বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বেশির ভাগ জুম খেতে বুনো ইঁদুরের তাণ্ডব বেড়েই চলেছে। রাতের আঁধারে পাকা ধান, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতি শস্য সাবাড় করছে ইঁদুরের ঝাঁক। ফলে খাদ্য সংকটের শঙ্কায় পড়েছেন পাহাড়ি উঁচু ভূমির চাষীরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অবশ্য বলছে, এ ব্যাপারে তারা সজাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এ বছর ৮ হাজার ৭৯৭ হেক্টর ভূমিতে জুম চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে। বেশির ভাগ অঞ্চলে অনাবৃষ্টির কারণে ধানের ফলন কম হলেও নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামা উপজেলায় বৃষ্টির পরিমাণ তুলনামূলক ভালো ছিল। তাই ওই দুই উপজেলায় জুমের ফলনও ভালো হয়েছে।
জুমচাষীরা জানান, অনাবৃষ্টির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার সব ফসলই এক-তৃতীয়াংশ কম ফলন হয়েছে। বুনো ইঁদুর তাও সাবাড় করে দিচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। বন বিভাগ বলছে, দেশে ২৯ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ে এ বছর মিতিঙ্গা ও বাড়ীওয়ালা প্রজাতির বাঁশে পুষ্পায়ন হচ্ছে। আর এ সময় ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, বৃষ্টিপাত কম হলে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে যায়। রুমা উপজেলা পরিদর্শনকালে জুম খেতে ইঁদুরের আক্রমণের চিত্র দেখেছি। ইঁদুর নিধনের পরামর্শও দিয়েছি। তবে গত কয়েকদিনে বান্দরবানে বৃষ্টি বেড়েছে। এতে প্রাকৃতিকভাবেই ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব কমে যাবে। তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জুমচাষীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শেষ হলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রতিবেদন দেয়া হবে। জুমিয়াদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সজাগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
চাষীরা জানান, ইঁদুরগুলো আকারে কাঠবিড়ালির চেয়ে বড় আছে, ছোটও রয়েছে। বুনো ইঁদুরগুলো দেখতে হালকা লালচে, পেটের অংশ সাদাটে ও ঘরের আশপাশে দেখা ইঁদুরের তুলনায় কিছুটা লম্বা। দ্রুত দৌড়াতে পারে। পাহাড়ের প্রচলিত বাস্তবতা অনুযায়ী বাঁশের পুষ্পায়ন হলে ইঁদুরের উপদ্রব বাড়ে বলে জানিয়েছেন রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চহাইমং মারমা। জুমচাষীদের বরাত দিয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে জুমে ফলন কম হয়েছে। এর পরও যা হয়েছে তা সাবাড় করে দিচ্ছে ইঁদুরের ঝাঁক। দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নের বেশির ভাগ জুমচাষীর বাস্তবতাও একই রকম বলে জানান পরিষদের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা।
Leave a Reply