নিউজ ডেস্ক: বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বাতিল করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

বেঞ্চের অন্য পাঁচজন হলেন, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, মুফতি হান্নানসহ ১২ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বপ্রণোদিত ছিল না। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

আদালতে তারেক রহমান-বাবরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস,অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল, আজমল হোসেন খোকন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ।

এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ১৯ মার্চ এ মামলায় সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। দীর্ঘদিন শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য ছিল। আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। নিহত হন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মী।

ভয়াবহ এ হামলার তদন্তে নামে বিএনপি–জামায়াত জোট সরকার। হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে অভিযুক্ত হন ২৮ জন। অভিযোগপত্র দেয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শুরু হয় বিচার।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ নতুন করে তদন্ত শুরু করে। টানা ৪১০ দিন টিএফআই সেলে নিয়ে পুনরায় স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় মুফতি হান্নানের। সম্পূরক চার্জশিটে যুক্ত করা হয় তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ আরও অনেককে।

আলোচিত এ মামলায় ২০১৮ সালে বিচারিক আদালত ফাঁসির দণ্ড দেন বাবরসহ ১৯ জনকে। যাবজ্জীবন হয় তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনের। কিন্তু ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর ওই রায় বাতিল করে দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, সম্পূরক চার্জশিট এবং বিচারের পুরো প্রক্রিয়াই ছিল বেআইনি।

বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি হলো। মুক্তি মিলেছে তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সবার।