বাছাইকৃত খবররাজনীতিসব খবর

রাজনীতি কেন ডাস্টবিনের উপমা পেল? রুমিন ফারহানার মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রুমিন ফারহানা

বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান চিত্র নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে বলেছেন, “রাজনীতি এখন ডাস্টবিনের মতো হয়ে গেছে।”
তার এই মন্তব্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, আর তারপর থেকেই শুরু হয় নানা আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া।

রাজনীতিতে ‘নোংরামি’ ও নারীর অনাগ্রহ

রুমিন ফারহানার বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমান রাজনীতির পরিবেশ এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে, একজন শিক্ষিত, পেশাগতভাবে প্রতিষ্ঠিত ও সম্ভাবনাময় নারী সেখানে অংশ নিতে অনীহা বোধ করেন।
তার মতে, রাজনীতি এখন আর নীতি, আদর্শ বা জনগণের কল্যাণের জায়গা নয়—বরং তা পরিণত হয়েছে ‘বট আইডি, কুৎসা আর কৃত্রিম প্রোপাগান্ডার’ ময়দানে। ফলে যোগ্য নারী নেত্রীরা রাজনীতিতে আসতে চান না, আর যারা আসেন, তারাও প্রাপ্য মর্যাদা পান না।

নারী নেতৃত্বের সংকট—অভাব নাকি অবহেলা?

বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও দলীয় মনোনয়নের চিত্রও রুমিনের বক্তব্যকে আরও জোরালো করে। বিএনপি এবারের নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, যার মধ্যে নারী মাত্র ১০ জন।
এটি প্রশ্ন তোলে—নারী নেতৃত্বে কি সত্যিই যোগ্যতার অভাব আছে, নাকি এটি একটি কাঠামোগত অবহেলার ফল?
রুমিনের ভাষায়, “যোগ্য নারী কম নয়, কিন্তু তাদের প্রতি আস্থার ঘাটতি আছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, বড় বড় দলগুলো এখনও নারীনেতৃত্বের ৩৩ শতাংশ কোটা বাস্তবায়নে ব্যর্থ। অনেক সময় নারী প্রার্থিতা কেবল প্রতীকীভাবে ব্যবহার করা হয়, বাস্তব নেতৃত্বে নয়।

দলীয় রাজনীতি ও ছোট দলের সংকট

আলোচনার এক পর্যায়ে রুমিন ছোট দল ও বড় দলের সম্পর্ক নিয়েও মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বড় দলগুলো অনেক সময় ছোট দলগুলোকে নিজেদের প্রভাবের অধীনে টেনে এনে কার্যত ‘রাজতন্ত্রের’ মতো কাঠামো গড়ে তোলে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ও প্রতীকের নিয়ম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে ছোট দলগুলো আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া—বাস্তব না অতিরঞ্জন?

রুমিনের বক্তব্য প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ বলছেন, তিনি শুধু বাস্তব সত্যকেই সামনে এনেছেন; বর্তমান রাজনীতি সত্যিই হতাশার জায়গা হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কেউ মনে করছেন, এভাবে পুরো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ‘ডাস্টবিন’ বলা অতিরঞ্জিত এবং নিরুৎসাহজনক।

রাজনীতি যদি সত্যিই ‘ডাস্টবিনে’ পরিণত হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—কে এ অবস্থা তৈরি করেছে? আর কে তা পরিষ্কার করবে?
রুমিন ফারহানার মতো নেত্রীরা হয়তো প্রশ্ন তুলেছেন, কিন্তু উত্তর খুঁজে পাওয়া এখন সমগ্র জাতির দায়িত্ব। কারণ রাজনীতি যদি নোংরা হয়, তবে তার দুর্গন্ধে কেবল রাজনীতিকরা নয়—পুরো সমাজই আক্রান্ত হয়।

মনোনয়ন না পেলেও আশাবাদী রুমিন ফারহানা: ‘সব এখনো চূড়ান্ত নয়’

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে নানামুখী আলোচনা। ঘোষিত ২৩৭টি আসনের তালিকায় নেই দলের আলোচিত মুখ, সাবেক সংসদ সদস্য ও সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তবে এ নিয়ে হতাশা নয়, বরং বাস্তবতা ও দলীয় কৌশলের দিকটাই তুলে ধরেছেন তিনি।

‘মনোনয়ন অন হোল্ড, এখনো সিদ্ধান্ত বাকি’

৩ নভেম্বর (সোমবার) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে উপস্থিত হয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, তার মনোনয়ন অন হোল্ড’ অবস্থায় আছে। বিএনপির পুরনো সহযোগী দলগুলো ও নতুন সম্ভাব্য জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আসন সমঝোতা চলছে বলেই সব আসন এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
তার ভাষায়, “যেসব দল সুখে-দুঃখে আমাদের সঙ্গে থেকেছে, তাদের সঙ্গে ন্যায্য সমঝোতার ভিত্তিতেই কিছু আসন ঝুলে আছে। দল উইনেবল প্রার্থী খুঁজছে—সেই বিবেচনায় সিদ্ধান্ত হবে।”

প্রার্থী বিক্ষোভ ও দলীয় আবেগ

বিএনপির মনোনয়ন তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন এলাকায় অসন্তুষ্ট কর্মীরা বিক্ষোভে নামেন। টায়ার পুড়িয়ে প্রতিবাদ বা স্লোগান—এ ধরনের দৃশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে রুমিন বলেন, বড় দলে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক, তাই কেউ বাদ পড়লে কষ্ট পাওয়া অযৌক্তিক নয়।
তিনি বলেন, “নেতাকর্মীদের আবেগকে সম্মান জানানো উচিত। তবে এসব ক্ষোভ স্থায়ী নয়, দলীয় ঐক্যই শেষ পর্যন্ত বড় বিষয়।”

‘তালিকা প্রাথমিক, পরিবর্তনের সুযোগ আছে’

রুমিন ফারহানা জোর দিয়ে বলেন, বিএনপির ঘোষিত তালিকাটি চূড়ান্ত নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এতে পরিবর্তন আসতে পারে। কোনো আসনে প্রার্থী পরিবর্তন, নতুন প্রার্থী যুক্ত হওয়া—সবই সম্ভব। তিনি উদাহরণ হিসেবে বাগেরহাট-২ আসনের কথা তুলে ধরেন, যেখানে নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত জটিলতার কারণে মনোনয়ন স্থগিত রয়েছে।

নারী প্রার্থিতা বাড়ানোর আহ্বান

নারী প্রার্থীর স্বল্পতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রুমিন বলেন, যদি বিএনপি নারী মনোনয়ন ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে চূড়ান্ত তালিকায় আরও নারী যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে।
তার মতে, “নারী নেতৃত্বে আস্থার জায়গাটা আরও বড় হওয়া দরকার। যোগ্য নারী অনেক আছেন, শুধু সুযোগটুকু দিতে হবে।”

দলীয় নেতৃত্বে আস্থা ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত

রুমিন জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। তিনি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রার্থিতা বণ্টনের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই মনোনয়ন না পাওয়া মানেই বাদ পড়া নয়—এমন বার্তাই দিতে চেয়েছেন রুমিন।
তার কথায়, “রাজনীতি একটা চলমান প্রক্রিয়া। কে আজ তালিকায় নেই, কাল তিনি থাকতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ হলো দলের প্রতি আস্থা রাখা।”

বিএনপির চূড়ান্ত তালিকা

মনোনয়ন তালিকায় নাম না থাকলেও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন—তিনি এখনো আশাবাদী, শান্ত, এবং দলীয় কৌশলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
তার বক্তব্যে একদিকে যেমন রাজনৈতিক পরিপক্বতার ইঙ্গিত আছে, তেমনি নারী নেতৃত্বের প্রতি দায়বদ্ধতার সুরও স্পষ্ট।
নির্বাচনের আগে বিএনপির চূড়ান্ত তালিকায় কী পরিবর্তন আসে, এখন নজর সেদিকেই।

রাজনীতির খবর/ চাটগাঁর সংবাদ/ সিটিজিনিউজ/চট্টগ্রাম প্রতিদিন/চট্টগ্রাম বাংলানিউজ২৪


Related posts

অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি বিএনপির

Chatgarsangbad.net

চলছে বিএনপি-জামায়াতের ৭২ ঘণ্টার অবরোধ

Chatgarsangbad.net

চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন স্থগিত করলেন আদালত

Saddam Hossain

Leave a Comment