মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশঃ
“আত্মসুখ অন্বেষণে আনন্দ নাহিরে, বারে বারে আসে অবসাদ, পরার্থে যে করে কর্ম তিতি ঘর্ম-নীরে সেই লভে স্বর্গের প্রসাদ।” পরের কল্যাণ সাধনই মহত্তের লক্ষণ। অপরের কল্যাণে নিজকে নিয়ােজিত করতে পারলেই জীবন সুখময় ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। কেননা ব্যক্তিস্বার্থ পরিহারের মাধ্যমেই সমাজ সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে। তবে যুগের সাথে তাল মেলানো বলে একটা কথা যোগ হয়েছে আমাদের যাপিত জীবনে। সময় এখন দেওয়া-নেওয়ার। যেখানে কিছু মিলবে না, সেখানে বিনিয়োগ করার প্রশ্নই আসে না। মানুষের উপকার করা তো দূরে থাক নিজের জন্যই সব সময় ব্যস্ত থাকে সমাজের অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু বদলে যাওয়া সমাজে ব্যতিক্রম কিছু মানুষ থাকে যাদের কাছে যশ, খ্যাতি ও লাভের চেয়ে মানুষের ভালোবাসাটাই বড়। তেমনই একজন ব্যতিক্রমী মানবিক মানুষ চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম সামী।
মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে অভুক্ত মানুষদের আহার করিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পূর্ব দোহাজারী সুরতআলী মাস্টারবাড়ী এলাকার আব্দুস ছবুরের ছেলে ৩২ বছর বয়সী এই যুবক। নিজের মোটরসাইকেলে চেপে পলিথিনের ব্যাগে করে সপ্তাহে দুই দিন খাবারের প্যাকেট নিয়ে মনজুর আলম সামী ছোটেন মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে অভুক্ত মানুষের খোঁজে। কেরানিহাট থেকে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে, রেলস্টেশনে, মার্কেটের এক কোনে কিংবা ফুটপাতে অনাহারে পড়ে থাকা নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধদের খুঁজে খুঁজে তাদের অন্তত এক বেলা খাবার তুলে দেওয়ার কাজটি করে যাচ্ছেন মনজুর আলম সামী। অযত্নে-অবহেলায় শরীরে মল-মূত্রের গন্ধ নিয়ে শুয়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে কখনো কখনো ঘুম থেকে ডেকে তুলে খাবারের প্যাকেট দিয়ে আসছেন তিনি। যাদের শরীরে থাকে না লজ্জা নিবারণের পোশাক। শরীরের মল- মূত্রের গন্ধে যাদের কাছে কেউ আসতে চায় না, তাদের পাশে বসে পরম যত্নে নিজ হাতে খাবারও খাইয়ে দেন মনজুর আলম সামী। মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে অভুক্ত মানুষদের খুঁজে খুঁজে বের করে খাওয়ানোই যেন এখন তার দৈনন্দিন কাজে পরিণত হয়েছে।
এমন উদ্যোগের পেছনের কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত আমার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে গত তিন বছর আগে একদিন কলেজে দিয়ে আসতে মোটরসাইকেল যোগে গাছবাড়িয়া যাওয়ার সময় মহাসড়কের পাশে এক দোকানে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন লোককে খাবারের জন্য আকুতি জানাতে দেখে আমার স্ত্রী আমাকে বিষয়টি দেখায়। তাকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন লোকটির কাছে এসে তাকে হোটেল থেকে খাবার কিনে দেই। খাবার খাওয়ার পর ওই লোকটির আনন্দ দেখে আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। বিষয়টি আমার স্ত্রীকে জানানোর পর সে বলে সপ্তাহে একবার অন্ততপক্ষে একবেলা হলেও যেন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের আহার করাই। এখন আমার নিজ বাড়িতে আমার স্ত্রী নিজ হাতে রান্না করে দেয়। রান্না করা খাবারগুলো প্যাকেটে ভরে এলাকার ছোট ভাই রিদোয়ান, জোবায়ের, আলম ও জিসানকে সাথে নিয়ে বিলি করে আসি।
তিনি আরো বলেন, রাস্তায় হাঁটতে, চলতে-ফিরতে কত মানসিক ভারসাম্যহীন কত মানুষই তো আমরা দেখি। তাদেরকে নিয়ে ভাবা তো দূরের কথা, অনেকে দ্বিতীয়বার তাকাতেই সংকোচ বোধ করে। অথচ একবারও ভাবি না, তারাও আমাদের মতো একজন মানুষ। তাদের প্রতি কি এ সমাজের কোনো দায়িত্বই নেই? যথাযথ চিকিৎসা ও সেবাশুশ্রূষা পেলে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিরাও সুস্থ্য হয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারবেন এমনকি তাদের পরিবারেও তারা ফিরে যেতে পারবেন। মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে অভুক্ত অসহায় মানুষগুলোকে দেখলে খুব কষ্ট লাগে।
এসব মানুষগুলোর জন্য বিশাল পরিসরে কিছু করার সামর্থ্য নেই। তবে ছোট্ট পরিসরে অভুক্ত মানুষগুলোকে অন্ততপক্ষে একবেলা হলেও আহার করাচ্ছি। একাজটি করে আমি যেমন আনন্দ পাই তেমনি মানসিক প্রশান্তি অনুভব করি। অসহায় এসকল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সচেতন নাগরিকদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
Leave a Reply