আজ ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যুদ্ধ দিনের স্মৃতি আজও মনে পড়ে


  • বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমদ

 

বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরীর নেতৃত্বে আমাদের যুদ্ধের কার্যক্রম শুরু করি বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে অধ্যক্ষ শান্তিময় খাস্তগীর স্যার এর পরামর্শে সেদিন অগ্রসর হই, সাথে প্রফেসর ফয়েজ, আবুল হোসেন, আহমদ হোসেন, মহসিন খান, কবি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সহ অনেকে।

৬৯ এর গন অভূথানে কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজে অধ্যয়নকালীন ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করি।পরবর্তীতে ধারাবাহিক আন্দোলন সমূহে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করি। মুক্তিযুদ্ধকালীন নানাবেসে চট্টগ্রাম থেকে সুদূর ভারতের দেমাগ্রী ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রতিকূল পরিবেশে অর্ধাহারে অনাহারে দেশমাতৃকার জন্য এমনকি ভিক্ষুকের বেশে পাড়ি জমাতে হয় আমাকে। একাধিকবার চট্টগ্রামের আইস ফেক্টরী রোড,দোস্ত বিল্ডিং এলাকায় অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হই,সরকারি সনদ না পেলেও অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য স্মৃতির পাতায় অমলিন থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। যেমন আমার আপন সম্মন্ধী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এখলাছুর রহমান চিরস্মরণীয় বীরোচিত আত্বদানকারী এখনো মুক্তি কামী জনতার মনে দাগ কাটে।

আমার জন্ম ১৯৪৭ সালের ৭ আগষ্ট পটিয়া উপজেলার কোলাগাও ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড নলান্ধা গ্রামে।পিতা মৃত এজাহার মিয়া,মাতা মৃত জয়নাব খাতুন, ১৯৬৫ সালে চরকানাই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাশ করি,১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে এইস এস সি, ১৯৬৯ সালে স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে বি কম,ও স্বাধীনতা উত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টার্স ডিগ্রিতে অধ্যয়ন করি।

১৯৭৩ সালে সারোয়াতলী স্কুলে শিক্ষকতা করি।৭১ এর এপ্রিলে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী, শেখ মোজাফফর আহমদ, ইউনুচ সহ ৪০/৫০ জন বান্দর বান থেকে পাহাড়ি পথে কাপ্তাই সড়কের পদূয়া হয়ে দোভাষী বাজারে উপস্থিত হই। দিলীপ স্যারের গাড়ি ছিল সবার আগে জীপ রওনা হয় ইন্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্দেশ্যে। ইমাম গাজ্জালী কলেজ পেরুবার পরই গুলির আওয়াজ শুনি। আমার গাড়ি কিছু দুরে থাকার কারণে প্রানে বেঁচে গেলেও স্যার সহ কয়েকজন শহীদ হন।কয়েক দিন পর পটিয়ার পূর্ব পাহাড়ে খুরুশিয়ার বাঘাইয়া চাকমার খামার বাড়িতে লাঠি আলম,হাবিলদার ইসহাকের অধীনে অস্ত্র চালনা ও গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং নিই। পরে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য মিজোরামের দেমাগ্রী ক্যাম্পে যোগ দিই।সাথে এ এফ এম তোজাম্মেল হোসেন, নূরুল ইসলাম সহ অনেকে।

৭৫ এর পর দীর্ঘ ৩৫ বছর জীবিকার তাগিদে প্রবাসে ছিলাম।আমি পটিয়া ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলাম হামিদ, মহসিন খান সহ অনেক সাথী ছিল। বার্ধক্যজনিত কারণে অনেক কথা মনে করতে পারছি না। বর্তমানে নিজ বাড়িতে জীবনের শেষ সময় অসুস্থতায় অতিক্রম করছি। যুদ্ধে এবং পরবর্তী সময়ে অনেক সহযোগীকে হারিয়ছি, চৌধুরী হারুন রশীদ এমপি, আবুল হোসেন, শেখ মোজাফফর, উপ পুলিশ কমিশনার কবি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মহসিন খান সহ নাম না জানা অনেক বন্ধু,সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে স্মারক নং ০৫.৪২.১৫০০.২০২.০০১.২৩ (অংশ -৩) ৩৮৩ মূলে ২৩/৩/২০২৩ ইং গেজেটভূক্তির জন্য পএ প্রেরন করা হয়েছে।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমদ
পটিয়া, চট্টগ্রাম।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর