আজ ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

আদালতে আলোচিত সীতাকুণ্ড শায়মা হত্যার কথা স্বীকার করলেন স্বামী


দিদারুল আলম(দিদার)ঃ

চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড মুরাদপুর হাসনাবাদের শায়মা আক্তার থাকতেন শশুর বাড়ি সীতাকুণ্ড মুরাদপুরে,আর স্বামী দিদারুল আলম চাকরি করেন ফটিকছড়ি এবং সেখানেই থাকতেন।
দুইজনের সংসারে দেড় বছরের একটা ফুটফুটে পুত্র সন্তানও আছে। তাদের সংসার ছিল সুখ শান্তিতে ভরা। কিন্তু বিয়ের বছর যেতে না যেতে সংসারে কলহ শুরু হয়। স্বামী দিদারুল আলম স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করে আসছিলো বলে জানা যায়। এই পরকীয়ার জের ধরেই অভিনব কায়দায় স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা করে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দেয় মৃত শায়মা আক্তারের স্বামী খুনি দিদারুল আলম।
সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর হাসনাবাদ গ্রাম থেকে গত ০৯/০৫/২০২৩ ইংরেজি রোজ মঙ্গলবার গৃহবধূ সায়মা আক্তারের (২০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড মডেল থানা পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর ‘ডাকাতে আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে’ বলে বিলাপ করতে করতে সেখানে যান গৃহবধূ শায়মার স্বামী দিদারুল আলম। আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের সামনে বিলাপ করতে থাকেন তিনি।
হত্যার ধরন দেখে পুলিশের সন্দেহ হলে প্রাথমিক তদন্ত শেষে দিদারুল আলম ও তাঁর দুই বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পর দিদারুল আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্ত পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে স্বামীর জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে দিদারুল আলমকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। দ্বিতীয় দফায় পুলিশের কাছে পাষণ্ড স্বামী দিদারুল আলম তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
এবং ১১/০৫/২০২৩ বৃহস্পতিবার স্ত্রী সায়মা আক্তারকে গলা কেটে হত্যার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন খুনি স্বামী দিদারুল আলম। চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন জুনায়েদ তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালতে দিদারুল আলমের দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, দিদারুল আলম ফটিকছড়ি এলাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করেন। তাঁর স্ত্রী সীতাকুণ্ডের মুরাদপুরের বাড়িতে থাকতেন। এক বছর ধরে তাঁরা দুজন পরস্পরকে সন্দেহ করা শুরু করেন। স্ত্রীর সন্দেহ হাসপাতালের কোনো নারীর সঙ্গে দিদারুলের অবৈধ সম্পর্ক আছে। স্বামীর সন্দেহ স্ত্রী সায়মা বাড়িতে থেকে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সন্দেহের বশে তাঁদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফটিকছড়ি থেকে সীতাকুণ্ডে আসেন দিদারুল আলম। রাতে বাড়ির পাশে পুকুরের ধারে এসে স্ত্রীকে ফোন দেন দিদারুল আলম। তখন ফোনে অন্য কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন সায়মা। ফোনে অপেক্ষমাণ পেয়ে দিদারুল আলম ঘরের কাছে এসে শোনার চেষ্টা করেন। এতে সন্দেহের মাত্রা বেড়ে যায়। এরপর কৌশলে ফোন দিয়ে স্ত্রীকে রাত ১১টার দিকে পুকুরপাড়ে এনে পেছন থেকে গলায় ছুরিকাঘাত করেন। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বুকের বাঁ পাশে তিনটি ছুরিকাঘাত করে বাড়বকুণ্ডে পালিয়ে যান।
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এর আধা ঘণ্টা পর দিদারুল ঘটনাস্থলে যান। ফটিকছড়ি থেকে ফিরেছেন বলে পুলিশকে জানান। এত দূর থেকে দ্রুত সীতাকুণ্ডে দিদারুলের উপস্থিতিতে পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে পুলিশ। তিনি বলেন, স্ত্রীকে হত্যার জন্য দিদারুল আলম রাউজান থেকে দুটি ছুরি ক্রয় করেন। লাশ উদ্ধারের সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ রাউজানের ঠিকানার একটি প্যাকেট পান পুলিশ।
এর আগে গতকাল বুধবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দিদারুল ও তাঁর বোন রেসমাকে আসামি করে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহত গৃহবধূ শায়মা আক্তারের বাবা মোঃ বেলাল।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর