অনলাইন ডেস্কঃ ১ জুলাই ২০২৩ থেকে ৪৩টি সেবার ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, রিটার্নের প্রমাণপত্র বানিয়ে জমা দেবেন। কিন্তু সেটা এখন আর সম্ভব হবে না। কারণ, রিটার্ন জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়কর বিভাগ রিটার্ন জমার তথ্য অনলাইনে হালনাগাদ করে। আর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা অনলাইনে রিটার্ন জমার তথ্য যাচাই করবে। যদি কোনো কারণে যাচাই না করেন, তবে উপ–কর কমিশনার ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড করতে পারবেন। তাই এখন রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র নিয়ে কারসাজির সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন আয়কর আদায়ে ‘স্বল্প মেয়াদি কৌশল’ প্রয়োগ করুন
আসুন জেনে নিই, যেসব সেবা গ্রহণ রিটার্নের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক
১. করারোপযোগ্য আয় না থাকার পরও ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ গ্রহণে;
২. কোনো কোম্পানির পরিচালক বা উদ্যোক্তা শেয়ারধারী হতে গেলে;
৩. আমদানি বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদপ্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;
৪. সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও নবায়নে;
৫. সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিতে;
৬. সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হতে এবং লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও নবায়নে;
৭. সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০ লাখ টাকার জমি, ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি বা লিজ বা হস্তান্তর বা বায়নানামা বা আমমোক্তারনামা নিবন্ধনে;
৮. ক্রেডিট কার্ডপ্রাপ্তি ও বহালে;
৯. চিকিৎসক, দন্তচিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদপ্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;
১০. মুসলিম বিবাহ–সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে নিকাহ রেজিস্ট্রার, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনের অধীনে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক ও বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে রেজিস্ট্রার হিসেবে সনদপ্রাপ্তি বা নিয়োগ বহাল রাখতে;
১১. ট্রেড বডি বা পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদপ্রাপ্তি ও বহালে;
১২. ওষুধ বা ড্রাগ সনদ, ফায়ার সনদ, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআইয়ের সনদ ও ছাড়পত্রপ্রাপ্তি ও নবায়নে;
১৩. গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগপ্রাপ্তি ও বহাল এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;
১৪. লঞ্চ, স্টিমার, মাছ ধরার ট্রলার, কার্গো, কোস্টারসহ যেকোনো প্রকারের ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সনদপ্রাপ্তি ও বহালে;
১৫. পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইট উৎপাদনের অনুমতিপ্রাপ্তি ও নবায়নে;
১৬. সিটি করপোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু বা পোষ্য ভর্তিতে;
১৭. সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগপ্রাপ্তি বা বহালে;
১৮. কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটর শিপ প্রাপ্তি ও বহালে;
১৯. আগ্নেয়াস্ত্রের সনদপ্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;
২০. আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলায়;
২১. ডাকঘরে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে;
২২. ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত খোলা ও বহাল রাখতে;
২৩. ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে;
২৪. পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে;
২৫. মোটরযান, স্পেস বা স্থান, বাসস্থান অথবা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে অংশীদারি অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে;
২৬. ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক বা উৎপাদন কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানকারী পদমর্যাদায় কর্মরত ব্যক্তির বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে;
২৭. সরকারি কর্মচারীর বেতন-ভাতাপ্রাপ্তিতে;
২৮. মোবাইল ব্যাংকিয়ে টাকা স্থানান্তর এবং মোবাইল ফোনের রিচার্জে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থপ্রাপ্তিতে;
২৯. উপদেষ্টা বা পরামর্শক সেবা, ক্যাটারিং সেবা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেবা, জনবল সরবরাহ, নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহ সেবা বাবদ কোনো কোম্পানি হতে অর্থপ্রাপ্তিতে ;
৩০. এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে মাসে ১৬ হাজার টাকার বেশি অর্থপ্রাপ্তিতে;
৩১. বিমা কোম্পানির এজেন্সি নিবন্ধন বা নবায়নে;
৩২. দ্বিচক্র বা ত্রিচক্র মোটরযান ছাড়া অন্যান্য মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে;
৩৩. এনজিওবিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিও বা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার অনুকূলে বিদেশি অনুদানের অর্থ ছাড়ে;
৩৪. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেশে বসবাসকারী ভোক্তাদের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ে;
৩৫. কোম্পানি ও সোসাইটি আইনে নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদের আবেদনে;
৩৬. পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা সরবরাহের জন্য দরপত্র দাখিলকালে;
৩৭. কোনো কোম্পানি বা ফার্ম থেকে পণ্য বা সেবা গ্রহণে;
৩৮. পণ্য আমদানি বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিলে;
৩৯. রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য ভবন তৈরির নকশা দাখিলে;
৪০. স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্ট্রিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন ও সনদ বহাল রাখতে;
৪১. ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা, সোসাইটি এবং সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খোলা ও চালু রাখতে;
৪২. সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো ব্যক্তির বাড়িভাড়া বা লিজ গ্রহণকালে বাড়ির মালিকের ক্ষেত্রে;
৪৩. কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ থেকে পণ্য বা সেবা সরবরাহে ওই সরবরাহকারী বা সেবা প্রদানকারীরক্ষেত্রে।
তাই যাদের টিআইএন আছে, তারা আর দেরি না করে এখনই রিটার্ন জমার প্রস্তুতি নিন।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, আয়কর আইনজীবী ও নির্বাহী পরিচালক, গোল্ডেন বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো
Leave a Reply