

হযরত মাওলানা শাহছুফি আলহাজ্ব ছৈয়দ শরীফুল আনোয়ার হাফেজনগরী হুজুর (কা.ছি.আ)- চট্টগ্রাম চন্দনাইশ উপজেলার সুপরিচিত দরবার হাফেজনগর দরবার শরীফের প্রসিদ্ধ বুুজুর্গ। তিনি ছিলেন আধ্যাত্বিক সাধক ও হাফেজনগর দরবারের খলিফা। চন্দনাইশে মাইজভান্ডারী ত্বরিকা প্রচার- প্রসারে অশেষ দায়িত্ব পালন করেন।
গাউছিয়া রহমান মঞ্জিলের মোনতাজেমে দরবার ও মাসিক “বরুমতির বাঁকে” সাময়িকীর প্রকাশক পীরজাদা মাওলানা ছৈয়দ মিনহাজুর রহমান মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আল-হাছানী হাফেজনগরী এমএম, এমএসএস (ম.আ)-এর দেয়া তথ্যমতে জানা যায়- হুজুরের (শাহ ছুফি ছৈয়দ শরীফুল আনোয়ার হাফেজনগরীর) জন্ম ১৯৬২ সালের ৫ এপ্রিল। তিনি তাজু-উল আশেক্বীন, আসহাবে বাবা ভান্ডারী, আয়নায়ে হাফেজবাবা কেবলা, ফানাফিল্লাহ, বাক্বাবিল্লাহ হযরত মাওলানা শাহছুফি ছৈয়দ ফজলুল হক (কা:ছি:আ:) প্রকাশ মেজমিয়া-এর মেজপুত্র এবং হাফেজনগর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা, আশরাফ- উল-আউলিয়া, দরমদহে ফখরে জমা, মাজহারে নূরে খোদা, পেশওয়ায়ে ছালেকা, মাদ্বীনে কাশফ ওয়া কারামত, মাম্বায়ে ফুয়ুযাত, মাসদারে কামেলাত, গাউছে জামান, হযরত আলহাজ্ব মাওলানা শাহছুফি হাফেজ ছৈয়দ ফজলুর রহমান (কাঃছিঃআঃ) প্রকাশ হাফেজ বাবা-এর দৌহিত্র।
জানা যায়, বিগত বহুবছর ধরে এই হাফেজনগর দরবার শরীফে এসে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত তাঁদের নিজেদের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষুধা আর তৃষ্ণা নিবারণ করে চলছে। এই দরবার আজ নারী পুরুষ ও জাতি-ধর্ম- বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে অগণিত ভক্তের এক মহামিলন কেন্দ্র ও এক মহাতীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিনি এই হাফেজনগর দরবারের শরীফের মাধ্যমে সুন্নিয়ত ও মাইজভান্ডারী ত্বরিকা প্রচার-প্রসারে অশেষ ভূমিকা রেখেছেন। জীবদ্দশায় তাঁর বহু কারামতি ঘটনা ছিল।
শৈশবে তিনি মাতা-পিতার নিকট জীবনের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে জাফরাবাদ সিনিয়র মাদরাসা, পটিয়া শাহচান্দ আউলিয়া আলিয়া মাদরাসা ও চট্টগ্রাম ষোলশহরস্থ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসায় আনুষ্ঠানিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেন। সর্বশেষ মাদরাসা বোর্ড থেকে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলা, আরবী, উর্দু, ফার্সি, ইংরেজি ভাষায় সমান দক্ষ ছিলেন।
তিনি ছোটকাল থেকে মেধাবী, বিনয়ী ও দায়িত্বপরায়ন ছিলেন। ধর্মচর্চা ও অনুশাসন মেনে চলায় ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি নামাজ, রোজা ইত্যাদি খেলাপ বা কাজা করতেন না। তিনি তাঁর সুযোগ্য পিতা হযরত মাওলানা শাহছুফি ছৈয়দ ফজলুল হক মেজমিয়া (কা:ছি:আ:)-এর নিকট ১৫ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৭৭ সালে বায়আত হন। পরে ১৯৮৬ সালে পিতার নিকট থেকে খেলাফত গ্রহণ করেন।
অভিভাবক বা পারিবারিক সিদ্ধান্তে তিনি (শাহ ছুফি ছৈয়দ শরীফুল আনোয়ার হাফেজনগরী) চট্টগ্রাম বাহির সিগন্যালস্থ ঐতিহ্যবাহী আল আমিন বারিয়া দরবারের পীর হযরত শাহছুফি আল্লামা ছৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল বারী (রহ.)এর কন্যা ছৈয়দা ইয়াসমিন আখতার বারীর সাথে ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রচারবিমুখ অলি হিসেবে তাঁর যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে।
তাঁর একমাত্র পুত্র পীরজাদা মাওলানা ছৈয়দ মিনহাজুর রহমান মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আল হাছানী হাফেজনগরী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড আলিম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কামিল এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক- সন্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পুত্র মিনহাজুর রহমান দ্বীন ও শিক্ষার প্রচার-প্রসারে অবিরাম কাজ করছেন, দরবারের দায়িত্ব পালন ছাড়াও ইতিহাস-ঐতিহ্য, উন্নয়ন ও গবেষণা বিষয়ক সাময়িকী মাসিক “বরুমতির বাঁকে” প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বরেণ্য এ অলিয়ে কামেল হযরত মাওলানা শাহছুফি আলহাজ্ব ছৈয়দ শরীফুল আনোয়ার হাফেজনগরী (কা.ছি.আ) স্ত্রী, সন্তান, অসংখ্য ভক্ত, মুরিদকে শোক সাগরে ভাসিয়ে মহিমান্বিত দিন ১২ রবিউল আউয়াল, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ শনিবার সকালে ওফাত গ্রহণ করেন। এরপর দিন ৭ সেপ্টেম্বর রোববার দ্বিতীয় যানাজা শেষে হাফেজনগর দরবারে আলিয়ায় দাফন করা হয়। যানাজায় দেশের বিভিন্ন দরবার শরীফের পীর-শাহজাদা, বহু উলামা- মশায়েখসহ অসংখ্য মুসল্লী অংশ গ্রহণ করেন। এতে মুসল্লীদের উপচে পড়া ভীড় জমে। যানাজাগাহে কোথাও তীল ধারণের ঠাই ছিল না। বৃহৎ এ যানাজায় ইমামতি করেন মরহুম হুজুরের একমাত্র সুযোগ্য পুত্র পীরজাদা মাওলানা ছৈয়দ মিনহাজুর রহমান মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আল-হাছানী হাফেজনগরী এমএম- এমএসএস (ম.আ)।
