আজ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

বুনো ওল বাঘা তেঁতুল


কৃষিতে বৈরি আবহাওয়ায় সহনশীল জাত, ৬৯৯ বীজ ৭০৮ প্রযুক্তি উদ্ভাবন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সারাবিশে^র কৃষি উৎপাদনে। বাংলাদেশেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতি বছরই বন্যার ফলে দেশে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অসংখ্য কৃষক। অনেকে কৃষি থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে বৈরি আবহাওয়া সহনশীলসহ উচ্চ ফলনশীল ৬৯৯টি জাত উদ্ভাবন হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থাগুলো একইসময়ে উদ্ভাবন করেছে লাগসই ৭০৮টি প্রযুক্তিও।

জানা গেছে, বৈরি আবহাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে খরা, বন্যা, লবণাক্ততা সহিষ্ণুসহ জিংক সমৃদ্ধ জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিরি) বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই), বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষনা ইনস্টিটিউট (বিডাব্লিউএমআরআই) সহ আরো বেশ কয়েকটি সরকারি বেসরকারি সংস্থা। উদ্ভাবিত এসব জাত কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন সাতকানিয়াতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ২৬ হাজার ২৯৫ কৃষক

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে প্রতিনিয়ত বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রাক-বর্ষাকাল এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। প্রয়োজনের সময় বৃষ্টি হচ্ছে না, আবার অতিবৃষ্টির কবলেও পড়তে হচ্ছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাপমাত্রা, মৌসুমের সময়কাল কমছে শীতের। এসব কারণে অক্লান্ত পরিশ্রম করেও কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না কৃষক।

কৃষিবিদরা বলছেন, এসব সংকট মোকাবেলায় মাটি ও প্রকৃতির ভাষা বুঝতে হবে কৃষকদের। এজন্য নির্বাচন করতে হবে বৈরি আবহাওয়া সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল বীজ-জাত। পাশাপাশি সংকট মোকাবিলায় ব্যবহার করতে হবে প্রযুক্তি। বর্ষার আগে এবং বর্ষাকালীন সময়ে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে (ঘূর্ণিঝড়, বন্যা) যাতে ফসল নষ্ট না হয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে সে ধরনের বীজ বপন করতে হবে। আমন মৌসুমে বন্যায় সহনশীল (১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে থাকলেও নষ্ট হয়না) জাত ব্রি ধান ৫১,৫২,৫৫ ইত্যাদি বপন করা যায়। দেরীতে বপন করা যায় এমন আমনের বীজও রয়েছে। আউশ ও বোরো মৌসুমের উপযোগী (লবণাক্ততা, খরা ও ঠাণ্ডাসহনশীল) জাত হলো ব্রি ধান৫৫,৬১,৬৭ ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফসলে পোকা মাকড়ের আক্রমন ও রোগের প্রকোপও বাড়ছে। এ কারণে উদ্ভাবন করা হয়েছে রোগ প্রতিরোধী জাত। কেবল ফসলের জাত বপনই শেষ বিষয় নয়, এর সাথে ব্যবহৃত হতে হবে লাগসই কৃষি প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব সহনশীল প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে জোয়ারভাটা ও লবণাক্ত প্রবণ এলাকায় সর্জান (কান্দিবেড়) পদ্ধতিতে চাষাবাদ। নতুন প্রযুক্তিতে ভাসমান পদ্ধতিতেও চাষাবাদ হচ্ছে এখন। জোয়ারভাটাপ্রবণ কিংবা নিম্নাঞ্চলের জলাবদ্ধ জমিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের সব অঞ্চলে ক্ষতির ধরন ও মাত্রা একই রকম নয়। ফসলের কোনো একটি জাত বা প্রযুক্তি সব এলাকার জন্য কার্যকর হবে না। চাষের এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি পোস্ট হাভেস্টেও (চাষ পরবর্তী ফসল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ) অসংখ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে।

আরও পড়ুন বন্যার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড চট্টগ্রামের ‘সবজিভাণ্ডার’, শঙ্খচরে নিঃস্ব চাষী

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (কক্সবাজার) উপ পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, ‘বৈরি আবহাওয়া সহনশীল বীজ-জাত বপনের জন্য কৃষকদেরকে আমরা সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আগস্টের আকস্মিক বন্যার পর দেরীতে বপনের যে আমন বীজ রয়েছে সেটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছি আমরা। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এডাব্লিউডি (অল্টারনেট ওয়েটিং এন্ড ড্রায়িং) পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কীটনাশক ব্যবহার যাতে কমানো যায় সেসব প্রযুক্তিও ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি।’

তবে সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটি জেলা উপজেলার কৃষকের। তারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের যাতায়াত খুবই কম। এছাড়া উন্নত বীজ ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত প্রান্তিক কৃষকরা। আমিলাইষ ইউনিয়নের কৃষক সজল দে বলেন, ‘কৃষক হয়েও সরকারি সহায়তা এবং পরামর্শ থেকে বঞ্চিত আমি। আমাদের গ্রামে কখনও কৃষি কর্মকর্তারা আসেন না। পরামর্শ চাইতে কৃষি অফিসে যেতে হয়।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর