আজ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

world bank

বিশ্বব্যাংকের আপডেট: ২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১


বিশ্বব্যাংকের অর্ধ-বার্ষিক আপডেট অনুযায়ী ২০২৩ অর্থবছরে মালদ্বীপের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৮.২ শতাংশ হবে। এরপর হবে বাংলাদেশের ৬.১ শতাংশ, নেপালের হবে ৫.১ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতের ওপর শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট, বৈশ্বিক মন্দা, পাকিস্তানে প্রলয়ংকরী বন্যা ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের কারণে দক্ষিণ এশিয়া বেশ কিছু অভূতপূর্ব ধাক্কার মুখোমুখি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক তাদের অর্ধ-বার্ষিক আপডেটে এ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি হ্র্রাস পাচ্ছে উল্লেখ করে এখানকার দেশগুলোর স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘দক্ষিণ এশিয়ার সর্বশেষ অর্থনৈতিক ফোকাস, ধকল মোকাবিলা: অভিবাসন ও স্থিতিস্থাপকতার উপায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই বছর গড় ৫.৮ শতাংশ আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, যা জুনে ব্যক্ত করা পূর্বাভাস থেকে ১ শতাংশ কম। ২০২১ সালে এটি ছিল ৭.৮ শতাংশ। তখন বেশিরভাগ দেশ মহামারী-জনিত মন্দা কাটিয়ে উঠছিল।

অর্থনৈতিক মন্দা যখন দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশের ওপর চেপে বসেছে, তখন কিছু দেশ অন্যদের তুলনায় তা ভালভাবে মোকাবিলা করছে। এই অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতের রপ্তানি ও পরিষেবা খাত বৈশ্বিক গড় থেকেও শক্তিশালীভাবে পুনরুদ্ধার করেছে। এক্ষেত্রে দেশটির পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাহ্যিক ধকল সামলাতে বাফার হিসাবে কাজ করেছে। পর্যটন পুনরায় শুরু হওয়ায় মালদ্বীপে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করছে। কিছুটা নেপালেও করছে। দু’দেশেরই গতিশীল পরিষেবা খাত রয়েছে।

কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে পণ্যের রেকর্ড উচ্চ মূল্যের সম্মিলিত প্রভাব শ্রীলঙ্কার ওপর প্রবল ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে, দেশটির ঋণের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় নিঃশেষ করে ফেলেছে। এ যাবৎকালে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কার প্রকৃত জিডিপি এ বছর ৯.২ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে আরও ৪.২ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। উচ্চ দ্রব্যমূল্য পাকিস্তানের বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতাকে আরও খারাপ করেছে এবং এর বৈদেশিক রিজার্ভ কমিয়ে এনেছে।

জলবায়ু-পরিবর্তন-জনিত ভয়াবহ বন্যায় এ বছর পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ প্লাবিত হওয়ার পর দেশটির অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার বলেন, ‘মহামারী, বিশ্বব্যাপী তারল্য ও পণ্যের দামের আকস্মিক পরিবর্তন, এবং চরম আবহাওয়া বিপর্যয় একসময় ছিল শেষ প্রান্তিক ঝুঁকি। কিন্তু তিনটিই গত দুই বছরে দ্রুত উপর্যুপরি এসেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে সংকটে ফেলেছে।’

প্রতিবেদনে প্রদত্ত সমীক্ষার তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের শেষের দিকে এবং ২০২২ সালের প্রথম দিকে মহামারী দ্বারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন এলাকাগুলোর দিকে অভিবাসী ¯্রােত এসে কোভিড-১৯-উত্তরকালে চাহিদা ও যোগান সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করেছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার বলেন, ‘দেশের ভেতরে-বাইরে শ্রমের গতিশীলতা মানুষকে তারা যেখানে বেশি উৎপাদনশীল তেমন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব করে তোলে। এটি জলবায়ু ঘটিত বিপর্যয়ের ধকল কাটাতেও সাহায্য করে। আর দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ দরিদ্ররা বিশেষ করে এসব বিপর্যয়ের কাছেই বেশি অসহায়।’

টিমার বলেন, ‘শ্রমের গতিশীলতার সীমাবদ্ধতা অপসারণ করা এ অঞ্চলের স্থিতিস্থাপকতা এবং এর দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক।’
এ লক্ষ্যে প্রতিবেদনে দুটি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথমত, অভিবাসীদের যে খরচের সম্মুখীন হতে হয় তা কমানোর বিষয়টি নীতি এজেন্ডায় শীর্ষে থাকা উচিত। দ্বিতীয়ত, নীতিনির্ধারকরা আরও নমনীয় ভিসা নীতি, সংকটকালে অভিবাসী কর্মীদের সহায়তার ব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন উপায়ে অভিবাসনকে ঝুঁকিমুক্ত করতে পারেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর