Hom Sliderবাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মুজিব পীড়ন’ মতাদর্শের বড় জবাব দিচ্ছে সাধারণ মানুষ


অনলাইন ডেস্ক: ১৫ আগস্ট উপলক্ষে রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভেঙে দেওয়া বাড়িতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছেন অনেকে। তবে পুলিশি বাধায় কেউই শ্রদ্ধা জানাতে পারছেন না। তাদের কাউকে আটক করা হয়েছে আবার কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৫ আগস্ট পালন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এমন অবস্থানকে ‘মুজিব পীড়ন’ আখ্যা দিয়ে লেখক ও গবেষক ড. নাদিম মাহমুদ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘মুজিব পীড়ন’ মতাদর্শের একটি বড় জবাব দিচ্ছে এই দেশের সাধারণ মানুষ।

বিশেষ করে ‘শোক প্রকাশে’ বাধা দেওয়ার ঘোষণায় কিংবা মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিবুর রহমানকে ছোট করার মানসিকতার প্রত্যুত্তরে ফেসবুকে প্রতিবাদস্বরূপ ‘বঙ্গবন্ধুর’ প্রতি শোক প্রকাশে ঢল নেমেছে। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘শোক প্রকাশ কি ঠেকানো গেল?’ শিরোনামে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন তিনি।

পোস্টে নাদিম মাহমুদ লিখেছেন, গত ১৬ বছর ধরে ফেসবুক ব্যবহার করছি। এই দীর্ঘ সময়ে অনেকবার ১৫ আগস্ট পার করেছি।

বিদায়ি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতে আয়োজিত সরকারি শোক দিবসের উদযাপন আর এবারের ১৫ আগস্টের মধ্যে বিস্তর মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্যটা অনেকেই বলবেন, ক্ষমতার রদবদল হয়েছে; কিন্তু তার বাইরে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে, যা আমি গত দেড় দশকে অন্তত দেখতে পাইনি। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছি। আপনি যদি ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই এই পরিবর্তনটা আপনার নজরে এসেছে।

গত ১২ ঘণ্টায় ফেসবুকে যত পোস্ট টাইমলাইনে ভেসে এসেছে, তার ৯৮ শতাংশ পোস্টই ‘স্বাধীনতার স্থপতি’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে। যদিও প্রতিবছর এই ধরনের ট্রেন্ট ছিল, কিন্তু এবারের প্রসঙ্গটি একেবারেই ভিন্ন। শেখ হাসিনার ক্ষমতার সময় যারা ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলত, যারা ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে ‘মুজিবসেনা’ প্রমাণে ব্যস্ত থাকত, সেই মানুষগুলো গত বছর ৫ আগস্টের পর অনেকটাই নাই হয়ে গেছে। ওদের টাইমলাইন আজ অনেকটাই ফাঁকা। বরং তারা ব্যস্ত ক্ষমতাসীনদের প্রশংসা নিয়ে।

কিন্তু এবার যারা পোস্ট করছে, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ গত পনেরো বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে এই দিনটিতে ‘এইভাবে শেখ মুজিবকে’ স্মরণ করেননি, কিন্তু এবার তারা স্বেচ্ছায় ভালোবেসেই শোক দিবসে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে। বলতে গেলে, শেখ মুজিবুর রহমানকে দলীয় দৃষ্টিকোণের বাইরে রেখে, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণ করতেই ‘অর্গানিক মুজিব ভক্ত’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছেয়ে গেছে। এই অর্গানিক শেখ মুজিবুর রহমানপ্রেমী মানুষগুলোকে গত পনেরো বছর ‘আওয়ামী লীগ’ জাগতে দেয়নি কিংবা সেই সুযোগ তৈরি করেনি, কিন্তু এবার তাদের অনুপস্থিতিতে সজাগ হয়েছে ‘দল-মতের’ বাইরে থাকা মানুষগুলো, যাদের ভালোবাসাই যেকোনো সময়ের চেয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের শোক দিবস অনেক মর্যাদাবান, অনেক আবেগময়।

তিনি আরো লেখেন, আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘মুজিব পীড়ন’ মতাদর্শের একটি বড় জবাব দিচ্ছে এই দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ‘শোক প্রকাশে’ বাধা দেওয়ার ঘোষণায় কিংবা মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিবুর রহমানকে ছোট করার মানসিকতার প্রত্যুত্তরে ফেসবুকে প্রতিবাদস্বরূপ ‘বঙ্গবন্ধুর’ প্রতি শোক প্রকাশে ঢল নেমেছে। সরকার গত এক বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে আঘাত হেনেছে, সরকারের নীরব সমর্থনে স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নাম্বার বাসভবনে যে ভাঙচুর করা হয়েছে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিবাদ এসেছে আজকের এই দিনে ভার্চুয়ালে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুছে ফেলা যে যায় না, তার প্রমাণ আজকে সাধারণ মানুষের ‘বঙ্গবন্ধু’র প্রতি ভালোবাসা।

যে মানুষগুলো আজ শেখ মুজিবুর রহমানের পঞ্চাশতম শাহাদাতবার্ষিকী স্মরণ করছে, এটা দেখে ভাববার সুযোগ নেই যে এরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক কিংবা আওয়ামী লীগ করে। বরং যারা তাকে স্মরণ করছে, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশই এই দেশের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, কিংবা ভিন্ন ঘরানার রাজনীতির সাথে জড়িত। ব্যক্তি কিংবা শাসক মুজিবের হিসাব-নিকাশ ঊর্ধ্বে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক হয়ে ওঠা শেখ মুজিবকে ইতিহাসের মর্যাদাটুকু দিচ্ছে।

নাদিম মাহমুদ বলেন, ফেসবুকের পোস্টগুলোর বাইরে আরেকটি বিষয় লক্ষনীয়, তা হলো- গণমাধ্যমগুলো বঙ্গবন্ধুর পঞ্চাশতম শাহাদাতবার্ষিকীতে প্রথম পাতায় বক্স সংবাদ ছেপেছে, সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় ছেপেছে। এসব সংবাদ যখন তাদের পেজগুলোতে এসেছে, তখন হাজার হাজার মানুষ কমেন্ট করে ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ জানাচ্ছে। এই কমেন্টগুলোতে কেউই নোংরা কথা বলছে না, যা অন্য সময়গুলোতে করত।

এই যে পরিবর্তনগুলো আমরা গত এক বছর পর লক্ষ করলাম, এটাই সম্ভবত শাসকগোষ্ঠীদের জন্য একটি বড় বার্তা যে শেখ মুজিবুর রহমানকে আপনি কিছুতেই মুছে ফেলতে পারবেন না। শোক দিবস পালনে বাধা দিয়েও আপনি ভাচুর্য়াল বাধা ঠেকাতে পারবেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা জাতির জন্য যে কলঙ্কময় অধ্যায়, তা শুধু একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীরা ব্যতীত সবার কাছে পরম শোকের, পরম বিয়োগের। তাই এর আগে বলেছি, বঙ্গবন্ধু বত্রিশ নাম্বারে নেই, টুঙ্গিপাড়ায় নেই। শত শত নামকরণ কিংবা ভাস্কর্যেও নেই। সেখানে ফুল দিয়ে আপনি তাকে পাবেন না। কিন্তু আপনি যদি মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, যদি মনে করেন তিনি স্বাধীনতার স্থপতি, তাহলে বঙ্গবন্ধু মিশে আছে আপনার মাঝে, আমার মাঝে- এই বাংলাদেশের মাঝে! বঙ্গবন্ধু কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পদ নয়, তিনি আমাদের সবার, তিনি এই বাংলাদেশের।

 


Related posts

রামপালের মৈত্রী পাওয়ার প্ল্যান্টের উদ্বোধন

Chatgarsangbad.net

আইআইইউসির ইটিই বিভাগের স্নাতকোত্তীর্ণ ছাত্রদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

Chatgarsangbad.net

চন্দনাইশে অনাবাদি জমিতে লাল পতাকা টাঙাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন

Chatgarsangbad.net

Leave a Comment