নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট এলাকা যেন ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। দিনে দুপুরে চলছে চাঁদাবাজি-ছিনতাই। আর এসবের আধিপত্য ধরে রাখতে রাখতে চলে গোলাগুলি।
যার নেপথ্যে রয়েছে অত্র এলাকার স্বঘোষিত ডন, যুবদল ক্যাডার পরিচয়ে চলা ইসমাইল হোসেন ওরফে ‘টেম্পু ইসমাইল’।
চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের এই কুখ্যাত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে রয়েছে ৩০টিরও বেশি মামলা। ২০১৪ সালের ক্রসফায়ারে পঙ্গুত্বের শিকার হলেও অপরাধ থামেনি তার। জামিনে বেরিয়ে হয়ে উঠেছেন আরও ভয়ংকর— জায়গা করে নিয়েছেন নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টেম্পুর জন্ম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হলেও বহু বছর আগে স্থায়ী হন চট্টগ্রামে। অল্প বয়সে বাবার সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরে নিজেই টেম্পু চালিয়ে রাস্তায় নামেন। সেখান থেকেই শুরু হয় চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য, মাধক ব্যবসা, যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ ও অপহরণ পর্যন্ত।
টেম্পুর প্রধান কাজ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও অস্ত্রের মুখে চাঁদা আদায়। দাবিকৃত টাকা না পেলে গুলি চালাতে দ্বিধা করেন না সে। তার ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খোলার সাহস করেনা। এমনকি মামলা করার চিন্তাও মাথায় আনেনা। অভিযোগ রয়েছে থানায় অভিযোগ জানালেই আসে ভুক্তভোগীর প্রাণনাশের হুমকি।
চট্টগ্রামে তার ঠিকানা যেন বাতাসের মতো। কখনো চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া, কখনো ফরিদারপাড়া, আবার খতিবেরহাট বা বহদ্দারহাটে, গাঁ ঢাকা দিয়ে চলে। পুলিশের নজর এড়িয়ে নিজস্ব বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে নির্ভয়ে চালিয়ে যান নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড এমনি জানান ভুক্তভোগীরা।
সর্বশেষ গত ২১ জুলাই চান্দগাঁওয়ের খতিবেরহাট এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায়ও উঠে আসে টেম্পুর নাম। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের জড়িয়ে পড়েন অপরাধে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, টেম্পুর বিরুদ্ধে চান্দগাঁওসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজ, ছিনতাই, খুনের ঘটনায় রয়েছে অন্তত ৩০টি মামলা। একাধিকবার গ্রেপ্তার হবার সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে অবৈধ অস্ত্র। ২০১৪ সালে গ্রেপ্তারের সময় তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে ‘ক্রসফায়ারে’ পড়েন এবং পঙ্গু হয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি চাকরি থেকে বাসায় ফিরছিলাম। পথে ইসমাইল হোসেন টেম্পু আমার পথ আটকায়। গুলি দেখিয়ে আমার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে হুমকি দেয় থানায় অভিযোগ করলে আমাকে মেরে ফেলবে।
আরে নারী ভুক্তভোগী বলেন, আমি মেডিক্যালে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। হঠাৎ টেম্পুর লোকেরা আমাকে ঘিরে ধরে। সবাই মিলে আমার টাকা-পয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। আমরা প্রশাসনের কাছে এই সন্ত্রাসীর বিচার চাই।
বহদ্দারহাট এলাকার দোকানদাররা জানান, একসময় টেম্পু যুবলীগের অস্ত্রের সাপ্লায়ার হিসেবে কাজ করলেও গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি যুবদল কর্মী পরিচয়ে চলেন।
তারা আরো জানায়, বহদ্দারহাট এলাকায় তাকে চাঁদা দিলে দোকান খুলতে পারে কিন্তুু ল চাঁদা না দিলে দোকান খোলা অসম্ভব।
এই বিষয়ে চাদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, আমরা তার বিষয়ে অবগত আছি। তাকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
Leave a Reply