অনলাইন ডেস্কঃ মিথ্যে, ভুল বা অসত্য তথ্য দিয়ে পণ্যের শুল্কায়ন হলে কয়েকশ গুণ বেশি জরিমানা করার সুযোগ রেখে নতুন যে কাস্টমস আইন গতবছর পাস হয়েছে, তার বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
সংগঠনটি বলছে, নতুন আইনে ‘মিথ্যে’ ও ‘অসত্য’ তথ্যের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীর খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানিকারকদের ভোগান্তি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকার মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ‘কাস্টমস আইন ২০২৩ বাস্তবায়ন উদ্বুদ্ধকরণ’ বিষয়ক এক কর্মশালায় নিজেদের উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
২০১৪ সালে নতুন কাস্টমস আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। গতবছর নভেম্বর মাসে ‘কাস্টমস আইন, ২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর গেজেট জারি হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করার দিন থেকেই এ আইন কার্যকর হবে।
এফবিসিসিআই এর পরিচালক মাহবুব চৌধুরি কর্মশালায় বলেন, “আগের আইনে বলা ছিল, কোনো ভুলের কারণে এক হাজার টাকার কম শুল্প দেওয়া না হলে, জরিমানা করা যাবে না। এক হাজারের বেশি হলে জরিমানা করা যাবে। এটি ন্যয়মান হিসেবে ধরা হয়েছিল। নতুন আইনে তা নেই।
‘এতে কর্মকর্তারা বেশি করে জরিমানা করতে পারবেন। নানাভাবে হয়রানি ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হবে।’
কাস্টমস আইন ১৯৬৯ অনুযায়ী, আমদানিকারকের কোনো অসাবধানতা, ভুল বা অসত্য তথ্য দিয়ে পণ্য খালাস করার পর তা ধরা পড়লে ‘শুল্ক আরোপ করা হয়নি’ এমন দাবি করে চিঠি দিতে পারেন রাজস্ব কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন কঠোর করনীতি প্রত্যাহারসহ বেসরকারি খাত উন্নয়নে ১২ প্রস্তাব চেম্বার সভাপতির
যাচাই-বাছাই শেষে যদি দেখা যায়, শুল্ক আরোপ না করা অর্থের পরিমাণ এক হাজার টাকার কম, তাহলে কোনো জরিমানা করা যাবে না। শুধু দাবিকৃত শুল্ক জমা দিতে হবে আমদানিকারককে।
মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘নতুন আইনে এই ন্যয়মান রাখা হয়নি। এটি সংযুক্ত না করা হলে এক টাকার শুল্ক কম হলেও বড় অঙ্কের জরিমানার সুযোগ থাকল, তা দুইশ গুণও করতে পারেন কর্মকর্তারা।’
অ্যানিমাল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সদস্য মোহাম্মদ আফতাব আলম বলেন, ‘তিন বছর আগের কোনো পণ্যর শুল্কায়ন ভুল হয়েছে দাবি করে অর্থ চেয়ে চিঠি দিচ্ছে এনবিআর। আমরাতো আগের শুল্কায়নে পণ্যটি বিক্রি করে দিয়েছি, এখন কীভাবে শুল্ক দেব। এখানে আমার তো কোনো ভুল নাই।’
তিনি বলেন, ‘যুগ্ম-কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তার স্বাক্ষরের পর আমরা শুল্ক জমা দিই। ব্যবসায়ীদের ভুল হলে জরিমানা করা হয়, আর কর্মকর্তাদের ভুলকে নির্দোষ হিসেবে দেখা হয়।’
বিষয়টিকে সমন্বয় করার দাবি জানিয়ে মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন কারণেই ভুল হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, একাধিক পণ্যর একটি কোড। এতে সমস্যা দুই পর্যায়েই হয়, তাই কর্মকর্তাদের ভুল ও ব্যবসায়ীদের ভুলের মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘নতুন আইনে পণ্য নিলামের কোনো ধারা রাখা হয়নি। আইনে সুযোগ না থাকলে বন্দরে আটক হওয়া পণ্য নিলাম করা যাবে না।’
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘পরামর্শটি আমরা বিবেচনায় নিবো। কাস্টমস আইন বাস্তবায়নে ব্যবসায়ী মহলের যৌক্তিক প্রস্তাবগুলোতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে। নতুন আইনটি ব্যবসা সহজ করার উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আগের চেয়ে আরো কম সময়ে পণ্য খালাসের সুযোগ তৈরি হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশেই জরিমান করা হয়। জরিমানা থেকে সরকারের খুব বেশি আয় হয় না। এটা করা হয়, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে শৃঙ্খলা বজায় থাকে।’
‘সব দেশেই কাপড় আমদানি ও রপ্তানি করা হয় গজ বা মিটার হিসাবে মেপে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল হিসাবে আনা কাপড়ও শুল্কায়ন হয় এ পদ্ধতিতে।’
এখন এনবিআর যে রপ্তানির সময় ওজন করে শুল্ক আরোপ করছে, সে কথা জানিয়ে বিজিএমইএর পাঠানো লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘পোশাক রপ্তানির সময়ে হ্যাঙার, পিনসহ বিভিন্ন এক্সেসরিজ ব্যবহার করা হয় প্যাকেজিং করতে। তখন ওজন বেড়ে যায়। ওজনের বদলে পণ্যর সংখ্যা ধরে শুল্কায়ন করা দরকার।’
বিজিএমইএর দাবির বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করতে এনবিআর সব সহযোগিতা করবে ব্যবসায়ীদের।’
অন্যদিকে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছভাবে করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবি জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, ‘শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্নিত হচ্ছে। নতুন আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবগুলো এনবিআরে জমা দেওয়া হবে। আইনটি বাস্তবায়নের আগে প্রয়োজনীয় সংশোধন দরকার।’
শুল্কায়নে চিনিকে ‘বিলাসী’ থেকে আবশ্যকীয় বা সাধারণ মানের খাদ্যপণ্য ধরে শুল্কায়নের দাবি জানান ব্যবসায়ী আবুল হাশেম। তিনি বলেন, চিনিতে অনেক বেশি শুল্ক হওয়ায় বাজারে কম দামে বিদেশি চিনি প্রবেশ করছে।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আইন মেনেই ব্যবসা করতে চায়। তারা সহযোগিতা পেলে অর্থনীতি আরো এগিয়ে যাবে।’
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ২৪