আজ ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছবি: বাল্যবিবাহ হ্রাসে বিএনপিএস এর মতবিনিময় সভা

বাল্য বিবাহ হ্রাসে ৩ প্রস্তাব বিএনপিএস এর মতবিনিয়ময় সভায়


অনলাইন ডেস্কঃ বাল্য বিবাহ হ্রাসে তিনটি প্রস্তাবে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হলো-শিক্ষার প্রসার, সচেতনতা ও আইনের প্রয়োগ। শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিএনপিএস চট্টগ্রাম কেন্দ্র আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা উল্লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন।

নগরীর স্টেশন রোডের একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় বক্তারা বাল্য বিবাহ হ্রাসে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেছেন। বক্তারা বলেন, ‘শিক্ষার প্রসার, সচেতনতা ও আইনের প্রয়োগই পারে বাল্য বিবাহ হ্রাস করতে। এজন্য শিক্ষার হার বৃদ্ধি, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মেয়েদের ঝরে পড়া রোধ, সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং যথাযথ আইন প্রয়োগের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে সারাদেশের নানা অঞ্চল থেকে মানুষ আসে। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে তাই জনপ্রতিনিধি, সমাজ সেবক, সমাজের সর্দারদের ভূমিকা খুব জরুরী। শুধু আইন আর বিধিমালা নিয়ে কাজ হবে না। আজ কর্মক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি অনেক বেশি। শিক্ষায় মেয়ে শিশুদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। সব অভিভাবক নিজের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে চান। শিক্ষায় যেমন সচেতনতা এসেছে এক্ষেত্রেও আসবে। শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে হ্রাস পাবে বাল্য বিবাহ। এখন বাল্য বিবাহ হচ্ছে লুকিয়ে। পুরনো ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকারি সংস্থাগুলোকে গ্রামের দিকে নজর বাড়াতে হবে। শিক্ষার আলো না থাকলে কেউ সমাজে আলো ছড়াবে কিভাবে? সবাইকে শিক্ষিত হতে হবে।’

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে চাইলে বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে হবে। চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলার সকল ইউনিয়নে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কমিটি আছে। নগরীতে ৪১ টি ওয়ার্ড কমিটি থাকার কথা। একটু আগেও ফোন এসেছে। বাকলিয়াতে একটি বাল্য বিয়ের ঘটনা নিয়ে। সাথে সাথে স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলরকে জানিয়েছি। শুক্র-শনিবার বেশি বিয়ে হয়। আমাদের কানে আসলে অবশ্যই বাল্য বিয়ে বন্ধ হবে। পরিবারকে কাউন্সিলিং করতে হবে। মূলত পরিবারই এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে। সচেতনতা কার্যক্রম আমরা করে চলেছি। চট্টগ্রাম শহরে অনেক কমেছে বাল্য বিয়ে।

আরও পড়ুন ‘নারী-শান্তি-নিরাপত্তায়’ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিএনপিএস এর কর্মশালা অনুষ্ঠিত

শহর সমাজসেবা কার্যালয়-৩ এর সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক কিছু আজ জানলাম। অল্প বয়সীদের বিবাহ ঠেকাতে গেলে কাউন্সিলিং এর বিকল্প নেই। কারণ তারা শিশু। একমাত্র কাজী সাহেব ও ইমাম
সাহেবরা বাল্য বিবাহকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। শিল্পায়নের সাথে উন্নত বিশ্বে বাল্য বিবাহ একদম কমে গেছে। বিবাহ নিবন্ধন অনলাইন করতে হবে। তখন তথ্য বা ডকুমেন্ট টেম্পার করার কোনো সুযোগ থাকবে না। সচেতনতা বাড়াতে হবে।
জনপ্রতিনিধিদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।’

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাজী সমিতির সভাপতি কাজী ইউসুফ চৌধুরী বলেন, ‘কেউ বিবাহের কথা জানলেই আমরা শুরুতে মেয়ে ও ছেলের বয়স জেনে নিই। বাল্য বিবাহ আগে যেরকম মহামারী ছিল। এখন অনেক কমেছে। অতীতে অনেকে সচেতন ছিলেন না। বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিত না। এখন তা হয় না। বিয়ের কার্যক্রম এখন বেশি সম্প্রসারিত হয়ে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে পাত্রী উপস্থিত থাকে না। পাত্রী দেখার সুযোগ থাকে না। অনুষ্ঠানের মধ্যে কখনো কখনো সব কাগজপত্র যাচাই করা সম্ভব হয় না। আমাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে করার সুযোগ দিতে হবে। যদি শুধু অফিস কেন্দ্রিক বিবাহ বাধ্য বাধতামূলক করে দিত সরকার তাহলে বাল্য বিবাহ হত না। এজন্য আইন করা উচিত। পাশাপাশি এলাকার কাজী যদি এলাকার বিয়ে করানো বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয় তাহলে আরো কমবে। আমরা কাজীরা বাল্য বিয়ের পক্ষে না। কারণ বাল্য বিয়ে করানো হলে আমাদের রেজিস্ট্রেশনই থাকে না।’

বাগমনিরাম সিরাজা খাতুন সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি উম্মে হাবিবা আঁখি বলেন, ‘নারীদের কর্ম জগতে স্বাগত জানাতে হবে। আমরা কাজ করতে কম আগ্রহী। কর্মক্ষেত্রে আসলে নারীরা সচেতন হবে। সন্তানের প্রতি সজাগ হতে হবে। মায়েদের উচিত তাদের ছেলেদের সচেতন করা। প্রত্যেক ওয়ার্ডে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি করার দাবি জানাই।’

বিএনপিএস চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমদের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রেখেছেন আকাশ কমিউনিটি ফোরামের উপদেষ্টা সমাজ সেবক জাহাঙ্গীর মোস্তফা, বাগমনিরাম সিরাজা খাতুন সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা বেগম, পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সচিব সাজু মহাজন। উপস্থিত ছিলেন চার চাকতাই সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিক চন্দ্র বৈদ্য, চট্টেশ্বরী কালি মন্দিরের সভাপতি ডা. বিজয় চক্রবর্তী এবং চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার আবাসিক অন্তেবাসী ভদন্ত শীলব্রত ভিক্ষু প্রমুখ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর