আজ ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুব দিবসের প্রত্যাশা: জাতির কল্যাণে যুবসমাজ নিবেদিত হোক


সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল: আজ (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক যুব দিবস এবং জাতীয় যুব দিবস ২০২৫। পূর্বে ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস পালন করা হলেও এবার আন্তর্জাতিক যুব দিবস (১২ আগস্ট)’র সাথে পালন করা হচ্ছে।
দিবসটি পালনের প্রধান কারণ হল যুব সমাজের উন্নয়ন এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আন্তর্জাতিক যুব দিবস জাতিসংঘের উদ্যোগে পালিত হয়, যার লক্ষ্য যুব সমাজকে ঘিরে সাংস্কৃতিক ও আইনি সমস্যাগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং তাদের সমাজের উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ত করা। অন্যদিকে জাতীয় যুব দিবস দেশের যুব সমাজের মধ্যে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ এবং আত্ম-উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের প্রতি উৎসাহ যোগাতে পালিত হয়। দিবস দুটি যুবসমাজকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে এবং তাদের সমাজের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করে।

এবারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- “প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি, বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি”। ইংরেজিতে- Youth Advancing Multilateral Cooperation, Through Technology and Partnerships.
আন্তর্জাতিক যুব দিবস এবং জাতীয় যুব দিবস এবার একসাথে পালন করার কারণ হল- সরকারি ব্যয় সাশ্রয় এবং একই ধরনের কার্যক্রম একসাথে করা। এই সিদ্ধান্তটি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এখন থেকে ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস পালন হবে না, ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবসের সাথেই পালন হবে।

১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস (আইওয়াইডি) জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত একটি সচেতনতামূলক দিবস। এটি ২০০০ সালে প্রথম উদযাপিত হয়েছিল। জাতীয় যুব দিবস যুব সমাজের গুরুত্ব এবং তাদের দেশের উন্নয়নে অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম, র‌্যালি, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ইত্যাদি আয়োজন করে। যুবকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং সমাজের প্রতি তাদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা। যুবকদের উদ্ভাবনী ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা। দেশের উন্নয়নে তাদের মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহিত করা। যুব সমাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় সৃষ্টি করা। যুবকদের অংশগ্রহণে একটি বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা।

যুব দিবস উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ হলো যুবসমাজ। এই যুবসমাজ জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালে সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তিনি প্রতিপাদ্য উল্লেখ করে বলেন- অত্যন্ত যুগোপযোগী হয়েছে, যা বহুপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে আরো টেকসই, ন্যায়সঙ্গত এবং উদ্ভাবনী বিশ্ব গঠনে যুবদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্মপ্রত্যাশী যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ বহুমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, যুবদের নেতৃত্ব সৃষ্টি, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ, ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানকে বেগবান করার লক্ষ্যে সাভারে ‘জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ এর কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত যুবদের বিনা জামানতে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সব পর্যায়ে যুব ঋণের সিলিং বৃদ্ধি করা হয়েছে। তরুণদের কর্মমুখী ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতেও সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস’ উদযাপনের মধ্যদিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবদের ক্ষমতায়ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সবাই আরো বেশি কর্মদ্যোগী হবেন-বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকার যুব উন্নয়ন (বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া) মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমাদের দেশে যুব বলতে ১৮ হতে ৩৫ বছরের লোকদের বুঝায়। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি সংস্থা, যা দেশের যুবসমাজের ক্ষমতায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে। এ সংস্থাটি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ ছাড়াও যুবদের উন্নয়নে বহুবিধ কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও আত্ম-মর্যাদাবোধ জাগ্রত করা। এই দিনটি যুব সমাজের শক্তি, মেধা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে দেশের কল্যাণে কাজে লাগানোর জন্য প্রেরণা হবে।
উৎসাহদানকারী শ্লোগান ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় তার’- যুবদের প্রেরণা। যুবদের পথচলা হোক বৈষম্যের বিরুদ্ধে, মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে, সব অকল্যাণের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে আর নিজেদের সুস্থ-স্বাভাবিক রাখার জন্য।

যুবকদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কাজে উৎসাহিত করা, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। যুবকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে। যুবকদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী তৈরি করা, যা তাদের দেশ পরিচালনায় ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি: যুব সমাজের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দেশপ্রেমের অনুভূতি জাগ্রত করা। যুব সমাজকে দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে উৎসাহিত করা। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুব সমাজের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক করতে হবে। দিবসটি যুবকদের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে, সেই সাথে তাদের উন্নয়নমূলক কাজে উৎসাহিত করবে। যা জাতির প্রগতির জন্য সহায়ক হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর