
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে। এক সময়ের প্রভাবশালী তিন বিএনপি নেতার উত্তরাধিকারীরা এবার পাচ্ছেন ধানের শীষের টিকিট। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে চট্টগ্রামের তিনটি আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিন রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরি।
মীর হেলাল পেলেন চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে টিকিট
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) **মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন**। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র **মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে**।
অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো মীর নাছিরের উত্তরসূরি হিসেবে হেলাল বর্তমানে এলাকায় সক্রিয় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে তিনি তরুণ নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
হাটহাজারী আসনটি রাজনৈতিকভাবে সবসময়ই আলোচনায় থাকে—কারণ এখানেই অবস্থিত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এ আসনের মনোনয়ন দৌড়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার নামও আলোচনায় ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তাকে টিকিট দেয়া হয়নি।
রাঙ্গুনিয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উত্তরসূরি
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী**, দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে।
এক সময় গুমের শিকার হওয়া হুম্মাম এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে সক্রিয় রাজনীতি করছেন। স্থানীয়ভাবে তিনিও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। এ আসনের মনোনয়ন দৌড়ে অধ্যাপক **কুতুব উদ্দিন বাহার**ও ছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত তাকে টিকিট দেওয়া হয়নি।
বাঁশখালীতে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন **মিসকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা**, প্রয়াত পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী **জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে**।
বর্তমানে তিনি বিএনপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিটের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
আরও যে আসনগুলো নিয়ে জল্পনা
তবে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী–বাকলিয়া) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনের প্রার্থী এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী–হালিশহর–পাহাড়তলী) আসনে প্রার্থী হয়েছেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একই আসনের জন্য বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তবে দল তাকে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছে—যে আসন থেকে তার বাবা একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে আমির খসরুর ছেলে ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরীও চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এক পরিবারে একাধিক প্রার্থী না দেওয়ার বিএনপির নীতি অনুসারে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, **চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান**কে চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বিএনপি এবার তরুণ নেতৃত্বের পাশাপাশি পারিবারিক ঐতিহ্যকেও গুরুত্ব দিয়েছে। তিন প্রভাবশালী নেতার উত্তরাধিকারীরা ধানের শীষ হাতে মাঠে নামতে যাচ্ছেন—যা আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ভারসাম্যে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
চাটগাঁর সংবাদ/ চট্টগ্রাম প্রতিদিন/ চট্টগ্রামের খবর
