অনলাইন ডেস্কঃ বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন হচ্ছে আজ শনিবার (২৮ অক্টোবর)। এই মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
টানেল উদ্বোধনের জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। টানেলের উদ্বোধনকে ঘিরে কর্ণফুলী নদীর দুই পারে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। নানা ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, তোরণ স্থাপন করা হয়েছে টানেলের দুই প্রান্তেই। টানেলের নগর প্রান্ত পতেঙ্গায়। নদীর তলদেশ দিয়ে এই টানেল মিলিত হয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝবরাবর এলাকায়। টানেল পাড়ি দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তের জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
গত দেড় দশকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের যে উন্নয়ন হয়েছে, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে লাখ লাখ মানুষ এ জনসভায় যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জানিয়েছেন, ‘আনোয়ায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’
সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মীদের টানেল এবং এর সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখানো হয়। পতেঙ্গা প্রান্তে দেখা গেছে, টানেলের প্রবেশ মুখের ডান পাশে উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামফলক প্রস্তুত। নিরাপত্তার জন্য টানেলের চারপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
টানেল পাড়ি দিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট সময় লাগবে। সময়ের হিসাবে তা ‘অল্প’ হলেও এর জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে টানেল বাস্তবায়নকারী সেতু কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসিএল)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। দুই দফা ব্যয় সংশোধন করে এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলের ভেতরে থাকা দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার করে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানসহ জানিয়েছেন, ‘খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে এটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। এটা আমাদের প্রকৌশলীদের সক্ষমতার প্রকাশ। এই টানেল চট্টগ্রাম শহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল বদলে দেবে এবং খুলে দেবে বাণিজ্যের বহুমুখী দুয়ার।’
জেলা প্রশাসক আরো জানান, ‘বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল এবং মাতারবাড়িতে ডিপ সি পোর্ট হবে। গভীর সমুদ্র বন্দর হবার পর টানেলের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। মাতারবাড়ি চট্টগ্রামসহ এ অঞ্চল হবে অর্থনৈতিক হাব। এখন শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর হয়ে যে আমদানি রপ্তানি হয় তা হবে এই হাব থেকে। ফলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি ও জিডিপি অনেক বাড়বে।’
জানা গেছে, ১শ’ বছর লাইফটাইমে এই টানেল তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পাঁচ বছর মেইনটেন্যান্স ও অপারেশন করবে চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি। উদ্বোধনের পরদিন সকাল থেকে টানেল জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে আপাতত তিন চাকার যান ও মোটরসাইকেল চলবে না। টানেলের ভেতর কেউ হাঁটাহাঁটিও করতে পারবে না। আবার টানেলের ভেতরে কোনো কারণে সড়ক বা অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটনা ঘটলে যাত্রী ও চালকদের তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেখানে। টানেলের দুটি সুড়ঙ্গ বা টিউবের কোনোটিতে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্য সুড়ঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য দুই সুড়ঙ্গের মধ্যে যাতায়াতের জন্য রয়েছে তিনটি ক্রস প্যাসেজ বা সংযোগ পথ। টানেলে জরুরিভাবে বের হয়ে আসার নির্দেশনামূলক সাইন পোস্ট রয়েছে কিছু দূর পরপর।
টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা নদীর তলদেশ থেকে ৩১ মিটার। অর্থাৎ প্রায় ৯ তলা ভবনের সমান উচ্চতা। আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে টোল প্লাজা। সেখানে যাতে গাড়ির জট না হয়, সেজন্য অন্তত ২০টি টোল বক্স রয়েছে। টানেলের টোল প্লাজা পার হয়ে সংযোগ সড়ক দিয়ে গাড়ি চলে যাবে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী (পিএবি) সড়কের চাতরী এলাকায়।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়িগুলো গোলচত্বর দিয়ে প্রবেশ করে প্রথমেই চলে যাবে বাঁ পাশে। সেখানে রয়েছে স্ক্যানার। স্ক্যানিং শেষে গাড়িগুলো চলে আসবে ওজন স্কেল এলাকায়। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করে তারপর সোজা মূল টানেলে ঢুকে যাবে এসব গাড়ি।
তবে কার, মাইক্রোবাস, বাসসহ এ ধরনের পরিবহনের জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। স্ক্যানারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউভিএসএস (আন্ডারভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম)। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে যাতে আলো নিয়ে চালক ও যাত্রীদের কোনো ধরনের অস্বস্তি না হয়, সেভাবে আলোকায়ন করা হয়েছে। টানেলের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের বোর্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফায়ার প্রুফ (অগ্নিপ্রতিরোধক বোর্ড) বোর্ডও। টানেলের মধ্যে বায়ুপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর রয়েছে জেট ফ্যান।
Leave a Reply