আজ ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ছাত্রলীগ নেতা ইমাদ সিকদারের নেতৃত্বে আবারও সক্রিয় ডাকাত শাহীন বাহিনী


আবদুর রাজ্জাক, কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া পশ্চিম তিতারপাড়া এলাকার হাজী ইদ্রিস সিকদারের ছেলে অস্ত্র মামলার পলাতক আসামি আওয়ামী দোসর নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা শহীন ডাকাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড ইমাদ সিকদারের নেতৃত্বে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে শাহীন বাহিনী এমনটাই জানালো স্হানীয় জনগণ। সেই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ইতিমধ্যে গর্জনিয়া বাজারে অনেক দোকান দখল করেছে বলে জানান স্থানীয়রা। কারাগার থেকে সবকিছু নির্দেশ দেন ডাকাত শাহীন। এদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী গর্জনিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের অঘোষিত সম্রাট যুবলীগ নেতা সীমান্তের অপরাধের রাজা শাহীনুর রহমান ওরফে ডাকাত শাহীন বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও ইয়াবাসহ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর অভিযানে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝির কাটা এলাকায় থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ যৌথবাহিনীর হাতে আটক হন ডাকাত শাহীনের চোরাচালান নিয়ন্ত্রক যুবদল নেতা মুবিনুর রহমান রুবেল। সর্বশেষ গত সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে উখিয়া মরিচ্যা পালং মধুঘোনা এলাকায় থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি দেশী এলজি, একে ৪৭ রাইফেলের গুলিসহ আটক হন ডাকাত শাহীনের গানম্যান ও অস্ত্র প্রশিক্ষক সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য আশিক তালুকদার। কিন্তু এখনো অধরা রয়ে গেছে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছাত্র লীগ নেতা ইমাদ সিকদার ও লেদাপুতুসহ অন্য সহযোগীরা। এসব অপরাধীদের হাতে থাকা অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধী দের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আইন শৃঙ্খ লা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শাহীন গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতারে কাজ করছে তারা। গত ১৮ জুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ আটক হন শাহীন গ্রুপের সদস্য রুবেল। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ নং আসামি করা হয়েছে শাহীন গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড ইমাদ সিকদারকে। এদিকে শাহীনের আটকের পর এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে তার প্রতিপক্ষকরাও। একদিকে ইমাদ সিকদারের নেতৃত্বে শাহীন গ্রুপ অপরদিকে আবছার ও আব্দু রহিমের নেতৃত্বে রয়েছে আরেক গ্রুপ। রাত হলেই সশস্ত্র দুই গ্রুপের মহড়ায় আতংকিত হয়ে পড়ছে সীমান্ত এলাকার মানুষের মাঝে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে অজানা আতংক দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ডাকাত শাহীন আটকের পর বাহিনীর দায়িত্ব নেন সেকেন্ড ইন কমান্ড ইমাদ সিকদার। তার নেতৃত্বে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা রামু এবং নাইক্ষ্য ংছড়ির পাহাড়ি এলাকা ছাগলনাইয়া, লেমুছড়ি, দোছড়ি নামক স্থানসহ বিভিন্ন পাহাড়ে সশস্ত্র অবস্থান নেয়। ইমাদ ছাড়াও এই গ্রুপের নেতৃত্বে আরও আছে শোয়েব, সুজন এবং লেদাপুতুসহ চিহ্নিত অপরাধীরা। আর কারাগার থেকে শাহীন তার সেকেন্ড ম্যান ইমাদ সিকদারকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। ফলে শাহীন আটকের পর স্বস্তির বদলেআতংক বেড়েছে আরও সাধারণ মানুষের মাঝে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন, গ্রুপের সাথে যোগাযোগ রয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্টী আরকান আর্মির সাথে। তাদের কাছ থেকে ভারি অত্যাধুনিক অস্ত্র আনা হয়। ইমাদকে গ্রেফতার করা হলে অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে জানান স্থানীয়রা। এদিকে এলাকায় ফিরে নিজেদের অবস্থানও শক্তিমাত্রা প্রদর্শন করতে মরিয়া শাহীনের প্রতিপক্ষ আব্দু রহিম এবং আবচার ডাকাত।তাদের সাথে রয়েছে বিভিন্ন সময় শাহীনের হাতে নির্যাতিতরাও। তবে এখনও তারা এলাকায় শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি। এ অবস্থায় দুইপক্ষের মধ্যে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিজ এলাকায় শাহীনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ইউপি সদস্য মনি আলম। বর্তমানে ভাঙ্গা পা নিয়ে জীবন চলছে তার। মাঝির কাটার নবী সুলতানের ছেলে শাকিলকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে পঙ্গু করে দেয় শাহীন বাহিনী। মাঝির কাটার আয়ুবের বাড়ি গুড়িয়ে দেয়। হেলাল নামে এক যুবককে দিন দুপুরে উলঙ্গ করে পেঠানো হয়। গেল বছর দেড় একের ভেতর শাহিনের হাতে খুন হয় জাফর আলম, ও তার ছেলে, নাইক্ষ্যংছড়ির শফিউল্লাহর ছেলে ইরফান, থিমছড়ির আবু তালেব এবং মহেশখালীর নেজাম উদ্দিন। শাহীন এমন সব অপরাধ করতেন প্রকাশ্যে। যেন অন্যরা তাকে ভয় পায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শাহীন আটকের পর তার গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করছে ইমাদ। এ অবস্থায় এলাকায় শান্তি ফেরাতে শাহীন বাহিনী ও তার প্রতিপক্ষের ডাকাত দলের সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। কে এই ইমাদ সিকদার: ডাকাত শাহীনের সেকেন্ড ইন কমান্ড ইমাদ সিকদার গ্রুপের দায়িত্ব নিয়ে আলোচনায় এসেছেন। স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, চট্টগ্রামে একটি কলেজে পড়ালেখা অবস্থায় অপরাধে জড়িয়ে পড়েন ইমাদ সিকদার। চট্টগ্রামে ছিনতাই ও মারামারির তিনটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকায় ফিরে এসে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেনের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নেন। তার পিতা হাজী ইদ্রিস সিকদার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও ছেলে ইমাদ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়ান। মূলত এলাকায় নিজের প্রভাব ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নিতে ছাত্রলীগ সভাপতির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন চতুর ইমাদ। এ সময় শাহীনের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয় ইমাদের। শাহীনের বিশ্বস্ততা অর্জন করে বনে যান সেকেন্ড ইন কমান্ড। শাহীন আটকের পর গ্রুপের পুরো নেতৃত্বে চলে যায় তার হাতে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পিতার ইমেজকে পুজি করে ইমাদ নিজেকে বিএনপি পরিবারের সদস্য দাবি করে বিএনপির আশ্রয় লাভের চেষ্টা করেন। সর্বশেষ বাহিনীর সদস্য রুবেল আটক হলে এ মামলায় আসামী হন ইমাদ ও লেদাপুতু। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, অভিযুক্ত শাহীন গ্রুপের সদস্য ইমাদ সিকদারসহ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এলাকায় বাড়ানো হয়েছে টহলও।রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈয়বুর রহমান বলেন, ইমাদকে গ্রেফতারের জন্য আমরা প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত রাখছি। আশা করি যেকোন সময় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো। কক্সবাজার র্যাব-১৫ এ অধিনায়ক লে: কর্ণেল কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। ইমাদ সিকদার সহ তার বাকি সহযোগী ও ডাকাতদের গ্রেফতারের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর