আজ ২০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রে সক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদন


# প্রথম দুটি ইউনিটের সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে
# ৩ নম্বর ইউনিট চলছে পুরোনো যন্ত্রপাতিতে
# ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটের জেনারেটর বসানোর স্থানে ধরেছে ফাটল

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাপ্তাইয়ে সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে টানা বৃষ্টির কারণে হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খানিকটা বেড়েছে। উৎপাদন বাড়াতে ইতোমধ্যে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটই চালু করা হয়েছে।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে ৯০ দশমিক ৬০ মিনস সি লেভেল (এমএসএল) পানি থাকার কথা থাকলেও হ্রদে পানি রয়েছে ৮২ দশমিক ৯০ এমএসএল। সে হিসেবে স্বাভাবিকের (৮২ দশমিক ৮০ এমএসএল) চেয়েও কাপ্তাই হ্রদে পানি বেশি আছে। হ্রদে পানির ধারণ সক্ষমতা রয়েছে ১০৯ এমএসএল।
কন্ট্রোল রুম সূত্র আরো জানিয়েছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে সব ইউনিট মিলে উৎপাদন হচ্ছে ১৩৫ মেগাওয়াট। রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১ নম্বর ইউনিটে ৩৩ মেগাওয়াট, ২ নম্বর ইউনিটে ৩২ মেগাওয়াট, ৩ নম্বর ইউনিটে ২৬ মেগাওয়াট, ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটে ২২ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, ‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ছে। হ্রদে পানি আরো বাড়তে থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও আরো বাড়বে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৬০৬ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে এই কেন্দ্রটি। প্রথম দুটি ইউনিট ৪০ মেগাওয়াট সক্ষমতায় স্থাপন করা হলেও, সর্বোচ্চ ৪৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করা যায়। পরের তিনটি ইউনিটের প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার। কিন্তু, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এরমধ্যেই তৃতীয় ইউনিটের উৎপাদন ৩৯ মেগাওয়াটে এবং চতুর্থ ও পঞ্চম ইউনিটের উৎপাদন ৩৫ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকৌশলীরা জানান, প্রতিটি টারবাইনের মেয়াদ ১০ বছর থাকে। এরপর তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মেরামত (ওভারহল) করতে হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১ নম্বর ইউনিট, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ২ নম্বর ইউনিট ওভারহল করা হয়। কারণে ইউনিট দুটির সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাবে। এছাড়া, ৩ নম্বর ইউনিট ২০১২ সালের ডিসেম্বরে, ৪ নম্বরটি ২০১০ সানের জুনে এবং ৫ নম্বর ইউনিট ২০১১ সালের এপ্রিলে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মেরামত করা হয়েছিল। এ তিন ইউনিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এজন্য সক্ষমতা দিন দিন কমে আসছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যান্ত্রিক শাখার তথ্যমতে, ৩ নম্বর ইউনিটের টারবাইনসহ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি পুরাতন হওয়ার ফলে চালুর সময়ে শক্তি সঞ্চয় করতে বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া, ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটের জেনারেটর বসানোর স্থানে ফাটল ধরেছে। এজন্য ইউনিট দুটি বাধাহীন চালু রাখা যাচ্ছে না।

৪ হাজার ২৫০ বর্গমাইল আয়তনের ক্যাচমেন্ট এরিয়া নিয়ে গড়ে তোলা এই হ্রদই বিদ্যুৎকেন্দ্রের শক্তি উৎপাদনের জলাধার হিসেবে কাজ করে। বৃষ্টির পাশাপাশি লেকের উপরিভাগে অবস্থিত ভারতের লুসাই পাহাড়ের ঢল ও সেখানে বৃষ্টিপাত হলেও হ্রদে পানি প্রবাহিত হয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর