আবদুর রাজ্জাক, জেলা প্রতিনিধি,কক্সবাজার।। কক্সবাজার সদর উপজেলা খুরুশকুল পুরাতন ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় আল্লাহওয়ালা হ্যাচারীতে এক বৃদ্ধাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মাছ চুরির অপবাদ দিয়ে হত্যা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসি। রোববার (৫ মে) দিবাগত রাতে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের আল্লাওয়ালা নামে একটি হ্যাচারীতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বৃদ্ধ আলী আকবর কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের কুলিয়াপাড়ার বাসিন্দা আলী আহমদের ছেলে। জানা যায় যে, আলী আকবরকে হাত পা বাঁধার পর হ্যাচারীর মালিক কর্তৃপক্ষের লোকজন মিলেই পিটিয়ে হত্যা করার পর মাছ চুরির তকমা এবং সে পেশাগত চুর দাবী করে আল্লাহওয়ালা হ্যাচারীর মালিক জাহাঙ্গীর কাসেমের ছেলে রাইয়ান কাসেম। হত্যার বিষয়টি জানাজানি হলে, স্থানীয়রা পুলিশ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের খবর দিলে ঘটনাস্থলে আসেন সাংবাদিক ও পুলিশ। পরে স্থানীয় লোকজন জড়ো হন হ্যাচারীর সামনে। ঐ সময় সাংবাদিকদের নিউজ কাভার ও স্থানীয়দের লাশ দেখতে বারণ করে হ্যাচারীর গেইটে প্রবেশ করতে বাঁধা দেয় জাহাঙ্গীর কাসেমের ছেলে রাইয়ান কাসেম। পরে স্থানীয় জনতা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হত্যার বিষয়টি ভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে বিভিন্ন ধরনের তকমা দেয় রাইয়ান কাসেম। আলী আকবরকে চুর তকমা দেয় এবং খারাপ প্রকৃতির লোক হিসেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। রাইয়ান কাসেম ঐ সময় সাংবাদিকদের বলেন, আলী আকবর একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। তার হাতে দা এবং মাছ চুরির জন্য ব্যবহৃত জাল জব্দ করেছি। সে হ্যাচারীর দারোয়ানকে দা দিয়ে কুপাতে চাওয়ায় প্রতিহত করতে গিয়ে আঘাতে মারা যায় আলী আকবর। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন হলো হাত পা বাঁধা অবস্থায় একজন মানুষ কীভাবে অপরজনকে আক্রমণ করতে পারে। এতেই বুঝা যায় যে, তাকে হ্যাচারীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করার পর আলী আকবরের বিরুদ্ধে চুর তকমা দেওয়া স্থানীয়রা সহ্য করতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে হইল হুল্লোড় শুরু করে দেয়। পরে স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে হ্যাচারীতে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়, এবং রাইয়ান কাসেমকেও মারধর করার চেষ্টা করে। পরে সাংবাদিক এবং পুলিশের সর্বোচ্চ সহযোগিতায় রাইয়ান কাসেমকে হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসে। পুলিশ বলছে, ঘটনার সাথে যেই জড়িত হোক না কেন তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনব। পাশাপাশি কোন অদৃশ্য শক্তি খুনিদের ছাড়িয়া নেয়ার চেষ্টা করেও পার পাবেনা।এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এনসিপির স্থানীয় নেতা রাইয়ান কাশেমসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন-রাইয়ান কাশেম, তার চাচা তানভীর কাশেম এবং হ্যাচারির নৈশ প্রহরী মোহাম্মদ হোসাইন ও মো. মিজান।নিহতের পরিবারের অভিযোগ, বৃদ্ধকে বাড়ী থেকে তুলে এনে মাছ চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।তবে প্রতিপক্ষের লোকজন ভিন্ন তথ্য দিয়ে বলছেন, আল্লাওয়ালা হ্যাচারিতে চুরির সময় ধরা পড়ে ওই যুবক। পরে হ্যাচারির নৈশ প্রহরীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে আত্মরক্ষার্থে প্রতিহামলায় ওই যুবক মারা যায়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর রাত ১টায় মরদেহ উদ্ধারের সময় এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে উত্তেজিত জনতা হ্যাচারীর মালিকের ছেলে রাইয়ান কাশেমকে মারধর করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।এদিকে, রাইয়ান কাশেম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির কক্সবাজারের সক্রিয় নেতা। রাইয়ানের এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কাশেমের ছেলে।পরিবারের দাবী, মাছ চুরির অপবাদে আলী আকবরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াস খান জানান, এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক রাইয়ান কাশেম, তানভীর কাশেম, হোসাইন ও মিজান নামের চারজনকে আটক করা হয়। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।ওসি আরো জানান, এনসিপি নেতা রাইয়ান কাশেমকে জনরোষ থেকে রক্ষা করার জন্য পুলিশ হেফাজতে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে এসে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে মামলায় আসামি করা হবে।
Leave a Reply