মো. শোয়াইব, হাটহাজারীঃ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর গ্রাহকদের মধ্যে কার্ড বিতরণে হরহামেশা দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে হচ্ছে না কোনো শাস্তি, নেওয়া হচ্ছে না কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। তদন্ত কমিশন গঠন করেই দায় সারতে চাইছে প্রশাসন। অভিযুক্ত ব্যক্তি দায় চাপাচ্ছেন অভিযোগকারীদের ওপর, এরফলে অভিযোগকারীরা হচ্ছেন আরও অবিচারের শিকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৃহহীন ও দরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া উদ্যোগ গুলো নিয়ে ফায়দা লুটতে চাইছে অসাধু চক্র। এ ধরনের একাধিক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে হাটহাজারীতে। লেনদেনের বিনিময়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর ও টিসিবির কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি এরকম একটি বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. তারেকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন আলী হোছেন। সে জানিয়েছে, তাকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
অভিযুক্ত মেম্বার তার এলাকার দরিদ্র মানুষদের কাছে টিসিবির কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রেও টাকা দাবি করেছেন বলে জানা গেছে। বেশ কয়েকজন ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন ৫শ’ টাকা দিলে মেম্বার তাদের টিসিবি কার্ড দেবেন।
আরও পড়ুন ‘দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে দেশ ভয়াবহ সংকটে’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মানুযায়ী যাচাই বাছাইয়ের পর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভূমিহীন পরিবারগুলোকে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু হাটহাজারীতে অস্বচ্ছতার বিষয় দৃশ্যমান হচ্ছে। পৌর এলাকার আদর্শগ্রামে নাছির, মাহমুদা গ্রামে সবুরা খাতুন, মোছাম্মত রাশেদা আকতারের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছিলো, পরে সেই ঘর বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বরাদ্দকৃত ঘরগুলি কারা পেয়েছে তার কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি উপজেলা প্রশাসন। একাধিক কর্মকর্তার কাছে এই তথ্য জানতে চাইলে তারা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘এটি তাদের ইন্টার্নাল বিষয়।’ অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ ঘর বরাদ্দে স্বজন প্রীতি দেখানো হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের অনেকে আবার ঘর বরাদ্দ পায়নি।
এ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান জানান, ‘তাদের নামে কোনো ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তাহলে এ তালিকা কারা তৈরী করেছে এবং তালিকাতে দেখা যায় তাদের ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাহলে ভুক্তভোগীদের সাথে প্রতারণা করলো কারা?’
এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আলী হোছেন যে অভিযোগটি করেছেন সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলী হোসেন ফরহাদাবাদের উদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার তালিকায় তার নাম অন্তুর্ভুক্ত করেছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম। চাটগাঁর সংবাদের সাথে আলাপকালে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আলী হোছেনের পিতা জাহাঙ্গীরের দুই শতক ভূমি রয়েছে। তার সাথে আলী হোছেন থাকেন না, তিনি ঘর ভাড়া নিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। এ কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরের জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি।’ জাহাঙ্গীর আলমের আরেক সন্তানের নাম আলী হামজা। আশ্রয়ণ প্রকল্পে সে একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু নিয়মের মারপ্যাচ কিংবা অন্য কোনো কারণে আলী হোছেন ঘর পায়নি।
আলী হোছেন এ বিষয়ে চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য মেম্বার আমাকে ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪০ হাজার টাকা দেয়ার লোভ দেখিয়েছিলো। আমি সেটা প্রত্যাখ্যান করে বলেছি, ঘরের জন্য টাকা দিয়েছি, আমি ঘর চাই। পরে মেম্বার আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে বলেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারও আমাকে ডাকিয়েছে কিন্তু প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে বলে নাই, আমার কাছে লিখিত প্রমাণ না থাকলেও চাক্ষুষ স্বাক্ষী রয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এই বিষয়ে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’
আলী হোছেনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ইউপি সদস্য মো. তারেক। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। একটি চক্র নির্বাচনী প্রতিহিংসার কারনে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। আশ্রয়ণের ঘর কাউকে দেয়া বা বাতিল করার ক্ষমতা আমার নাই। আর অর্থ লেনদেনের কোনো প্রশ্নই আসেনা।’
Leave a Reply