আজ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলওয়ের এক প্রকল্পেই পরামর্শক ব্যয় ২৫৪ কোটি টাকা


রেলওয়ের এক প্রকল্পে পরামর্শকের পেছনে যাচ্ছে ২৫৪ কোটি ৭৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। আগে অন্য প্রকল্পেও একই ধরনের কাজ হয়েছে। এবার পরামর্শকের পেছনে এত অর্থব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজ রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ৭ হাজার ৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৮ কোটি এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে ৪ হাজার ৬৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি নিয়ে ৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান রোববার বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক নিয়ে নানা সময় কথা হচ্ছে। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ আছে-এমন প্রকল্পের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধ্য হয়েই পরামর্শক নিতে হয়। কেননা বিদেশি পরামর্শক দিয়ে কাজটা করানোর বিষয়ে তাদের একটা চাহিদা থাকে। তারা মনে করে, তাদের পরামর্শকরা অনেক বেশি দক্ষ হয়ে থাকে। এতে কাজের মান ঠিক থাকবে। আমাদের দিক থেকেও কিছু করার থাকে না। তবে এ প্রকল্পটিতে এত টাকা কেন লাগবে, সেটি পিইসি সভায় পর্যালোচনা করবে পরিকল্পনা কমিশন। আলাপ-আলোচনার পর যতটুকু প্রয়োজন তত টাকাই ধরা হবে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখানে দুটি বিষয় আছে। যেমন: রেলওয়ে পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান হলেও এমন প্রকল্পের জন্য এত পরামর্শক কেন লাগবে। এক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনার ঘাটতি আছে। কেননা যে লোক অভিজ্ঞতা অর্জন করল, তিনি তো আর রেলওয়েতেই বসে থাকবেন না। বদলি হয়ে যান। তবে নতুন কোনো প্রযুক্তি না থাকলেও ডুয়েল গেজে রূপান্তর প্রকল্পে কেন এত টাকার পরামর্শক লাগবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই যৌক্তিক। যে প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে, সেখানেই পরামর্শক প্রস্তাব করে উন্নয়নসহযোগীরা। এখন যদি ওই প্রতিষ্ঠান তাদের ঘাটতি শিকার না করে তবে তারা মনে করে, পরামর্শক চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঋণ নেওয়ার খাতিরে পরামর্শক ব্যয়ের প্রস্তাব মেনে নিলেও তা বাস্তবিক কোনো কাজে আসবে না, এটা সবাই বোঝেন। তাই যদি এরকম ঘটনা ঘটছে বলে মনে হয়, তাহলে উভয় পক্ষই বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে হবে।

সূত্র জানায়, দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ রেলপথগুলোকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকা-টঙ্গী ২২ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার অংশকে ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক হিসাবে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এছাড়া আখাউরা-লাকসাম ৭২ কিলোমিটার অংশের মিটার গেজ সিঙ্গেল লাইন ট্র্যাককে ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাকে রূপান্তরের কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫২ কিলোমিটার ‘চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। তবে আগামী দিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের ২২৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে টঙ্গী-ভৈরব বাজার-আখাউরা ৯৭ কিলোমিটার ডুয়েল গেছে রূপান্তর করতে হবে। এছাড়া বাকি লাকসাম-চিনকি-আস্তানা-চট্টগ্রাম ১২৮ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার মিটারও সিঙ্গেল গেজ লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব ও ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য মামুন-আল-রশীদের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এত টাকা পরামর্শক খাতের লাগার প্রশ্নই আসে না। তবে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণে কিছুটা বাধ্যতামূলক পরামর্শক চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় প্রয়োজন ছাড়াও পরামর্শক প্রস্তাব করে থাকে। এ অবস্থায় পরিকল্পনা কমিশন পরামর্শকদের টার্ম অব রেফারেন্স (টিওআর) ভালো করে পরীক্ষা করলেই অনেকটা ব্যয় কমে যাবে। এমন ব্যয় অর্ধেক পর্যন্ত কমাতে পেরেছিলাম আমার কর্মকালীন।

প্রস্তাবে রেলপথ মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার (নির্মাণাধীন) রেল করিডরের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল করিডরের সংযোগ স্থাপন হবে। ফলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পর্যটকদের নিরবচ্ছিন্ন রেল সেবা দেওয়া যাবে। প্রকল্পটি শেষে উচ্চ গতিসম্পন্ন, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী ভ্রমণ সম্ভব হবে। ফলে ভ্রমণ সময় কমে যাবে প্রায় ৬০ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশনে বর্তমানে একটি তেলের গাড়ি ও দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে ৫২টি ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে। এই উদ্যোগ আঞ্চলিক যোগাযোগ সহজ করবে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পরিবহণব্যবস্থা উন্নত হবে। উত্তর ভারত থেকে গুরুত্বপূর্ণ রেল সংযোগগুলো স্থাপনের পর এই বিভাগটির গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) মো. ইয়াসিন বলেন, এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে প্রকল্পটির বিষয়ে বলতে পারছি না। তবে প্রকল্পে ঋণ থাকলে তারা সাধারণত কারিগরি সহায়তা করে থাকে। এটা অনেক সময় প্রয়োজন হয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর