
সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল:
গুণে সমুজ্জ্বল, অথচ প্রচারে বিমুখ- এমন এক নিরহংকারী মানুষের নাম প্রিন্সিপাল খায়রুল বশর চৌধুরী। তিনি (প্রিন্সিপাল খায়রুল বশর চৌধুরী) চট্টগ্রামের তৎকালীন পটিয়া থানার (বর্তমান চন্দনাইশ উপজেলার) ১৯ নম্বর বরকল ইউনিয়নে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি আবদুল গনি চৌধুরী ও মাতার নাম আমেনা বেগম চৌধুরী। পিতা-মাতার কাছে প্রারম্ভিক শিক্ষা নিয়ে তিনি স্থানীয় মক্তবে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে পটিয়া আবদুস সোবহান- রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক, কানুনগোপাড়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সন্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষকতা বা কর্মজীবনের শুরুতে তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য সোনা মিয়া চৌধুরীর অনুরোধে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা বিপ্লবী মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী প্রতিষ্ঠিত বরকল শামসুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন। পরবর্তীর সাতকানিয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর বাঁশখালী কলেজ, সীতাকুণ্ড কলেজ ও ফটিকছড়ি কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দিয়ে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
দাম্পত্য জীবনে এক মহীয়সী নারী আলহাজ্ব সোলতানা রেজিয়া বশর-কে নিয়ে তিনি সুখের সংসার গড়েন। তাঁর দুই পুত্র ও ছয় কন্যা সন্তান রয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত।
জীবদ্দশায় তিনি অনেক গরীব মানুষকে আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা করেছেন। অনেককে বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন ও শিক্ষা উপকরণ দিয়েছেন। সামনে পড়া কোন ভিক্ষুককে খালি হাতে ফিরাননি। ফরিয়াদী আসলে ইনসাফ করেছেন।
তিনি অত্যন্ত ধার্মিক লোক ছিলেন। গাউসে জামান হযরত আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) হুজুরের মুরীদ ছিলেন। নিয়মিত হাজিরা দিতেন বলুয়ারদীঘি পাড়স্থ খানকাহ্ শরীফে। কলেজের অধ্যক্ষ হলেও একজন ফানা ফিশ শাইখ ছিলেন। নিজ হাতে জুলুসের পোস্টার লাগাতেন সাধারণ মানুষের মত।
তিনি ১৯৮৫ সালের ৬ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কবরে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। এক বছর দুই মাস পর অর্থাৎ ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে তাঁর কবরের মাটি ফাঁক হলে বা মাটি সরে গেলে তাঁর মৃতদেহ অক্ষত ও অপরিবর্তিত অবস্থায় এবং ধাবধবে সাদা কাফনে দেখা যায়। ইন্তেকালের সময় মাথা, মুখমণ্ডলসহ শরীর যে রকম ছিল, ঐদিনও একই রকম দেখা যায়।
কাল ৬ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার তাঁর চল্লিশতম মৃত্যু বার্ষিকী। তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র মুহাম্মদ সাঈদ ইবনে খায়ের জানান- এ উপলক্ষ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিনব্যাপী আয়োজনে রয়েছে- পবিত্র খতমে কুরআন শরীফ, খতমে গাউসিয়া শরীফ, স্মারক আলোচনা সভা, কবর জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং মুনাজাত। সভায় সভাপতিত্ব করবেন অধ্যক্ষ খায়রুল বশর চৌধুরীর জ্যেষ্ঠপুত্র মুহাম্মদ আবদুল মালেক হিরু। উদ্বোধক থাকবেন গাউসিয়া কমিটি বরকল ২নং ওয়ার্ডের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সোলাইমান খান। প্রধান অতিথি থাকবেন গাউসিয়া কমিটি- চন্দনাইশ উপজেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
Leave a Reply