আজ ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হালদায় ডলফিন মৃত্যুর রহস্য -ড. শফিকুল ইসলাম


মোঃ শোয়াইব,হাটহাজারী:

ডলফিন পানিতে বসবাসকারী স্তন্যপায়ী প্রাণী কিন্তু এরা মাছ নয়।মানুষের মতোই ডলফিন ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়, বাচ্চা জন্ম দেয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাচ্চাকে দুধ পান করায়। বাংলাদেশে সাত প্রজাতির ডলফিন পাওয়া যায় (আইইউসিএন-বাংলাদেশ-২০১৫)। যার মধ্যে গাঙ্গেয় ডলফিন (প্লাটানিস্টা জেনজেটিকা) মিঠাপানির নদীর প্রধান ডলফিন। যা স্হানীয়ভাবে শিশু, শুশ, হুস, হুচ্চুম, শুশুক ও ডলফিন নামে পরিচিত। এটি বর্তমানে দেশের একটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। পদ্মা- ব্রহ্মপুত্র- মেঘনা এবং সাঙ্গু- কর্ণফুলী-হালদা ও অন্যান্য কিছু নদীতে পাওয়া যায়। এই ডলফিনকে প্রতি ৩০ থেকে ১২০ সেকেন্ডের মধ্যে একবার শ্বাস নেওয়ার জন্য পানির উপরে উঠে আসতে হয়। ডলফিন চোখে না দেখার কারণে প্রতিধ্বনি তৈরীর মাধ্যমে চলাচল করে। সারাবিশ্বে ডলফিন মৃত্যুর ৭০% কারণ হচ্ছে কারেন্ট জাল। ডলফিন চলাচলের সময় জালের অবস্থান প্রতিধ্বনির মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারেনা (জালের সুতা শব্দ তরঙ্গ শোষণ করে) । যার কারণে সহজে জালে জড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া হালদা নদী থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত মৃত ডলফিনের গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিলনা।

হালদা নদীতে ডলফিন মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত জাল বিশেষ করে কারেন্ট জালে আটকা পড়ে ডলফিন এর মৃত্যু হচ্ছে এছাড়াও ডলফিনের খাদ্যের অভাব, দুষণ, পানির গুনাবলি পরিবর্তন,ও জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি সম্পৃক্ত।
হালদা নদীকে গাঙ্গেয় ডলফিনের বসবাস উপযোগী করতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমুহ গ্রহণ করা সময়ের দাবী।

১. নদীতে অবৈধভাবে যেকোন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
২. নদীতে অতিরিক্ত ইঞ্জিন চালিত নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে।
৩.হালদা নদী ও এর শাখা খালসমূহ কে সম্পুর্ণ দূষণমুক্ত রাখতে হবে।
৪. হালদা ও শাখা খালে বিষ দিয়ে মাছ মারা বন্ধ করতে হবে।
৫. হালদার যে স্হানে ও শাখাখালে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে, সেখান থেকে পলি অপসারণ করে হালদায় পর্ষাপ্ত পরিমানে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৬. নিয়মিত হালদা ও এর শাখাখালে পানির গুনাবলি পরীক্ষা করতে হবে।
৭. কমিউনিটি বেইজড ডলফিন ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে হবে যেখানে বনবিভাগের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
৮. ডলফিন এর পরিবেশগত গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্থানীয় জেলে ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৯. কৃষি জমিতে অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার নিরুৎসাহিত এবং জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।
১০. ডলফিন ডাটাবেজ তৈরি করে নিয়মিত ডলফিনের সংখ্যা ও আবাসস্থল মনিটরিং করতে হবে।
১১. ডলফিন সংরক্ষণে আলাদা বিশেষজ্ঞ মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে
১২. বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ -(ডলফিন ও তিমি আইন) -৩৭ তম ধারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর