
আমজাদ হোসেন, আনোয়ারা : চট্টগ্রামের আনোয়ারা–কর্ণফুলী এলাকায় সম্প্রতি ‘ওরস বিরিয়ানি’ বিক্রি যেন এক সাংস্কৃতিক খাদ্যউৎসবে রূপ নিয়েছে। উপজেলার ব্যস্ত সড়ক, মোড়, বাজার ও ছোট ছোট অলি-গলিতে এখন চোখে পড়ে হরেক রকমের ওরস বিরিয়ানির দোকান। সন্ধ্যা নামলেই এসব দোকানের সামনে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়। স্বল্পমূল্যে মেজবানের স্বাদ পাওয়া যায় বলেই খাবারপ্রেমীদের কাছে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বার আউলিয়া ওরশ বিরিয়ানি, আকাশ ওরশ বিরিয়ানি, ওসমানী ওরশ বিরিয়ানি, ভান্ডারী ওরশ বিরানী, মালেক শাহ ওরশ বিরানী, মামা ওরশ বিরানী—এমন নানা নামের দোকানগুলো দিনে দিনে আরও বাড়ছে। অনেক দোকানে অস্থায়ী তাঁবু, রঙিন আলো ও ব্যানার দিয়ে আলাদা আকর্ষণ তৈরি করা হয়েছে।
ওসমানি ওরস বিরিয়ানিতে বড় প্লেট ১১০ টাকা ও ছোট প্লেট ৬০ টাকা। সঙ্গে পরিবেশন করা হয় মেজবানি মাংস, গরুর নলা ও ঝাল-মসলার গ্রেভি। একসাথে প্রায় ২৫০ জনের মতো বসার ব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিনই ভিড়ে পূর্ণ থাকে দোকান।
স্বাদের বৈচিত্র্য ও সহজলভ্যতা এই বিরিয়ানিকে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তরুণ-তরুণী, শ্রমিক, অফিসকর্মী, ছাত্রছাত্রী—সবার পদচারণায় সন্ধ্যার পর পুরো এলাকা জমজমাট হয়ে ওঠে।
দোকান মালিকদের দাবি, প্রতিদিনই চাহিদা বাড়ছে, তাই বাড়াতে হচ্ছে রান্নার পরিমাণও। অনেকে আগাম বুকিং শুরু করেছে; নতুন শাখা খোলার পরিকল্পনাতেও আছেন উদ্যোক্তারা।
শুধু আনোয়ারা–কর্ণফুলী নয়, চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী—সব জায়গায়ই এখন ওরস বিরিয়ানির গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। অলি-গলি, ফুটপাত ও বাজারের কোণায় সন্ধ্যার পর শুরু হয় সুগন্ধি বিরিয়ানি রান্না।
চাটগাঁইয়া ঐতিহ্যের নতুন অধ্যায় বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে ওরস বিরিয়ানির এই উত্থান। মেজবান থেকে ওরস বিরিয়ানি—স্বাদের এই যাত্রা এখন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে গেছে। ক্রেতাদের উচ্ছ্বাস, দোকানিদের ব্যস্ততা এবং সড়ক জুড়ে মসলার গন্ধ মিলে আনোয়ারা–কর্ণফুলীকে যেন ওরস বিরিয়ানির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করেছে।
এমনকি ভিড়ের কারণে অনেক সময় সড়কে এলোপাতাড়ি গাড়ি রাখা ও পরিবেশ নোংরা হওয়ার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করেছে।
