আজ ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

টানা ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে চন্দনাইশে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত‎, বন্যার শঙ্কা


চন্দনাইশ প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের চন্দনাইশে টানা দু’দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পুরো উপজেলার কয়েকটি পৌরসভা ও ইউনিয়নের মানুষ। এতে দুর্বিষহ জীবন পার করছে অনেকে। পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক। ভেসে গেছে সবজির ক্ষেত। পানির স্রোতে ভেসে গেছে মৎস্য প্রকল্প মাছ।

রবিবার (১ জুন) সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার চন্দনাইশ পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ড দক্ষিণ গাছবাড়িয়া সাহিত্যিক পাড়া, নয়া পাড়া, সাইর মোহাম্মদ পাড়াসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা, জোয়ারা ইউনিয়ন, কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়ন, বরকল ইউনিয়ন, বরমা ইউনিয়ন, বৈলতলী ইউনিয়ন, হাশিমপুর ইউনিয়ন, ধোপাছড়ি ইউনিয়ন, দোহাজারী পৌরসভাসহ বিভিন্ন গ্রামে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ‎ঢলের পানিতে বড় বড় গর্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক।

টানা বৃষ্টিপাতের ফলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপজেলার বড়পাড়াসহ কয়েকটি অংশে পানি উঠে গেছে। এতে যানবাহন ও মানুষ চলাচল অব্যাহত থাকলেও চলাচলের জন্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সাঙ্গু নদী ও বরুমতি খালের পানি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও এখনো নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় সড়কে পানি উঠে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যানবাহন চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

এদিকে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে মানুষের জানমাল যাতে রক্ষা পায় সেই লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এখনও মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠার খবর পাওয়া যায়নি।

গাছবাড়িয়া খাঁনহাট সার্ব রেজিস্ট্রার অফিস গলির দোকানদার মোঃ লোকমান হাকিম জানান, ‘টানা দু’দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গাছবাড়িয়া খাঁনহাট সার্ব রেজিস্ট্রার অফিস গলির রাস্তার ড্রেনের কাজ করার কারণে দোকানে সামনে হাঁটু পরিমান পানি হয়েছে। কারো কারো দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। স্কুলগামী ছাত্র -ছাত্রীদের স্কুলে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে করে মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে এই রাস্তার সংস্কার প্রয়োজন।’

‎চন্দনাইশ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা তারেক ও শফি জানান, ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে বরুমতি খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পৌরসভার সাহিত্যিক পাড়া সড়ক ভেঙে পড়ে গেছে। আমরা চাই দ্রুত সড়ক সংস্কার ‎করাটা জরুরী।

‎উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের কৃষক ফোরকান জানান, ‘টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমাদের প্রায় এক একর জমির রোপন করা ধান তলিয়ে গেছে। এতে করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

‎মৎস্যচাষি আরিফ উদ্দিন রাসেল বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাশিমপুর মকবুলিয়া মাদ্রাসার পুকুর থেকে পানির সাথে মাছ ভেসে গেছে। সেখানে ৮ লাখ টাকার মাছ ছিলো।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেন, ‘টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আউশ ডুবে গেছে। এছাড়া সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবজি আক্রান্ত ২২০ হেক্টর ও আউশ বীজতলা ২০ হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে। তবে বৃষ্টি বাড়লে তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনো ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানবীর আহসান বলেন, মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় দুইদিন বৃষ্টি হলেই পানি বাইরে চলে যায়। টানা বৃষ্টি হওয়ায় মৎস্যচাষিদের ক্ষতি হতে পারে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আলমগীর জানান, মানুষের জান-মাল রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রাজিব হোসেন জানান, ‘এখন পর্যন্ত আল্লাহর মেহেরবানিতে অবস্থা ভালো রয়েছে। সব সাঙ্গু নদী ও বরুমতি খালের পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে যাচ্ছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার পানি বাড়ছে। এখনো কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। নিম্নাঞ্চলের মানুষের আগে থেকেই সতর্ক করা হচ্ছে। মানুষের জান-মাল রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর