নিজস্ব প্রতিবেদক: নগরের চান্দঁগাও কাপ্তাই রাস্তার মাথা নামক এলাকায় বেশ কয়েকজন চাদাঁবাজ বিভিন্ন গাড়ি থেকে চাদাঁ আদায় করতেছে। এই সংবাদ পেয়ে মোহরা পুলিশ বক্সের আই.সি কাজী মনিরুল করিম কয়েকজন সঙ্গীয় ফোর্সসহ হাতেনাতে ৪/৫ জন চাদাঁবাজকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। তাতেই কি কপাল পুড়ল তদন্ত কর্মকর্তা কাজী মনিরুল করিমের !
ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত আনুমানিক ০৮ ঘটিকার সময় সিএমপি চান্দঁগাও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথায় সিএনজি এবং অটোটেম্পু চালকদের নিকট থেকে চাদাঁ আদায় করার সংবাদ পেয়ে মোহরা পুলিশ বক্সের আই.সি কাজী মনিরুল করিমের নেতৃত্বে চাদাঁবাজদের বিরুদ্ধে চান্দঁগাও থানা পুলিশের ০১ টি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বিভিন্ন পরিবহন এবং সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের নিকট থেকে গাড়ি থামিয়ে জোড়পূর্বক টাকা নেওয়ার সময় থানা পুলিশ হতেনাতে ওই আসামীদের গ্রেফতার করেন। আই.সি কাজী মনিরুল করিম জানান- গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা বিভন্ন জেলা থেকে এসে বর্তমান নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন। প্রকৃত অর্থে তারা পরিবহন সেক্টরে চাদাঁবাজির ১টি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। গ্রেফতারের পর দেখা যায় তারা চান্দাঁগাও থানার ১টি চাদাঁবাজি মামলা এজাহারভূক্ত আসামী।
চান্দঁগাও থানার চাদাঁবাজি মামলা নং- ২১(৬)২৫ তারিখ ১৮/০৬/২০২৫, মামলার পেনাল কোড দন্ডবিধি ১৪৩,৩৪১,৩৮৫,৩৮৬,৫০৬ ও ৩৪ ধারা অনুযায়ী অভিযোগ এনে মামলা রুজু করা হয়েছে। উক্ত মামলার বাদীর নাম মো: শিপন এবং তার সঙ্গীয় অভিযোগকারী আরো ৭ জন ভূক্তাভোগী গাড়ি চালক। আসামীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন, জোরপূর্বক গাড়ি থামিয়ে চাদাঁ আদায়ের অভিযোগ আনয়ন করা হয়। বাদী পক্ষের আিভযোগ আসামীরা পরিবহন সেক্টরে বিশাল ও প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট দলের সদস্য। এরা প্রচন্ড সুবিধা ভোগী কোনো দল বা মতের সদস্য নন। স্বার্থের জন্য তারা বিভিন্ন নেতা, প্রভাবশালী ব্যাক্তি ও রাজনৈতিক দলের নামভাঙ্গিয়ে পরিবহন সেক্টরে চাদাঁবাজির বানিজ্য করে থাকে। গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তিরা হলেন- এজাহারভূক্ত ১নং আসামী মো: নয়ন (৩৫) তিনি ভোলা জেলার চরফ্যাশনের বাসিন্দা। বর্তমানে চান্দঁগাও পশ্চিম মোহরা কাপ্তাই রাস্তার মাথা সংলগ্ন কুলাপাড়ার এলাকায় বসবাস করেন, জানা যায় এই নয়নের স্ত্রী সংখ্যা ৩ জন, প্রচন্ড ধূর্ত প্রকৃতির, সব পরিবেশে সর্বাবস্থায় রূপধারন করতে সিদ্ধহস্ত। এজাহারভূক্ত ৪ নং আসামী মো: লোকমান (২৮) তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার আদর্শ গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা, তারও স্ত্রী সংখ্যা ২ জন। এজহারভূক্ত ৭ নং আসামী মো: ফয়সাল হোসেন (৩২) তিনি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলের বাসিন্দা এবং বর্তমানে কাপ্তাই রাস্তার মাথা সংলগ্ন কুলাপাড়া এলাকায় বসবাস করে। এজহারভূক্ত ৭ নং আসামী সনজিৎ নাথ প্রকাশ সমীর বাবু (৪৬) তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাপাতলী এলাকার বাসিন্দা বর্তমানে কাপ্তাই রোড সংলগ্ন কুয়াইশ হাটহাজারী এলাকায় বসবাস করেন। এই সনজিৎ নাথ প্রকাশ সমীর বাবু অত্র মামলার এজাহার নামীয় ১ নং আসামী মো: নয়নের দক্ষিণহস্ত খ্যাত কাপ্তাই রাস্তার মাথায় রোডে বিভিন্ন গাড়িগুলো লাঠি দিয়ে পিঠিয়ে পিঠিয়ে থামিয়ে জোর করে টাকা আদায় করতে সিদ্ধহস্ত এবং অন্যজন নগরীর বায়েজিদ থানাধীন জালালাবাদ ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: শাহীন।
সূত্রে জানা যায়-হাবিবুর রহমান নামক ১ ব্যাক্তিসহ কয়েকজন গ্রেফতারকৃত আসামীদের ছাড়িয়ে আনার জন্য থানায় যান। পুলিশের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারেন হাবিবুর রহমান নামক লোকটি অত্র মামলার এজাহারভূক্ত ৫ নং আসামী, নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ থানা হাজতের লকাপে নিয়ে রাখেন। এ সময় হাবিবের সাথে আসা লোকজন পুলিশের সাথে তর্কে লিপ্ত হন এবং পরিচয় দেন তারা ইসলামী আন্দোলনের লোক এবং হাবিব ইসলামী আন্দেলনের চান্দাঁগাও থানা শাখার সাধারন সম্পাদক। পুলিশ তাদের বুঝাতে চেষ্টা করেন যেহেতু হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং এজাহারভূক্ত আসামী, সেখানে ১ জন বাদী ও ৭ জন অভিযোগকারী বা স্বাক্ষী আপনারা আদালত থেকে তাকে জামিনের ব্যবস্থা করেন এবং তারা রাত্রে চলে যান। কিন্তু পরের দিন শুক্রবার (২০ জুন) সকাল ৯ টার পরে ইসলামী আন্দোলনের লোকজন নিয়ে এসে থানা ঘেরাও করে রাখে ও বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে এবং পুলিশের উপর চাপসৃষ্টি করে থানা পুলিশের মাধ্যমে ২-৩ জন উক্ত মামলার স্বাক্ষী হাজির করতে পুলিশ বাধ্য হয় এবং এজাহারভূক্ত ৫ নং আসামী হাবিবুর রহমানকে মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে নিয়ে যান।
আসামিদের দাপুটে চলাফেরা ও প্রকাশ্য আস্ফালন:
অত্র মামলার এজাহারভুক্ত ২নং আসামি দাপুটে চলাফেরা করে প্রকাশ্য বলে বেড়ায় পুলিশ আমাদের ধরতে পারবে না। যাদেরকে ধরেছে তাদেরকে কয়েকদিনের মধ্যে আমরা ছাড়িয়ে আনব। আরেক ৬নং এজাহারভুক্ত আসামি আবুল বশর যে কিনা মাস খানেক আগে চাদগাঁও থানার অন্য একটি চাঁদাবাজি মামলায় চাঁদা আদায় করতে গিয়ে পুলিশ হাতে নাতে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে যান। পরবর্তীতে আদালতের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঐ মামলার বাদীকে প্রভাবিত করে অর্ন্তবর্তীকালিন জামিনে বের হয়ে চাঁদাবাজিতে ব্যস্থ। সে প্রকাশ্য আস্ফালন করে বলে বেড়ায় আমাদেরকে কেউ আটকাইয়া রাখতে পারবে না। বাদীপক্ষ আসামিদের এই ধরনের দাপুটে আস্ফালনে ভীতসন্ত্রস্থ। বাদীপক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগীতায় কামনা করেন এবং এজাহারভুক্ত সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানায়।
আইনজীবীর বক্তব্য:
এই ঘটনায় চট্টগ্রাম জজ আদালত ভবনের একজন আইনজীবী এডভোকেট ইকবাল হোসেন বলেন, কেউ যদি নিরঅপরাধ হয় সেটা প্রমাণের জায়গা এক মাত্র আদালত। থানাও ঘেরাও করে কাউকে ছাড়িয়ে নেওয়া মোটেই উচিত নয়। এই মামলায় একজন বাদী এবং ৭ জন অভিযোগকারী বা স্বাক্ষী এই ধরনের মামলায় আসামীকে গ্রেপ্তারের পর আইন অনুযায়ী যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ থাকতে হয়, যেমন গুরতর অসুস্থ্যতাজনিত, পঙ্গুতজনিত বা আদালতের নির্দেশ। এ ভাবে থানা থেকে আসামি ছাড়িযে নেওয়া একটি ভূল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমাজের জন্য।
Leave a Reply