন বেড়ে যাচ্ছে। এই রাস্তার সাথে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সংযোগ ঘটানো হবে। যখন টানেলের পূর্ণ ব্যবহার হবে, তখন অনেক বেশি যানবাহন থাকবে। যখন বে-টার্মিনাল নির্মিত হবে তখন আরো বাড়বে।
মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সংঘাতের যে প্রভাব বাংলাদেশে পড়ছে, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে সেটি মোকাবেলা করতে পারছে না বলে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমরা রাখি না। যেটি ঘটছে সেটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোল। সেখানে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সাথে আরাকান বাহিনীসহ অন্যান্যদের সংঘাত চলছে এবং সে সংঘাতের কারণে মাঝেমধ্যে দুই একটি গোলা আমাদের দেশে এসে পড়েছে এবং দুজন মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে, এটা সঠিক। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে তাদের সীমান্ত বাহিনী ও সেনাবাহিনীসহ তাদের পরিবারের বেশ কিছু সদস্য আমাদের দেশে পালিয়ে এসেছে। তাদেরকে ফেরত নিয়ে যাবার জন্য মিয়ানমার ইতিমধ্যে সম্মতি প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমাদের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হয়েছে। কোন্ প্রক্রিয়ায় তাদেরকে ফেরত নিয়ে যাবে সেটি চূড়ান্ত করার বিষয়, এখানে পররাষ্ট্র নীতির কোনো বিষয় নাই।
শুধু আমাদের দেশে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে তা নয়, ভারতেও ডুকেছে কয়েকশ লোক। তাদেরকেও তারা ফেরত নিয়ে গেছে - বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরাকান আর্মি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান বলেন, আপনারা জানেন, ইতিমধ্যে আমি ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছি। ন্যাম সামিটে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা হয়েছে, সেখানে আমি তাকে বলেছি যে অন্তত প্রত্যাবাসনটা শুরু করার জন্য। তার কথাবার্তায় আমার যেটি মনে হয়েছে, মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে একমত। কিন্তু তাদের এখনকার অভ্যন্তরীণ যে সংকটগুলো চলছে, সেই কারণে এই মুহূর্তে তারা পারছে না।
আরও পড়ুন মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দিল্লির সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটল আউসান জুনিয়র, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম ও ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ড. রাজীব রঞ্জন। স্বাগত বক্তব্য দেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম।