আজ ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কবরে থেকেও মামলার আসামি সাবেক কাউন্সিলর মিন্টু


চাটগাঁর সংবাদ ডেস্ক: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর চট্টগ্রামের নিউমার্কেটে গোলাগুলির ঘটনায় ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলা দায়ের করেছেন এক গুলিবিদ্ধ ছাত্র। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৮২ জনকে আসামি করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর, ব্যবসায়ী, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা, এমনকি ১৪ জন সাবেক নারী কাউন্সিলরও।

তবে চাঞ্চল্যকর বিষয়— মামলায় আসামির তালিকায় আছে একজন মৃত ব্যক্তির নাম। যিনি মারা গেছেন আরও চার বছর আগে। বাদীর দাবি— ‘নিজস্ব সোর্স ও যাচাই-বাছাই করে আসামির তালিকা করেছেন। হয়তো কোনো কারণে মিস্টেক হয়েছে।’

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে এই নালিশী মামলার আবেদন করেন চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্সেস অফ হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র এ কে এম নুরুল্লাহ। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানার বগাদিয়া বিন্নাগাঁও গ্রামের মো. রতন মিয়ার ছেলে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাসনিম আক্তার নিশাত সিভয়েস২৪’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ একজন ছাত্র বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ১৮২ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো শাখাকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের চট্টগ্রামে এনে ৩৬ দিনব্যাপী পুলিশ ও ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে, ‘শনাক্তকরণ সহজ করতে’ তারা মোবাইল সিম নিজ এলাকায় রেখে চট্টগ্রামে এসেছিল।

বাদী আরও দাবি করেন— চিকিৎসা গ্রহণ এবং ‘মামলায় নিরীহ, নিরপরাধী লোক যেন অন্তর্ভুক্ত না হয়’ তাই মামলা রুজুতে কালক্ষেপণ হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক আসামির নাম বিশ্বস্ত সূত্র এবং বাদী নিজে যাচাই করেছেন।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন— ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাবেক সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম, সাবেক চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, রেজাউল করিম, শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা সাবেক মেজর তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জেনারেল মুজিবুর রহমান, সাবেক সিইসি নুরুল হুদা, কাজী হাবিবুল আউয়াল, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, চবকের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম প্রমুখ।

সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে— নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, মাহবুবুর রহমান রুহেল, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আবদুর রহমান বদি, দিদারুল আলম, আশেক উল্ল্যাহ রফিক, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাইমুম সরওয়ার কমল, এসএম আল মামুন, এম এ লতিফ, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী, ফজলে করিম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে।

মৃত কাউন্সিলরের নামও আসামির তালিকায়!

মামলায় চসিকের সাবেক কাউন্সিলরদের মধ্যে ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। তিনি ২০২১ সালের ১৮ মার্চ মারা যান। তবে মামলায় তাকে ১৫০ নম্বর আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সাবেক কাউন্সিলরদের মধ্যে আরও আসামি রয়েছেন— পুলক খাস্তগীর, হাজি নুরুল হক, মোরশেদ আলী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, জহরলাল হাজারী, আতাউল্লাহ চৌধুরী, গোলাম মো. জোবায়ের, নজরুল বাহাদুর, নাজমুল হক ডিউক, শফিউল আজিম, নুরুল আমীন মামুন, হোসেন হিরণ, আব্দুর রহমান, আবুল হাসনাত বেলাল, এম আশরাফুল আলম, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, শৈবাল দাস সুমন, হাসান মাহমুদ হাসনী, নুরুল আলম, হারুনুর রশীদ, শহীদুল আলম, গিয়াস উদ্দিন ও মোরশেদ আলম।

এছাড়াও গত বছরের ৪ আগস্ট নগরের কোতোয়ালী থানায় দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পরিদর্শক (তদন্ত), সকল উপ-পরিদর্শক, সহকারী উপ-পরিদর্শককসহ ৩০ থেকে ৪০ জন অজ্ঞাত পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বাদী নিজেকে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় যোদ্ধা’ উল্লেখ করে মামলার আবেদনে বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট সকাল পৌনে ১২টার দিকে নগরের নিউমার্কেট এলাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলন করছিলেন। ওইদিন শেখ হাসিনার আদেশে বিপ্লব বড়ুয়া, ওবায়দুল কাদের, বিপ্লব পার্থ, ড. হাসান মাহমুদ, নেজাম উদ্দিন নদভী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে পুলিশ-আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দেশী-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলি চালায়।

সেসময় তিনিসহ ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। অন্য আন্দোলনকারীরা তাকে ধরাধরি করে দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওইদিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাদীর দুই পায়ের ভেতর থেকে তিনটি রাবার বুলেট এবং ১৩টি লিথ্যাল বুলেট বের করে। এখনও তার শরীরে বুলেট বিদ্ধ রয়েছে, যা চিকিৎসকরা অপসারণ করতে পারেনি।

দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের চট্টগ্রাম আনা হয়েছিল জানিয়ে বাদী এজাহারে আরও উল্লেখ করেছেন, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে চট্টগ্রামে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। মোবাইল সিম সঙ্গে থাকলে শনাক্তকরণ সহজ হবে বিধায় তারা মোবাইল সিম নিজ এলাকায় রেখে এসেছিল।

জানতে চাইলে বাদী এ কে এম নুরুল্লাহ বলেন, ‘গত ৮ আগস্ট মামলা করতে নগরের কোতোয়ালী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে, তাই আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আমি সুস্থ হয়েছি ঘটনার প্রায় চারমাস পর। এরপর দুই মাস সময় গিয়েছে একা একা দৌড়ঝাঁপ করতে করতে। আর কিছুদিন সময় নিয়েছি মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে; যে তারা প্রকৃতপক্ষে অপরাধ করেছে কি-না।’

এদিকে চার বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তি কিভাবে জুলাই আন্দোলনে হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমিতো এটি জানতাম না। আমি নিজস্ব সোর্স ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করেছিলাম। এটা আমাকে একটু চেক দিতে হবে, দেখতেছি। হয়তো কোনো কারণে মিস্টেক হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর