চন্দনাইশ প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের চন্দনাইশে নৈশপ্রহরীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে মুদি দোকানের গোডাউন, ফার্নিচার দোকান ও বসতঘরে নাশকতার আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। জায়গার বিরোধকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গার মালিক। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এতে ৩ কোটি টাকার চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে উপজেলার বরকল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইমাদারী গ্রামের নিদাগের পাড়ায় একদল মুখোশ পরিহিত নাশকতাকারীরা এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চন্দনাইশ সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের কমান্ডার আরেফ আসমার জয় এর নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা এবং চন্দনাইশ থানা পুলিশের সদস্যরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১২ থেকে ১৫ জন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত প্রথমে বাজারে এসে নৈশপ্রহরী আবুল মনজুর (৩৫) ও মো. নাছিরকে (৩৬) বেধড়ক মারধর করেন এবং তাদেরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। এরপর নাশকতাকারীরা গান পাউডার ছিটিয়ে মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের বিশাল গোডাউনে আগুন লাগিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। মুহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো মুদির দোকানের গোডাউন, পার্শ্ববর্তী আরেকটি ফার্নিচারের দোকান ও পিছনে বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
পরে খবর পেয়ে চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে টানা দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণের আগেই গুদামের অধিকাংশ পণ্য অর্থাৎ জিরা, এলাচ, সয়াবিন তেল, চিনি ও তেজপাতা, মোটরসাইকেল সহ বিভিন্ন মশলা সামগ্রী পুড়ে ছাই যায় এবং ফার্নিচারের দোকান মালামাল ও বসতঘরের জিনিসপত্র পুড়ে ছাই যায়।
ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন— মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ আলমগীর ইসলাম ও জাহাঙ্গীর (মুদি দোকান ও গোডাউন), ফার্নিচার দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী আবদুল করিম বাবুল এবং মফজল আহমদ সওদাগরের বসতঘর। পার্শ্ববর্তী ছৈয়দ আহমদের মুদি দোকানও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
নৈশপ্রহরী আবুল মনজুর ও মো. নাছির স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরেছেন।
নৈশপ্রহরী আবুল মনজুর ও মো. নাছির বলেন, ১২ থেকে ১৫ জনের একটি মুখোশধারী দল প্রথমে বাজারে আসেন। এরপর তারা কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমাদেরকে বেধড়ক মারধর করে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। পরে তাদের মধ্যে কয়েকজন গুদামে আগুন লাগিয়ে দেন এবং দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে আমরা চিৎকার করলে এলাকাবাসী এগিয়ে আসেন।
মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মশলা সামগ্রী, সয়াবিন তৈল ও চিনিসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করে এখানে গুদামজাত করতাম। পরবর্তীতে সে মালামালগুলো এখান থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হতো। আমরা মূলত এখানে জায়গা ভাড়া নিয়ে গুদামটি স্থাপন করেছি। আমাদের সঙ্গে কারো কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। তবে রাতের আঁধারে কে বা কারা আগুন দিয়ে আমাদের গুদামটি সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিয়েছে। এতে আমাদের প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে পুরো গোডাউন ও মুদি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত মফজল আহমদ সওদাগর বলেন, জায়গার বিরোধকে কেন্দ্র করে গত রাতে পরিকল্পিতভাবে দাহ্য পদার্থ দ্বারা অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা জনিয়েছেন তিনি।
চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মো. কামরুল হাছান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সরোয়ার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে পুলিশের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এটি নাশকতা নাকি পূর্ব শত্রুতার জের, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনাটি তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply