আজ ১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

মহান স্বাধীনতা দিবস আজ


চাটগাঁর সংবাদ ডেস্কঃ মহান স্বাধীনতা দিবস আজ। ১৯৭২ সাল থেকে প্রতিবছর ২৬ মার্চ উদযাপিত হয় দিবসটি। এদিন স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা, লাখো শহিদ, ও বীরাঙ্গনাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মাধ্যমে স্মরণ করে বাঙালি জাতি।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি আর্মির অপারেশন সার্চলাইট চলাকালে (কালরাত) গ্রেপ্তার হওয়ার প্রাক্কালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে এক বার্তা দিয়েছিলেন। তার সাক্ষরিত বার্তাটি চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে প্রচারের জন্য পাঠানো হয়। এতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।’

আরও পড়ুন খেলাঘরের আলোক প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি, ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ স্বীকৃতির দাবি

এর পরদিন ২৬ মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেমসহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেছিলেন। তার পরদিন ২৭ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ইংরেজিতে ভাষণ দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে ভাষণে মেজর জিয়া বলেছিলেন, ‘আমি, মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরো ঘোষণা করছি, আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এবং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার।’ ১৯৭১ সালে ২৭ মার্চের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে যা নয় মাস স্থায়ী হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বেশ বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপন করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে উদ‌যাপন শুরু হয়। ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, সজ্জিত হয় আলোকসজ্জায়। দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান প্রধান সড়ক সমূহও জাতীয় পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকে। জাতীয় প্যারেড ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ প্রদর্শিত হয়। পত্রিকা, বেতার অনলাইন ও টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশেষ বাণী দিয়ে থাকেন। ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটিতে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান প্রচলন করে বাংলাদেশ সরকার। এটি দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহিদদের স্মরণে এই পদক প্রদানের কার্যক্রম গৃহীত হয়। পুরস্কারটি জাতীয় জীবনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের নাগরিক বা গোষ্ঠিকে প্রদান করা হয়ে থাকে। এবছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক ও রাণী জেতসুন পেমা। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর দেশটি বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসাবে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিলো।

তথ্যসূত্র: সংগৃহীত


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর