ভারতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার ঘিরে বিক্ষোভ, হয়রানির অভিযোগ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা ব্যানার টানানোকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। শুধু কানপুরেই নয়, উত্তর প্রদেশসহ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে এ ঘটনায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা, গ্রেপ্তার এবং বিক্ষোভের খবর মিলছে।

স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদিত জায়গা পরিবর্তন করে নতুন স্থানে প্যান্ডেল তৈরি ও ব্যানার টানানোর অভিযোগে কানপুরের রাওয়াতপুর এলাকায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়। খবর বিবিসি বাংলার।

কানপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (পশ্চিম) দীনেশ ত্রিপাঠি এক বিবৃতিতে জানান, চিরাচরিত শোভাযাত্রার জন্য নির্ধারিত স্থান বাদ দিয়ে অন্য জায়গায় প্যান্ডেল তৈরি করে আই লাভ মুহাম্মদ ব্যানার টাঙানো হয়। এতে এক পক্ষ আপত্তি জানালে উভয় পক্ষের সমঝোতায় শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত স্থানেই ব্যানার টাঙানো হয়।

তিনি দাবি করেন, মামলাটি আই লাভ মুহাম্মদ লেখার জন্য নয়; বরং অনুমোদিত স্থান পরিবর্তন ও শোভাযাত্রার সময় পোস্টার ছেঁড়া এবং দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে।

তবে এফআইআরে উল্লেখ করা হয়, মুসলিম সম্প্রদায় নতুন প্রথা চালুর চেষ্টা করেছে এবং শোভাযাত্রার সময় ‘অন্য সম্প্রদায়ের’ ধর্মীয় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। যদিও এই ঘটনায় কানপুরে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

কানপুরের ঘটনার পর রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরে রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ব্যানার নিয়ে মিছিলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উত্তর প্রদেশের উন্নাওতে একই ধরনের মিছিলের পর পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গঙ্গাঘাট এলাকায় শিশু ও নারীসহ মুসলমানরা ব্যানার হাতে স্লোগান দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

লখনৌয়ে প্রয়াত কবি মুনব্বর রাণার কন্যা ও সমাজবাদী পার্টির নেত্রী সুমাইয়া রাণার নেতৃত্বে নারীরা বিধানসভা গেটে বিক্ষোভ করেন। অংশ নেওয়া কয়েকজন নারীকে কয়েক ঘণ্টা আটকেও রাখা হয়। গুজরাটের গোধরায় থানার সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ১৭ জন। মুম্বাইয়ের ভায়খলা এলাকায় অনুমতি ছাড়া মিছিল করার অভিযোগে মামলা এবং একজনকে আটক করা হয়।

মানবাধিকার সংগঠন ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট’র সদস্য নাদিম খান বিবিসিকে বলেন, ছোট ছোট বিষয়কে বড় করে মুসলমানদের টার্গেট করা হচ্ছে। কানপুরে মুসলমানরা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় অভিযোগ করলেও তাদের পক্ষে কোনো মামলা হয়নি, উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই এফআইআর হয়েছে।

কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ইমরান প্রতাপগড়ী প্রশ্ন তোলেন, যদি ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা অপরাধ হয়, তবে ভারতের ৩০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধেই কি মামলা হবে? তিনি মুসলিম তরুণদের অনুমতি ছাড়া মিছিল না করার পরামর্শ দেন, যাতে তারা আইনগত ফাঁদে না পড়েন।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারও কঠিন ব্যবহার করছে। উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী ধর্মপাল সিং জানান, আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র রাকেশ ত্রিপাঠি বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাউকে টার্গেট করা হচ্ছে না। কিন্তু অনুমতি ছাড়া ব্যানার বা মিছিল হলে আইনি পদক্ষেপ নিতেই হবে।

বিতর্কের পর সামাজিক মাধ্যমে বহু মুসলমান ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা ছবি প্রোফাইল ছবি হিসেবে ব্যবহার করছেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিবেক কুমারের মতে, কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো পরিকল্পনা নাও থাকতে পারে, তবে ক্রমাগত ছোট ছোট ঘটনায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও টার্গেট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

বর্তমানে কানপুরসহ উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

 


Related posts

ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ

Mohammad Mustafa Kamal Nejami

চট্টগ্রামে র‍্যাবের অভিযানে ডাকাত সর্দার গ্রেপ্তার

Mohammad Mustafa Kamal Nejami

দোহাজারী হাসপাতালে সিলিং ফ্যান নষ্ট থাকায় রোগীদের দুর্ভোগ

Chatgarsangbad.net

Leave a Comment