চাটগাঁর সংবাদ ডেস্ক
সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে এবং নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে নির্বাচনী পরিকল্পনা গ্রহণ করছে ক্ষমতাসীন দলটি। এ জন্য পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
বর্তমানে পাঁচটি টার্গেট সামনে রেখে এগোচ্ছেন দলটির নেতারা। এর মধ্যে রয়েছে, সংসদ নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই, কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন, তরুণ ভোটার টানতে ইশতেহারে চমক, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, উন্নয়ন প্রচার করে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, মুখে না বললেও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। তারা ভিতরে ভিতরে সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। আমরাও চাই নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। সব দলের জনপ্রিয়তা যাচাই হোক। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকারপ্রধান রেখেই যথাসময়ে নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই। এ কাজ নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী) নিজেই করছেন। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক আগেই দলের প্রার্থী বাছাই শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে এবং নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ- এটা ধরেই সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান সংসদে থাকা অনেক এমপিকে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে আগের চেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন।
এ ছাড়াও নতুন মুখ যাকে আগামী নির্বাচনে নৌকা দেওয়া হবে তাদের কেউ কেউ সংকেত পেয়েছেন বলেও জানা গেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, টানা তিন মেয়াদের উন্নয়ন, গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীর ওপর ভর করেই চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে চায় আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যেই তৃণমূল গোছানোর কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সারা দেশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনো বেশ কিছু জেলা মেয়াদোত্তীর্ণ। তবে নতুন করে আর সম্মেলন করবে না দলটি। কিন্তু সম্মেলন হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি এমন জেলাগুলোকে দ্রুত কমিটি শেষ করতে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে নড়াইল ও বরগুনা জেলাকে দ্রুত কমিটি করতে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। ময়মনসিংহ মহানগরকে চিঠি দেওয়া হলেও তারা এক দিনের নোটিসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়ে তা অনুমোদন করিয়েছেন। জানা গেছে, জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে আগামী মাসে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি অক্টোবর মাসে বেশ কয়েকটি জেলায় সমাবেশে অংশ নেবেন। অনেক মেগাপ্রকল্পও এ মাসে উদ্বোধন করবেন তিনি। স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন পৌঁছে দিয়ে বর্তমান সরকারকে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আনতে নৌকায় ভোট চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। সমাবেশগুলোকে মহাসমাবেশে রূপ দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘টানা তিন মেয়াদে অনেক উন্নয়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেগুলোর সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছে। আগামী মাসেও বেশ কিছু বড় প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। যেসব জায়গায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করবেন, সেখানে জনসভাও করবেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়ন পৌঁছে দিয়ে নৌকায় ভোট চাইবেন। তিনি বলেন, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকায় জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে করে যেমন ‘ডেভেলপমেন্ট ডেমোনেস্ট্রেশন’ হবে তেমনি দলের নেতা-কর্মীরাও উজ্জীবিত হবেন। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা মাঠ পর্যায়ে চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকাতে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছেন তারা। দেশব্যাপী দ্রুত এই কাজ এগিয়ে চলছে। নভেম্বরের আগেই সারা দেশে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে জেলা-উপজেলায় জোরালোভাবে কাজ চলছে। স্থানীয়ভাবে সমাধান না হলে উভয় পক্ষ থেকে ঢাকায় ডেকে এনে দলের সিনিয়র নেতাদের মাধ্যমে ঐক্যের বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি আসনে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ছোটখাটো সমস্যা যেখানে আছে, সেগুলো মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। ঐক্যের বার্তাই দেওয়া হচ্ছে জেলা-উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরাবর তরুণ ভোটার ও নারী ভোটার টানার কৌশল থাকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। এবারও তাই রাখা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং সেমিনারের মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তযোগ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো বিভিন্ন বিষয়ের সুপারিশ বা আপডেট করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এর আওতায় সব ভোটারের কাছে নিজেদের কাজ ও উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে দেশজুড়ে থাকা দলীয় কার্যালয়গুলোতে স্থাপন করা হচ্ছে স্মার্ট কর্নার। এ উদ্যোগের আওতায় একটি সুশৃঙ্খল ক্যাম্পেইন টিমের মাধ্যমে ঘরে ঘরে প্রত্যেক ভোটারের কাছে নির্বাচনী বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এ জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মশালায় মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এই প্রশিক্ষকরা সারা দেশে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেবে। আগামী নির্বাচনে স্মার্ট কর্নারের মাধ্যমেই সারা দেশে প্রচারণা টিম ব্যবস্থাপনা করা হবে। প্রতিটি ভোটারের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা পৌঁছাতে স্মার্ট কর্নার হবে একটি কার্যকরী মাধ্যম।
Leave a Reply