আজ ৪ঠা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মাতৃদুগ্ধ দিবস: স্তন্যপানকে অগ্রাধিকার দিন


সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল: পহেলা আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস এবং ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়। এই সময়টায় মায়ের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং নবজাতকদের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য উৎসাহিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ একটি বার্ষিক উদযাপন যা প্রতি বছর পৃথিবীর ১২০টিরও বেশি দেশে ১ থেকে ৭ আগস্ট পালন করা হয়।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোয় উৎসাহ দিতে এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে এই কর্মসূচি। এবারের বা ২০২৫ সালের বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- “স্তন্যপানকে অগ্রাধিকার দিন: টেকসই সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তুলুন”, according to Max Healthcare. এই প্রতিপাদ্যটি স্তন্যপানের গুরুত্ব এবং একটি দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস এবং সপ্তাহ পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো- শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য মায়ের দুধের গুরুত্ব তুলে ধরা। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোতে মায়েদের উৎসাহিত করা। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মায়ের দুধের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক সমর্থন ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মাতৃদুগ্ধ শিশুর জন্য একটি প্রাকৃতিক ও আদর্শ খাবার, যা তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অপরিহার্য। তাই, এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি।

বিশ্বের অনেক দেশে চালু রয়েছে ‘স্কুল মিল্ক প্রোগ্রাম’, যেখানে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের এক গ্লাস দুধ সরবরাহ করা হয়। এটি শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে, বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশেও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও সুস্থ ও মেধাবী হয়ে উঠবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দুধ উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। উন্নত পশু চিকিৎসা, মানসম্মত খাদ্য ও টেকসই খামার ব্যবস্থাপনা দুধ উৎপাদনকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে পারে। সরকার ও বেসরকারি খাতে ইতিমধ্যেই নানা উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে, যেখানে প্রাণীর কল্যাণ ও পরিবেশ সুরক্ষাও গুরুত্ব পাচ্ছে।

১৯৯২ সালে সর্বপ্রথম ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশন (ডব্লিউএবিএ) “বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ” পালন করেছিল এবং বর্তমানে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এবং তাদের অন্যান্য সহযোগী ব্যক্তি, সংস্থা ও সরকার দ্বারা ১২০টিরও বেশি দেশে এটি পালন করা হয়। বিশ্বব্যাপী বুকের দুধ খাওয়ানোর চর্চা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সর্বত্র স্তন্যদানের জন্য সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ডব্লিউএবিএ গঠিত হয়েছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মার্কিন শিশুরোগবিদ্যা আকাদেমি (এএপি) বুকের দুধ খাওয়ানোর উপর খুব গুরুত্ব আরোপ করে, কারণ এটি মা আর শিশু উভয়ের জন্য অত্যন্ত লাভজনক। উভয়ই ছ’মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে এবং এর পর দু’বছর বা তারও বেশি বয়স পর্যন্ত পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে নিয়মিত ভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়।

শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় প্রায় তিন দশক আগে, যার ভিত্তি “ইনোসেন্টি ডিক্লারেশন” (Innocenti Declaration) নামের একটি স্মারকলিপি। এটি তৈরি করে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ১৯৯০ সালে সে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে বিভিন্ন দেশের সরকার, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচওসহ অন্যান্য সংস্থা। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ এই ইনোসেন্টি ঘোষণার স্মরণার্থে উদযাপিত হয়।

এই দুগ্ধ দিবস বা সপ্তাহ সচেতন করে- মাতৃদুগ্ধ শুধুই একটি খাদ্য নয়, এটি সুস্থ জীবনের অংশ। এটি তৈরি করতে যাঁরা পরিশ্রম করেন তাঁদের অবদান, মানবকল্যাণ ও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক (সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল): সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর