আজ ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দৈনিক নামাজের উপকারিতা


শরিফ আহমাদ

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে নামাজের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নামাজ একটি ইবাদত, তবে এর মাধ্যমে মানুষের শারীরিক নানান উপকারও হয়। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুস্থতা বজায় থাকে। এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপকারিতা তুলে ধরা হলো।

তাহাজ্জুদ নামাজ : তাহাজ্জুদ একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের প্রধান মাধ্যম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। সহিহ মুসলিম : ২৭২৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দৈনিক তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেছেন। উম্মতকে পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায়ে অস্থিরতা, অনিদ্রা রোগ থেকে বাঁচা যায়। চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অসুখ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। অন্যরকম এক প্রশান্তি হাসিল হয়। ফলে মানুষ সারা দিন নির্ধারিত কাজের মধ্যে প্রফুল্ল থাকতে পারে।

ফজরের নামাজ : ফজরের নামাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। অফুরন্ত সওয়াব অর্জন হয়। আল্লাহর জিম্মায় থাকার সৌভাগ্য নসিব হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল সে মহান আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হলো। সহিহ মুসলিম : ১৩৭৯

ফজরের নামাজের মৌলিক একটা উদ্দেশ্য হলো মানুষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে আকৃষ্ট করা। মেসওয়াক রাতভর মুখে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। অজুর মাধ্যমে মানুষের আলস্য দূর হয়। এগুলো সুস্থ থাকার বড় উপকরণ। সারারাত আরাম শেষে খালি পেটে দীর্ঘ নামাজ পড়া কষ্টকর এবং ক্ষতিকর ছিল। তাই মহান আল্লাহ ফজরের নামাজকে সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছেন।

জোহরের নামাজ : জোহরের নামাজের গুরুত্ব অনেক। মিরাজ থেকে ফিরে এসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত জিবরাইল (আ.)-এর ইমামতিতে সর্বপ্রথম জোহরের নামাজ আদায় করেছেন। হজরত আবু বারজা আসলামি (রা.)-কে মহানবীর নামাজের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জোহরের নামাজ সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন। সহিহ বোখারি : ৫৪৭

নিয়মিত জোহরের নামাজ শরীরের ক্লান্তি দূর করে। কেননা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মানুষ জীবিকা উপার্জনের কাজে ব্যস্ত থাকে। এ সময় ধুলোবালির বিষাক্ত কেমিক্যাল বাতাসে উড়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে লাগে। জোহরের নামাজের জন্য মানুষ যখন অজু-গোসল করে তখন ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। নামাজের বরকতে ক্ষতিকর উপাদানগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

আসরের নামাজ : আসরের নামাজ হলো মধ্যবর্তী সময়ের নামাজ। পবিত্র কোরআনে আসরের নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা নামাজগুলো ও মধ্যবর্তী নামাজের হেফাজত করো এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে। সুরা বাকারা :২৩৮

আসরের নামাজ নিয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। সহিহ বোখারি : ৫৫৩

আসরের নামাজ আদায়ের ফলে মানুষের অনুভূতি সজীবতা লাভ করে। ক্লান্তি এবং অস্থিরতা দূর হয়ে যায়। কেননা আসরের পর পৃথিবীর আবর্তন মানুষের মধ্যে প্রচ- চাপ সৃষ্টি করে। পশুপাখি ও বিভিন্ন জীবজন্তুর ওপর রাতের অনুভূতি কার্যকর হতে শুরু করে। আসরের পরে সামান্য সময়ের জিকির মানুষকে বিপজ্জনক প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে দেয়।

মাগরিবের নামাজ : পবিত্র কোরআন-হাদিসে মাগরিবের নামাজের আলাদা গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, আর সকাল-সন্ধ্যায় (ফজর ও মাগরিবের সময়) আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো অর্থাৎ নামাজ পড়ো। সুরা আলে ইমরান : ৪১

মাগরিবের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায়, যতবার যায় আল্লাহ তত বড় তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির উপকরণ প্রস্তুত করেন। সহিহ বোখারি : ৬২২

মাগরিবের নামাজের পার্থিব পুরস্কার হলো মানুষ আল্লাহর কৃতজ্ঞতার প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়। স্বর্গীয় আনন্দ অনুভব করে। আনন্দের প্রভাব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা ও মর্যাদা তৈরি হয়। সন্তান নেককার হয়ে পিতা-মাতার সেবাযতেœ মনোযোগী হয়।

এশার নামাজ : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজ আরও গুরুত্বপূর্ণ। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন মুনাফিক চেনা যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর নামাজ হলো এশা ও ফজরের নামাজ। তারা যদি এই নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জানত, তাহলে অবশ্যই হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাজে শরিক হতো। সহিহ বোখারি : ৬১৫

দিনের কাজকর্ম থেকে অবসর হয়ে রাতে মানুষ বেশি খাবার খায়। আর রাতের খাওয়ার পর ঘুমিয়ে গেলে মারাত্মক রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য আল্লাহতায়ালা এশার নামাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে মানুষকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছেন। কেননা নামাজের চেয়ে উত্তম ব্যায়াম পৃথিবীতে আর একটিও নেই। মহান আল্লাহর প্রত্যেকটি বিধান মানুষের জন্য কল্যাণকর। মহানবীর প্রত্যেকটি সুন্নত বিজ্ঞানসম্মত। তাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহর বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর