আজ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছাইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে কাঁদছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা


বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মালামাল সরাচ্ছেন। অনেকেই কিছু পণ্যসামগ্রী অক্ষত থাকতে পারে- এ আশায় পোড়া ছাই আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন। এছাড়াও জীবনের শেষ সম্বল হারানো হাজারও ব্যবসায়ীরা ঘুরে ঘুরে তা দেখছেন আর স্মৃতিচারণ করছেন। বুধবার ৫ এপ্রিল দুপুরে বুধবার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজারে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা গেছে।

নিজের দোকানের ছাইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে কাঁদছেন ব্যবসায়ী

মল্লিকা গার্মেন্টস নামে নূর আলমের বঙ্গবাজারে দোকান ছিল। তিনি মূলত থ্রিপিস, শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের জামা বিক্রি করতেন।গতকালের আগুনে তার দুটি দোকানের ৮০ লাখ টাকার সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়েছে। সব হারিয়ে পুড়ে যাওয়া দোকানে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছেন নূর আলম। বন্ধু-বান্ধব,আশপাশের দোকানদার কেউ তার কান্না থামাতে পারছে না।

নূর আলম বলেন, এই মার্কেটে আমার দুটি দোকান ছিল। এখন একটি দোকানও নেই। নগদ টাকা যা ছিল বস্তায় ভরেছিলাম। সব কিছু পুড়ে ছাই, এখন কিছু নেই।

ঈদ ঘিরে স্ত্রীর গহনা, জমি বন্ধক এবং ব্যাংক ঋণ নিয়ে ৬০ লাখ টাকার মালামাল কিনেছিলেন তিনি। সব মিলে দোকানে এক কোটি টাকার মালামাল ছিল। এখন আর কিছু নেই।

বঙ্গবাজারের শ্রমিকরা পাগল প্রায়

বঙ্গবাজার মার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটে কুলির কাজ করা আক্কাস আলী পাগল প্রায়। এদিক সেদিক ছুটছেন। তিনি বললেন: সবার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোন ক্রেতা বিক্রেতার কোন ব্যস্ততা নেই। আমরাও আজ বেকার, সবার ক্ষতি। অথচ একদিন আগেও সব দোকানে কাস্টমারদের ভিড় লেগে থাকতো, আমরা তাদের মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এনে দিতাম।

বঙ্গবাজারের আরেক শ্রমিক রহিজ উদ্দিন জানালেন, ঈদের বাজারে আমাদের ব্যস্ততা বেশি থাকত। মার্কেটে মানুষে গমগম করতো। বিক্রেতারা পাইকারি মাল নিতে আসতো। কিন্তু আজ সব থেমে আছে, চারদিক থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

পোড়া স্তূপে ভালো কাপড় খুঁজছে নিম্নআয়ের মানুষেরা

আগুনে পুড়ে যাওয়া কাপড় চোপড় মধ্যে থেকে ভালো কিছু কাপড় বের করতে বা খুঁজতে এসেছেন আশপাশের এলাকার অনেকেই। সেই সঙ্গে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষেরাও বেশ ভিড় জমিয়েছেন পুরো বঙ্গবাজার এলাকায়।

তাদের মধ্যে অনেকে দুই একটা শাড়ি, প্যান্ট ও শার্ট জাতীয় পোশাক পেয়েছেন। যার মধ্যে কিছু পোড়া, আবার কোনো কোনটা অল্প কিছু ভালো আছে। এমন লাখ লাখ পোড়া কাপড় মিলে পুরো বঙ্গবাজার পরিণত হয়েছে যেন স্তূপে।

বঙ্গবাজার সংলগ্ন আনান্দবাজার বস্তি ফাতেমা বেগম বলেন, অনেকে খবর দিলো এখানে পোড়া জিনিসের মধ্যে দুই একটা ভালো কাপড় পাওয়া যাচ্ছে, তাই এসেছি। দুই একটা পাইছি কিন্তু অর্ধেক অংশে পোড়া দাগ আছে। পাশের এলাকার করিম বলেন, ভালো কিছু কাপড় পাওয়া যায় কি না দেখছি । আমাদের কেউ বাধা দেয়নি। আমরা গরিব মানুষ তাই কেউ কিছু বলছে না।

এ বিষয়ে বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন বলেন, এগুলো মূলত বঙ্গ মার্কেটের পোড়া মালামাল। এখানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আশপাশের দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরা এসে এসবের মধ্যে বেছে দেখছে ব্যবহার করার মত ভালো কিছু পাওয়া যায় কি না। আমারা এসব পোড়া মালামাল সরিয়ে এক জায়গায় করে রাখছি, সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি এসে এগুলো নিয়ে যাবে।

মঙ্গলবার ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুন দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। তাদের ৪৮টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কয়েকটি ইউনিট। পরে ক্রমান্বয়ে ইউনিট বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত ৪৮টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়। এতে সম্মিলিতভাবে যুক্ত হয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী বিজিবি, র্যাব ও ওয়াসার সদস্যরা।

বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার। এমন দাবি করে প্রাথমিকভাবে ৭০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চেয়েছন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

মঙ্গলবার সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে ৫ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন।

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর